হিসাববিজ্ঞান ধারণা (Accounting Assumption) :
হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কতকগুলো মৌলিক ধারণা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যথা:
১. স্বত্বামূলক ধারণা তত্ত¡ অনুযায়ি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে মালিককে ভিন্ন অনুমান করা হয়। যার ফলাফল হলো মালিক ও কারবার দুটি পৃথক স্বত্বার অধিকারি। এ ধারণা মতে মালিক ও কারবারের হিসাবকে পৃথকভাবে রাখতে হয়।
২. চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা অনুযায়ী কতিপয় স্বল্পমেয়াদী প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত সচল থাকবে। এ নীতির কারণেই আয় ও ব্যয়কে মূলধন ও মুনাফাজাতীয় ব্যয়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এ ধারণার উপর ভিত্তি করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। স্থায়ী সম্পদের ক্ষেত্রে তার আয়ুষ্কাল পর্যন্ত অবচয় ধরতে হয় এবং আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তিগুলো হতে অবচয় বাদ দিয়ে দেখানো হয়।
৩. হিসাবকাল ধারণা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চলতে থাকবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জীবন শেষ হলেই হিসাব নিকাশ করা হবে এটা কাম্য নয়। কেননা কারবারের সাথে জড়িত পক্ষসমূহ নির্দিষ্ট সময় পরপর তাদের ব্যবসায়ের লাভক্ষতি ও আর্থিক অবস্থা জানতে চায়। হিসাবরক্ষকগণ কারবারের যাবতীয় কার্যকালকে বিজ্ঞচিতভাবে কয়েকটি সমান সময়ের এককে ভাগ করে থাকেন, যাকে হিসাবকাল ধারণা বলা হয়।
৪. আর্থিক একক ধারণা অনুযায়ী শুধুমাত্র অর্থের অংকে নিরূপণযোগ্য লেনদেনগুলোকে একমাত্র হিসাবের বইতে লেখা হবে। যখনই কোনো লেনদেন হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হবে উহা সর্বদাই অর্থের অংকে নিরূপণ করে নিতে হবে।
হিসাববিজ্ঞান প্রথা (Accounting convention) :
হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য যে সকল প্রচলিত রীতি ও আচরণবিধি মেনে চলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আর্থিক বিবরণী ও এর তথ্যসমূহ সঠিক, সহজ, সাবলীল ও অর্থবহভাবে আগ্রহী পক্ষসমূহের নিকট উপস্থাপন করা হয় তাই হিসাব সংক্রান্ত প্রথা। যথা: রক্ষণশীলতা হিসাববিজ্ঞানের একটি রক্ষণাত্মক নীতি যা প্রতিটি মানুষের সাধারণ চেতনার মতো কাজ করে। এর প্রকৃত অর্থ হলো এই যে, যেখানে অনিশ্চয়তা বিরাজমান সেখানে নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লাভের চেয়ে লোকসানের বিষয়ে অধিক সচেতন হওয়াকে হিসাবশাস্ত্রে রক্ষণশীলতা বলে।
সামঞ্জস্য প্রথা অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠানে সঠিক হিসাব নিকাশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োগকৃত নিয়ম ও রীতিনীতি ক্রমান্বয়ে অনুসরণ করা। অর্থাৎ হিসাব রক্ষণাবেক্ষণে একবার যে নীতি বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রতিটি হিসাবকালে ব্যবহার করতে হয়।
হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে এ নীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হিসাব লিখনের সময় ব্যবসা সংক্রান্ত কোন তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ তা বিচার করেই হিসাব লিপিবদ্ধ করতে হয়।
কোনো কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালার বাইরে গিয়েও তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। যেমনব্যাংক, বীমা কোম্পানি, পোল্ট্রি ফার্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।
হিসাববিজ্ঞান কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে কি কি তথ্য প্রদান করবে বা কি কি তথ্য সংরক্ষণ ও তৈরি করবে তা নির্ভর করে তথ্য তৈরি ও সংরক্ষণ করতে যে খরচ হয় উহার সাথে উক্ত তথ্য হতে প্রাপ্ত সুবিধার সম্পর্কের উপর। যদি তথ্য সংরক্ষণ ও তৈরির খরচের তুলনায় উক্ত তথ্য হতে প্রাপ্ত সুবিধা বেশি হয় তবেই হিসাববিজ্ঞানে ঐ সমস্ত তথ্য তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের ধারণা ও প্রথার মধ্যে পার্থক্য
হিসাববিজ্ঞানের ধারণা ও প্রথার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা সহজ কাজ নয়। তারপরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য নিম্নে দেখানো হয়েছে-
১. হিসাববিজ্ঞানের ধারণা হলো কতগুলো সর্বজন স্বীকৃত ও আন্তর্জাতিক ভাবে গৃহীত নিয়মকানুন ও ব্যবহার প্রণালী, যা দ্বারা হিসাববিজ্ঞান পেশা পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে, হিসাববিজ্ঞান প্রথা হলো দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা যার উপর ভিত্তি করে হিসাববিজ্ঞানের কার্যবলী সম্পাদন করা হয়।
২. হিসাববিজ্ঞানের ধারণা হলো আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। অন্যদিকে, হিসাববিজ্ঞানের প্রথা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নয়।
৩. হিসাববিজ্ঞানের ধারণার উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক হিসাব মান তৈরী করা হয়। অন্যদিকে, হিসাববিজ্ঞানের প্রথা আন্তর্জাতিক হিসাব মান তৈরীতে এটি বিবেচনা করা হয় না।
৪. হিসাব সংক্রান্ত ধারণা সব দেশেই একইভাবে অনুসরণ করে। অন্যদিকে, হিসাব সংক্রান্ত প্রথা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
৫. হিসাব সংক্রান্ত কাজকে বহুল গ্রাহ্য নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ধারণা প্রণীত। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাগুলোর আলোকে প্রথা প্রণয়ন করে থাকে।
৬. হিসাববিজ্ঞানে ধারণার প্রয়োগ-বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে, হিসাববিজ্ঞানে প্রথার প্রয়োগ-বাধ্যবাধকতা নেই।
৭. হিসাববিজ্ঞানের ধারণার ব্যাখ্যা সকল দেশে একই রকম। অন্যদিকে, হিসাববিজ্ঞানের প্রথার ব্যাখ্যা সকল দেশে একই রকম নয়।