উদ্যোক্তা (Entrepreneur):
উদ্যোক্তা হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি এমন পণ্য বা সেবা তৈরি করেন যে বিষয়ে আগে কেউ কখনো ভাবেনি। পুরানো কোনো ব্যবসাও নতুন আঙ্গিকে শুরু করাকেও মাঝে মাঝে ব্যবসায়িক উদ্যোগের মধ্যে ধরা হয় কিন্তু আসলে নতুন কোনো পণ্য বা সেবাকেই মূলত উদ্যোগ বলে। আর যারা এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করে প্রকৃত পক্ষে তাদের কে উদ্যোক্তা বলে। একজন সত্যিকারের উদ্যোক্তা যে কোনো পরিস্থিতির ভেতর থেকে ‘সুযোগ’কে নির্বাচন করতে পারেন। অন্যরা যেটাকে সমস্যা, বাধা ভেবে এড়িয়ে যান, উদ্যোক্তা সেটিকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসেন।
একজন উদ্যোক্তা সাধারণত বাজারের নেতৃত্ব দেন। অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাদেরকে উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদ্যোক্তারা সাধারণত তাদের সৃজনশীল পদ্ধতিগুলোর জন্য পরিচিত হয়ে থাকেন।উদ্যোক্তা কীভাবে সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করেন, তার একটি উদাহরণ হচ্ছেন লিন্ডা প্যাগন নামের একজন নারী। তিনি মূলত নিউইয়র্ক সিটিতে মেয়েদের টুপি বিক্রি করেন। টুপিগুলো সাইজে অনেক বড়।
এই টুপি নিয়ে তিনি প্রথম বিপাকে পড়েন। কারণ কোনো বক্সে এগুলো রাখা যেত না। অন্যদিকে ক্রেতারা বক্স ছাড়া টুপিও কিনতে চান না। বাধ্য হয়ে যারা বক্স তৈরি করেন, তাদের সঙ্গে লিন্ডা যোগাযোগ করেন। বক্স তৈরির কারিগররা জানান, তারা যে যন্ত্র দিয়ে বক্স তৈরি করেন, সেই যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে। এত বড় বক্স এখন তৈরি করা অসম্ভব। লিন্ডা তবু থেমে থাকেননি। তিনি পাল্টা একটি প্রস্তাব দেন। বলেন, যন্ত্র সারাতে যত টাকা লাগে তিনি দেবেন! লিন্ডার এমন প্রস্তাবেও ওই ব্যক্তি তার যন্ত্র ঠিক করতে রাজি হননি।
কয়েক মাস বাদে লিন্ডা অবাক হয়ে দেখেন তার দোকানে ওই কোম্পানি থেকে বড় সাইজের বক্স চলে এসেছে। পরে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, মালিক নিজের খরচে যন্ত্রটি ঠিক করে বড় বক্স তৈরি শুরু করেন। এর ফলে তিনি ব্যাপক লাভবান হন।পরে ভেবে দেখেন, এর জন্য লিন্ডার কাছে যন্ত্র সারানোর টাকা চাওয়া অনুচিত। কারণ তার পরামর্শ মেনে যন্ত্র ঠিক করেই তিনি এখন লাভবান। তাই কৃতজ্ঞতা জানাতে তার টুপির দোকানে বক্স পাঠিয়ে দিয়েছেন।এখানে লিন্ডা হচ্ছেন সত্যিকারের উদ্যোক্তা।
ব্যবসায়ী (Businessman):
একজন ব্যবসায়ী পুরুষ বা ব্যবসায়ী মহিলা বা ব্যবসায়ী ব্যক্তি হল এমন ব্যক্তি যে ব্যবসায়িক খাতে জড়িত থেকে বিশেষত মানবসম্পদ, নগদ তহবিল, মেধা এবং শারীরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক বা শিল্পখাতে উৎপাদন, নগদ প্রবাহ বা বিক্রয় সৃষ্টির মাধ্যমে আয়/উপার্জন করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
একজন ব্যবসায়ী পুরনো কোনো ধারণা প্রয়োগ করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। তাই তিনি যে ধরনের বাজারে প্রবেশ করেন, সেটি আগে থেকেই বিদ্যমান, যেমন: ফ্র্যাঞ্চাইজি অথবা খুচরা বাজার। তার প্রধান লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। তাই ব্যবসাটির মৌলিকত্ব নিয়ে তার চিন্তা করতে হয় না। ব্যবসায়ীর ব্যবসা করার উদ্দেশ্যটি ভিন্ন। তার লক্ষ্য হচ্ছে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। নতুন ধরনের কৌশল প্রয়োগ করার মনোভাব তিনি দেখান না। কারণ, নতুন কৌশলে ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি।
তিনি সাধারণত প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিগুলো নিয়েই ভেবে থাকেন এবং সেগুলো অনুসরণ করেন। এভাবে তার ব্যবসাটি সফল হয়ে উঠে। তার প্রধান লক্ষ্য থাকে, তার ব্যবসাটি যেন দ্রুত শক্তিশালী হয় ও বেড়ে উঠে। এই উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী তার কোম্পানিতে বিভিন্নরকম পণ্য পরিচিত করাতে পারেন। যেমন: ইউনিলিভার প্রতিনিয়ত সারা পৃথিবী থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড কিনে নিয়ে তা নিজেদের পণ্য হিসেবে বিক্রি করছে।
উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্যঃ
উদ্যোক্তা হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি এমন পণ্য বা সেবা তৈরি করেন যে বিষয়ে আগে কেউ কখনো ভাবেনি। উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। একজন ব্যবসায়ী সুনির্দিষ্ট এবং প্রতিষ্ঠিত কোনো আইডিয়া অনুসরণ করে তার ব্যবসা শুরু করেন। বেশিরভাগ সময়েই তিনি এমন পণ্য বা সেবার ব্যবসা করেন বাজারে যার প্রচুর চাহিদা রয়েছে, ফলে তার ব্যবসাতে ঝুঁকি কম হয় এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ মুনাফা তার লক্ষ্য হয়ে থাকে। তবে, প্রতিষ্ঠিত আইডিয়া হওয়ায় এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।
অন্যদিকে, একজন উদ্যোক্তা স্বতন্ত্র, নতুন কোনো আইডিয়া প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে তার ব্যবসা শুরু করেন। এই নতুন ধরনের আইডিয়াই প্রধানত ব্যবসায়ীর সাথে তার পার্থক্য তৈরি করে দেয়। নতুন ও অপরীক্ষিত আইডিয়া হওয়ার কারণে তার ঝুঁকি থাকে প্রচণ্ড, সেগুলো সামাল দিতে হলে তাকে প্রতিনিয়ত সৃজনশীল কৌশল প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তিনি একটি নতুন ধরনের বাজার তৈরি করে ফেলেন যা মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে আসে।
২। একজন ব্যবসায়ী পুরনো কোনো ধারণা প্রয়োগ করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। তাই তিনি যে ধরনের বাজারে প্রবেশ করেন, সেটি আগে থেকেই বিদ্যমান, যেমন: ফ্র্যাঞ্চাইজি অথবা খুচরা বাজার। অন্যদিকে, একজন উদ্যোক্তা তার পণ্য ও বাজারের প্রথম উদ্ভাবক। তাকে সেই বাজারটি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। এর পেছনে তাকে পর্যাপ্ত সময়, শক্তি এবং অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় কিন্তু তারপরেও বিশালরকমের ঝুঁকি থেকে যায়।
৩। উদ্যোক্তা তার সমস্ত উদ্যম ব্যয় করে তার উদ্যোগটিকে সফল করার জন্যে। নিজের সময় এবং অর্থের ঝুঁকি তার ভাবনায় তুলনামূলক কম আসে। তার প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে, পৃথিবীতে তার আইডিয়াটি প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীর ব্যবসা করার উদ্দেশ্যটি ভিন্ন। তার লক্ষ্য হচ্ছে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। নতুন ধরনের কৌশল প্রয়োগ করার মনোভাব তিনি দেখান না। কারণ, নতুন কৌশলে ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। তিনি সাধারণত প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিগুলো নিয়েই ভেবে থাকেন এবং সেগুলো অনুসরণ করেন।
৪। উদ্যোক্তাদের সম্পূর্ণ উদ্যোগটিই একটি বিশাল ঝুঁকি। বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করেন তার চিন্তাটি প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। কারণ তারা বিশ্বাস করেন তাদের চিন্তা অনুযায়ী পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে পারবেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়ী ঝুঁকির পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখতে চান। সময় ব্যয় করতে তাদের বাঁধা নেই কিন্তু ঝুঁকি ব্যাপারটি তাদের তালিকায় থাকে না। তাই ব্যর্থ হলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার মানসিকতা রাখেন এবং নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করেন।
৫। উদ্যোক্তা জানেন না, তার পণ্য বা সেবাটি সাধারণ মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে। তিনি যেভাবে ভেবেছেন সাধারণ মানুষের সাথে যদি তা না মিলে, তাহলে বাজারে তার পণ্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা যাবে না। সাধারণ মানুষের জীবনে তাই তার উদ্যোগের একটি প্রভাব থাকতে হবে। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীর একটি পরিষ্কার লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো গেলে তিনি নিজেকে সফল বলতে পারেন। তবে এই লক্ষ্যটি একেবারে নতুন নয় এবং এই ধরনের লক্ষ্যে তিনিই প্রথম হাঁটছেন তা বলা যাবে না। বরং, অন্য কারো সাফল্য দেখেই তিনি এই পথে এসেছেন।