এইরি তত্ত্ব (Theory of Airy):
স্যার জর্জ এইরি 1855 খ্রিষ্টাব্দে তার সমস্থিতি তথ্যটি উপস্থাপন করেন। এইরির তত্ত্বটি পদার্থের ভাসমানতা তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। স্যার জর্জ এইরি তার এই তত্বটিতে বলেন হিমশৈল যেমন পানিতে ভেসে থাকে,তেমন মহাদেশীয় ভূখণ্ড অর্থাৎ সিয়াল মহাসাগরীয় ভূত্বক এর ওপর অর্থাৎ সীমার ওপর ভেসে রয়েছে। সীমার ঘনত্ব 2.87 গ্রাম/ঘন সেমি এবং সিয়ালের ঘনত্ব 2.65 গ্রাম/ঘন সেমি। সুতরাং অধিক ঘনত্বের সীমা স্তরের মধ্যে পর্বত,মালভূমি,সমভূমি প্রভৃতি মহাদেশীয় ভূত্বকের বিভিন্ন অংশ ও তাদের উচ্চতা ও গভীরতা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। যে মহাদেশীয় অংশের উচ্চতা বেশি তার root অর্থাৎ গভীরতাও বেশি।
এই তত্ত্বের সমর্থনে একই ঘনত্ব যুক্ত বিভিন্ন উচ্চতাবিশিষ্ট কতগুলি কাঠের খন্ড একটি পানি পূর্ণ পাত্রে তিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন কাঠের খন্ডগুলি স্বতন্ত্র ভাবে পানির উপরে ভাসছে। পানির উপর ভাসমান খণ্ডগুলির উচ্চতা এক নয়। পানির উপরে যে কাঠের খন্ডগুলির উচ্চতা বেশি সেগুলির পানিতে নিমজ্জনের গভীরতাও বেশি(1:10)। পানির উপরে কাঠের যে খন্ডগুলির উচ্চতা কম তার নিমজ্জনের গভীরতা কম। বিভিন্ন উচ্চতাবিশিষ্ট সমঘনত্বযুক্ত কাঠের খন্ডগুলির এইরূপ ভাসমান অবস্থাকে Hydrostatic Equillibium বলা হয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন উচ্চতা বিশিষ্ট কয়েকটি তামারখণ্ড একটি পারদপূর্ণ পাত্রে ভাসিয়ে দেন এক্ষেত্রেও তিনি অনুরূপ চিত্র লক্ষ্য করেন।
প্রাটের তত্ত্ব (Theory of Pratt):
1859 সালে গণিতজ্ঞ বিজ্ঞানী J.H. PRATT সমস্থিতি সম্পর্কে একটি আলাদা তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। তার তত্ত্বটি ভূত্বকীয় খন্ডগুলির ঘনত্বের পার্থক্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। Pratt এর ধারণাটি বিষম ঘনত্ব ও সমগভীরতাকে নির্দেশ করে। তিনি বলেন,ভূত্বকীয় খন্ডগুলির ভর তাদের ব্যাসের সমানুপাতিক এবং এদের ঘনত্ব বিভিন্ন। তাই অসমান ঘনত্ব বিশিষ্ট হলেও সমান ওজনের জন্য একই চাপ প্রয়োগ করে। ভূমিরূপের উচ্চতা ও তার ঘনত্বের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক আছে। উঁচু ভূমিরূপের ঘনত্ব কম আর নিচু ভূমিরূপের ঘনত্ব বেশি হয়।
লঘু ঘনত্ব যুক্ত মহাদেশ,পর্বত,মালভূমি এবং গুরু ঘনত্বযুক্ত মহাসাগর,সমভূমি,নিম্নভূমি ভূ-অভ্যন্তরে একটি প্রতিপূরণ তলের প্রতি একক ক্ষেত্রমানের উপর সমান চাপ প্রয়োগ করে নিজ-নিজ ঘনত্ব অনুসারে ভূপৃষ্ঠে যথাক্রমে বেশি উচ্চতায় এবং কম উচ্চতায় অবস্থান করে। Pratt পারদ পূর্ণ পাত্রে সমান ব্যাসের ও বিভিন্ন ঘনত্বের রূপা,দস্তা,পাইরাইট,অ্যান্টিমনি,নিকেল,তামা, সিসাকে ভাসিয়ে লক্ষ্য করেন। তারা একটি প্রতিপূরণ তলের ওপর সমান চাপ দিয়ে বিভিন্ন উচ্চতায় থাকে। হালকা ধাতু খন্ড গুলি বেশি উচ্চতায় এবং ভারিগুলি ঘনত্ব অনুসারে কম উচ্চতায় অবস্থান করে।
এইরি ও প্রাটের সমস্থিতি তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্যঃ
১৮৫৫ সালে স্যার জর্জ এইরি ও ১৮৫৯ সালে আর্কডিকন প্রাট সমস্থিতি মতবাদ উপস্থাপনা করেন।তাদের মতবাদের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এইরি ও প্রাটের সমস্থিতি তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য গুলি হল –
১। প্রাটের যে কোনো এক সমতলের ওপর ভূ-ত্বকের সমস্ত অংশের সামগ্রিক ভর একই থাকে। অন্যদিকে, এইরির মতে, ভূত্বকের স্তম্ভ গুলি কোনো একটি নির্দিষ্ট তলে চাপ দেয় না।
২। প্রাটের মতবাদের মূল বক্তব্য হল- Uniform depth with varying density. অন্যদিকে, এইরির মতবাদের মূল বক্তব্য হল- Uniform density with varying thick ness.
৩। প্রাটের মতবাদ Level of Compensation সম্পর্কীত। অন্যদিকে, এইরির মতবাদ Low of Floatation সম্পর্কীত।
৪। প্রাটের মতে, Level of Compensation এর নিচে ঘনত্বের বা উচ্চতার কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, এইরির মতে, Level of Compensation বলে কিছু নেই। উচ্চতার পার্থক্যে অন্তঃস্তরে গভীরতার পার্থক্য দেখা যায়।
৫। প্রাটের মতবাদ অনুসারে ভূত্বকের বিভিন্ন স্তম্ভ গুলির ঘনত্ব বিভিন্ন রকমের। যেমন- পর্বতের ঘনত্ব কম, সমভূমির ঘনত্ব বেশি। অন্যদিকে, এইরির মতবাদ অনুসারে ভূত্বকের সমস্ত অংশ গুলি সমঘণত্ব যুক্ত।
৬। প্রাটের মতে, ভূত্বকের স্তম্ভ গুলির উচ্চতার পার্থক্যে ঘনত্বের পার্থক্য হয়। অন্যদিকে, এইরির মতে, ভূত্বকের স্তম্ভ গুলির উচ্চতার পার্থক্যে ঘনত্বের কোনো পরিবর্তন হয় না।