জাটকা (Jatka):
২৩ সেমি বা ৯ ইঞ্চির নিচের আকৃতির ইলিশের বাচ্চাকে জাটকা বলে। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে পরিচিত Clupeiformes গোত্রের Tenualosa গণের সদস্য। এ মাছের দেহ বেশ চাপা ও পুরু। মাথার উপরিতল পুরু ত্বকে ঢাকা। ধাতব রূপালি রঙের শরীর সুবিন্যস্ত মাঝারি আকারের আঁশে আবৃত। দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ৬০ সেমি। বড় আকারের ইলিশের ওজন হয় প্রায় ১ কিলোগ্রাম। স্ত্রী মাছ দ্রুত বাড়ে এবং সচরাচর পুরুষ ইলিশের চেয়ে আকারে বড় হয়। ইলিশ দক্ষ সাঁতারু। এ মাছ ১-২ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়, Tenualosa. ilisha, T. toli এবং T. kelee। এর মধ্যে T. ilisha অধিক পরিমাণে সংগৃহীত হয়।
ইলিশের বিচরণক্ষেত্র ব্যাপক এবং এদের সাধারণত দেখা যায় সমুদ্র, মোহনা ও নদীতে। সমুদ্রে এরা পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভিয়েতনাম ও চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। শাতিল আরব, ইরান ও ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস, পাকিস্তানের সিন্ধু, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীসমূহ, মায়ানমারের ইরাবতী এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় বিভিন্ন নদীসহ পদ্মা, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলি নদী ইলিশের আবাসস্থল।
চাপিলা (Chapila):
চাপিলার বৈজ্ঞানিক নাম: Gonialosa. Clupeidae পরিবারের একটি গণের নাম একটি ছোট চ্যাপ্টা মাছ। চাপিলা একটি স্বাদুপানির মাছ। দেখতে অনেকটা ইলিশ মাছের মতো। এই মাছ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এ পাওয়া যায়। চাপিলা মাছ খাটো, অপেক্ষাকৃত গভীর। পার্শ্বদিক খুব চাপা। মুখ ছোট ও অবতল। তুন্ড সুস্পষ্ট। চোখ প্রশস্ত এডিপোজ পত্রযুক্ত। চাপিলা মাছগুলি তলদেশে বসবাস করে এবং অ্যাড্রিমস প্রকৃতির। বাংলাদেশে নদী ও মােহনাতে এদের দেখা যায়। এরা মূলতঃ পাঙ্কটনভূক, অসংখ্য লম্বা ফুলকা দন্তিকা থাকে যা ছাঁকন যন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
অর্থনৈতিকভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় । তবে মাঝে মাঝে মেঘনা নদীতে অন্যান্য মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবে ধরা পড়ে। এই মাছ তাদের আবাসস্থলে প্লটিনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলজ বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জাটকা ও চাপিলা মাছের মধ্যে পার্থক্যঃ
জাটকা ও চাপিলা মাছ দেখতে অনেকটা মিল থাকলেও। বৈশিষ্ট্যগত ভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে। জাটকা ও চাপিলা মাছের মধ্যে পার্থক্য
নিচে দেখানো হয়েছে-
১। ২৩ সেমি বা ৯ ইঞ্চির নিচের আকৃতির ইলিশের বাচ্চাকে জাটকা বলে। অন্যদিকে, চাপিলার Clupeidae পরিবারের একটি গণের নাম একটি ছোট চ্যাপ্টা মাছ।
২। জাটকার পিঠের ও পেটের দিক প্রায় সমভাবে উত্তল। অন্যদিকে, চাপিলার পিঠের চেয়ে পেটের দিক বেশি উত্তল ও প্রশস্থ।
৩। চাপিলার তুলনায় জাটকার দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু। অন্যদিকে, জাটকা ও চাপিলার দেহের চেয়ে সার্ডিনের দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু।
৪। জাটকার আঁইশের আকৃতি বড়, নিয়মিত সারিতে সাজানো এবং পার্শ্বরেখা বরাবর এক সারিতে আঁইশের সংখ্যা ৪০-৫০ টি। অন্যদিকে, চাপিলা মাছের আঁইশের আকৃতি অপেক্ষাকৃত ছোট, পার্শ্বরেখা বরাবর এক সারিতে আঁইশের সংখ্যা ৮০-১২০ টি।
৫। জাটকার চোখের আকৃতি ছোট, এডিপোজ লিড বিদ্যমান। অন্যদিকে, চাপিলা মাছের চোখের আকৃতি এবং এডিপোজ লিড বড় ।
৬। জাটকার মুখ টারমিনাল, ঠোট কিছুটা পুরু, চোয়াল প্রায় সমান, নিচের চোয়াল উপরের চোয়াল থেকে অপেক্ষাকৃত বড়। অন্যদিকে, চাপিলার মুখ উপরের দিকে উঠানো, ঠোট পাতলা, চোয়াল অসমান, নিচের চোয়াল উপরের চোয়াল থেকে অপেক্ষাকৃত বড়।
৭। জাটকা বা ইলিশের মোট দৈর্ঘের মধ্যে আদর্শ দৈর্ঘ্য ৮৪.২%; ফর্ক ৮৭.৮%; প্রিএনাল ৫৯.৮%; প্রিডরসাল ৩৬.১%; প্রি-পেলভিক ৩৭.৬%; প্রি-
পেকটোরাল ২২.৪%; বডি ডেপথ্ ২৭.৫%; হেড ২২.০% এবং প্রি-অরবিটাল লেনথ্ ও আই ডায়ামিটার যথাক্রমে হেডলেন্থ এর ১৬.৯ ও ১৯.২%।
অন্যদিকে, চাপিলা মাছের মোট দৈর্ঘের মধ্যে ষ্টান্ডার্ড দৈর্ঘ্য ৭৯.৭%; ফর্ক ৮৬.২%; প্রি-এনাল ৫৫.৫%; প্রিডরসাল ৩৮.০%; প্রি-পেলভিক ৩৭.৫%; প্রি-
পেকটোরাল ১৯.৬%; বডি ডেপথ্-২৭.৭%; হেড ২১.৯% এবং আই ডায়ামিটার ও প্রি-অরবিটাল লেন্থ হেডলেন্থ এর যথাক্রমে ২৮.০ ও ১৭.৬%।