অ্যালকেন ও অ্যালকিন হল দুটি গ্রুপ যা অ্যালকাইন গ্রুপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এঅ্যালকেন ও অ্যালকিন-এর মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে অ্যালকেন ও অ্যালকিন-এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
অ্যালকেন (Alkane) :
যে সকল অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন অণুর কার্বন শিকলে কেবলমাত্র একক বন্ধন (σ বন্ধন) বিদ্যমান এবং এদের অবশিষ্ট যোজনীগুলো হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ থাকে তাদেরকে অ্যালিফেটিক বা সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন বলে। সাধারণত কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের সাথে সোডালাইমের (NaOH.CaO) মিশ্রণকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। এখানে সোডালাইমের তীব্র ক্ষার NaOH কার্বক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের অণু থেকে CO2 কে সোডিয়াম কার্বনেট হিসেবে অপসারনের মাধ্যমে ডিকার্বক্সিলেশন ঘটিয়ে অ্যালকেন উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ায় উৎপাদনে 1টি C পরমাণুর সংখ্যায় হ্রাস ঘটে। এ বিক্রিয়া বা পদ্ধতিকে অবরোহ পদ্ধতি বলে।
অ্যালকিন (Alkene) :
যে সকল জৈব যৌগে কমপক্ষে দুটি কার্বন পরমাণু পরস্পর দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজনীগুলো হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ থাকে তাদেরকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে। অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনসমূহের কার্বন শিকলে পাশাপাশি দুইটি কার্বন পরমাণু অন্তত একটি দ্বিবন্ধন অথবা একটি ত্রিবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। একটি দ্বিবন্ধন সংবলিত মুক্ত শিকল অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে অ্যালকিন বা অলেফিনস বলে । ল্যাটিন olefinis থেকে ‘অলেফিনস্’ নামের উৎপত্তি । অলেফিন্ শব্দের অর্থ তৈল উৎপন্নকারী। এ শ্রেণীর হাইড্রোকার্বনের নিম্নতর সদস্য ক্লোরিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈল জাতীয় ডাইক্লোরাইড গঠন করে। তাই অ্যালকিন শ্রেণীকে অলেফিনস বলা হয়।
CH2 = CH2. + Cl2→CH2Cl–CH2Cl
অ্যালকেন ও অ্যালকিন-এর মধ্যে পার্থক্যঃ
১. যে সকল অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন অণুর কার্বন শিকলে কেবলমাত্র একক বন্ধন (σ বন্ধন) বিদ্যমান এবং এদের অবশিষ্ট যোজনীগুলো হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ থাকে তাদেরকে অ্যালিফেটিক বা সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন বলে।
অন্যদিকে, যে সকল জৈব যৌগে কমপক্ষে দুটি কার্বন পরমাণু পরস্পর দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজনীগুলো হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ থাকে তাদেরকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে।
২. অ্যালকেন সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন। অন্যদিকে, অ্যালকিন অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন।
৩. অ্যালকেনে কার্বন – কার্বন একক বন্ধন, অর্থাৎ শুধু সিগমা বন্ধন বিদ্যমান। অন্যদিকে, অ্যালকিনে কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন, অর্থাৎ একটি সিগমা ও একটি পাই বন্ধন বিদ্যমান।
৪. অ্যালকেনের কার্বনে sp3 সংকরায়ন বিদ্যমান। অন্যদিকে, অ্যালকিনে sp2 সংকরণ বিদ্যমান।
৫. অ্যালকেনের বিশেষ কোনো “কার্যকরী মূলক” নেই। অন্যদিকে, অ্যালকিনের বিশেষ “কার্যকরী মূলক” বিদ্যমান।
৬. অ্যালকেনের সাধারণ সংকেত CnH2n+2 বা R-H। অন্যদিকে, অ্যালকিনের সাধারণ সংকেত CnH2n ।
৭. অ্যালকেনে কার্বন-কার্বন একক বন্ধন থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে কম সক্রিয়। এজন্য অ্যালকেনকে প্যারাফিনও বলা হয়। অন্যদিকে, অ্যালকিনে কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধন থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে অ্যালকেন অপেক্ষা অধিক সক্রিয়।
৮. মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন ইত্যাদি হলো অ্যালকেন। অন্যদিকে, ইথিন, প্রোপিন, বিউটিন ইত্যাদি হলো অ্যালকিন।