অ্যাজমা (Asthma) :
যেসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, অ্যাজমা বা হাঁপানি তার মধ্যে অন্যতম। অ্যাজমা ক্ষুদ্র শ্বাসনালির সংকোচনের কারণে হয়। যাদের অ্যাজমা আছে, তাদের শ্বাসনালি স্বাভাবিকদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল। যেসব উপাদান অ্যাজমাকে ত্বরান্বিত করে, সেগুলোকে অ্যাজমা ট্রিগার বলা হয়। এই রোগের সঙ্গে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকতে পারে। সংবেদনশীল অ্যাজমা ট্রিগারের ফলে হাঁচি-কাশি হতে পারে। হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীর সংকুচিত শ্বাসনালীর মধ্যে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, যেমনটা হয় সিওপিডির ক্ষেত্রেও। তাই অনেক সময় হাঁপানি থেকে সিওপিডি আলাদা করা কঠিন হয়।
কিছু মানুষের সিওপিডি এবং অ্যাজমা দু’টোই থাকতে পারে। অ্যাজমাকে সবাই রোগ হিসেবেই জানে, যেটা কিনা বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্ক যে কারও হতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্তের সময় শ্বাসনালীগুলোতে প্রদাহ হয় এবং ভেতরটা ফুলে যায়, শ্বাসনালী সংকুচিত হয় এবং শেষ্মা-আঠালো জাতীয় কফ তৈরির কারণে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এ শ্বাস নেয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বলে নিঃশ্বাস নিতে এবং ফেলতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়।
সিওপিডি (COPD) :
ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও এমফাইসিমার সমন্বয়ে হয় সিওপিডি (Chronic Obstructive Pulmonary Disease)। ক্রনিক ব্রংকাইটিস হচ্ছে ধূমপানের ফলে ঘন ঘন শ্বাসনালির প্রদাহ। আর এমফাইসিমা হলো ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুথলির দেয়াল নষ্ট হয়ে বড় বায়ুথলি তৈরি হয়। এই বড় বায়ুথলিগুলোর সংকোচন ক্ষমতা ক্ষুদ্র বায়ুথলির তুলনায় অনেক কম। ফলে পর্যাপ্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ বাতাস বের হতে পারে না। অক্সিজেনের আদান-প্রদান ব্যাহত হয়। এই সমস্যার কারণে ফুসফুসের স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে।
ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। এটাকেই এমফাইসিমা বলে। তবে হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং সিওপিডি এক নয়। সিওপিডিতে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় এবং এই রোগ ক্রমে গুরুতর হতে থাকে। এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে অসুখের তীব্রতা কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অ্যাজমা এবং সিওপিডির মধ্যে পার্থক্যঃ
অ্যাজমা এবং সিওপিডি দুটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ যা শ্বাস নিতে কষ্ট করে। তবে, এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ-
১. অ্যাজমা হল একটি ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) প্রদাহজনিত রোগ যা শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। শ্বাসনালী হল ফুসফুসে বাতাস প্রবাহিত করে এমন নল। অ্যাজমার কারণে শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং সংকীর্ণ হয়ে যায়, যা শ্বাস নিতে কষ্ট করে।
অন্যদিকে, সিওপিডি হল একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ যা শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের ক্ষতি করে। সিওপিডির দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফাইসেমা। ব্রঙ্কাইটিস হল শ্বাসনালীর প্রদাহ, যা শ্লেষ্মা নিঃসরণ এবং শ্বাস নিতে কষ্ট করে।
২. অ্যাজমার কারণগুলি অজানা, তবে এটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির সংমিশ্রণে হতে পারে। অন্যদিকে, সিওপিডির প্রধান কারণ হল ধূমপান, তবে এটি বায়ু দূষণ, রাসায়নিকের সংস্পর্শ এবং কিছু জিনগত অবস্থার কারণেও হতে পারে।
৩. অ্যাজমা সাধারণত শৈশবকালে শুরু হয়, তবে যেকোনো বয়সে হতে পারে। অন্যদিকে, সিওপিডির সাধারণত 40 বছর বয়সের পরে শুরু হয়।
৪. অ্যাজমার উপসর্গ হল বুকের ভেতর বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করা, দীর্ঘমেয়াদি শুষ্ক কাশি প্রভৃতি শীতকালে এই উপসর্গগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
অন্যদিকে, সিওপিডির উপসর্গ হল কাশি, তীব্র শ্বাসকষ্ট, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হওয়া, কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া। সামান্য হাঁটাচলাতেই হাঁপিয়ে যাওয়া। মাঝেমধ্যে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া প্রভৃতি। শীতকালে এই উপসর্গগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
৫. অ্যাজমার করণীয় হল ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন, ইনহেলার ব্যবহার করা, পরামর্শ মেনে চলা, নিজের বসবাসের রুম, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বিছানার তোশক, বালিশ, কম্বল কড়া রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করা, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, পর্দা পরিষ্কার রাখা, নিজের অ্যাজমা ট্রিগার এড়িয়ে চলা এবং মাস্ক ব্যবহার করা প্রভৃতি।
অন্যদিকে, সিওপিডির করণীয় হল ইনহেলার নিতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে, প্রয়োজনে চেস্ট ফিজিওথেরাপি নিতে হবে, ধূমপান ত্যাগ করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।