বচন ও বচনাকার এর মধ্যে পার্থক্য

বচনঃ
মনের ভাবকে যখন ভাষার মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়, তখন তাকে বলে বাক্য। এই বাক্যকে যখন তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকারে উপস্থাপিত করা হয় তখন তাকেই বলা হয় বচন। যেমন- মানুষ মরণশীল – এটি হল একটি বাক্য কিন্তু এর তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ হিসেবে যে বচনের কথা বলা হয়, তা হল সকল মানুষ হয় মরণশীল। এই বচনই হল তর্কবিজ্ঞানের মূলভিত্তি। কারণ, তর্কবিজ্ঞানের মূল আলােচ্য বিষয় হল যুক্তি। আর এই যুক্তি গঠিত হয় বচন দিয়ে।

অর্থাৎ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ যে ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করছে বা বোঝাচ্ছে, সেই ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যা, অর্থাৎ সেটি এক সংখ্যক না একাধিক সংখ্যাক, তা বোঝানোর পদ্ধতিকেই বচন বলে।

বচনাকারঃ
তর্কবিদ্যায় বচনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলেও, আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বচনের আকারের ওপর। বচনের আকার হল বচনের একটি নির্দিষ্ট আকারের কাঠামাে যার দ্বারা বচনটিকে একটি নির্দিষ্ট আকারে প্রকাশ করা হয়। বচনের এই আকারের একটি নির্দিষ্টতা ও সার্বজনীনতা আছে। সে কারণেই বচনের আকারের সত্যমূল্যের ক্ষেত্রে আমাদের একপ্রকার নিশ্চয়তা থেকে যায়। বচনগুলির বক্তব্য-বিষয়ের পরিবর্তন হলেও তার আকারের কোনাে পরিবর্তন হয় না। যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল- এই বচনটির উদ্দেশ্য ও বিধেয় পরিবর্তিত হয়ে অন্য একটি বচনে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ, সকল মানুষ হয় মরণশীল না বলে, আমরা এটাও বলতে পারি যে, সকল কবি হয় দার্শনিক। কিন্তু এদের আকারটি হল সকল s হয় P এর কোনাে পরিবর্তন নেই।

বচন ও বচনাকার এর মধ্যে পার্থক্যঃ
বচনাকার কোন বচন নয়, সেজন্য তা সত্যও নয়, মিথ্যাও নয়। বচন ও বচনাকার এর মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। এই বাক্যকে যখন তর্কবিজ্ঞানসম্মত আকারে উপস্থাপিত করা হয় তখন তাকেই বলা হয় বচন। অন্যদিকে, বচনের আকার হল বচনের একটি নির্দিষ্ট আকারের কাঠামাে যার দ্বারা বচনটিকে একটি নির্দিষ্ট আকারে প্রকাশ করা হয় তাই হলো বচনাকার।

২। মানুষ মরণশীল – এটি হল একটি বাক্য কিন্তু এর তর্কবিজ্ঞানসম্মত রূপ হিসেবে যে বচনের কথা বলা হয়, তা হল সকল মানুষ হয় মরণশীল। অন্যদিকে, বচনাকারে বচনগুলির বক্তব্য-বিষয়ের পরিবর্তন হলেও তার আকারের কোনাে পরিবর্তন হয় না। যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

৩। বচনাকার কোন বচন নয়, সেজন্য তা সত্যও নয়, মিথ্যাও নয়। বচনাকারের অন্তর্গত বচন বর্ণের জায়গায় কোন বচন সংস্থাপন করা হলেই একটি বচন পাওয়া যায়।

৪। বচন ও বচনাকারের পার্থক্যের জন্য আমরা এখানে ইংরেজি বর্ণমালার p থেকে শুরু করে পরবর্তী ছোট হাতের বর্ণগুলোকে ‘বচনাকার’ রূপে প্রকাশ করার জন্য এবং বড় বর্ণগুলোকে বচন প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করবো। যেমন pvq দিয়ে আমরা বুঝবো বৈকল্পিক বচনাকার, কিন্তু PvQ দিয়ে বুঝবো একটি বৈকল্পিক বচন। তেমনিভাবে, PᑐQ, P. Q ইত্যাদি এক একটি যৌগিক বচন।

৫। বচনাকার কোন বচন নয়, সেজন্য তা সত্যও নয়, মিথ্যাও নয়। বচনাকারের অন্তর্গত বচন বর্ণের জায়গায় কোন বচন সংস্থাপন করা হলেই একটি বচন পাওয়া যায়।