সত্যতা ও বৈধতার মধ্যে পার্থক্য

আপনারা আগেই জেনেছেন যে, যুক্তিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা এবং বৈধ যুক্তির নিয়মাবলি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া। কোন সহানুমান বৈধ না অবৈধ তা নির্ভর করে বৈধতা (Validity) বলতে আমরা কি বুঝি তার ওপর। বৈধতা সম্পর্কে জানতে হলে তার আগে সত্যতা
সম্পর্কে জানা আবশ্যক এবং সত্যতা কিভাবে বৈধতা থেকে পৃথক সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক।

সত্যতার সাথে বৈধতার প্রধান পার্থক্য হলো, সততা বচন বা উক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে, বৈধতা যুক্তি বা ন্যায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন বচনের ক্ষেত্রে যখন সত্যতা কথাটি আরোপ করি তখন উক্ত বক্তব্যকে বাস্তবের সাথে অনুরূপ হওয়ারই নির্দেশ করে থাকি। যদি বক্তব্যের মাঝে বাস্তবের মিল বা অনুরূপতা থাকে তাহলে বক্তব্যটি সত্য আর অনুরূপতা না থাকলে বক্তব্যটি মিথ্যা। যেমন- যদি বলা হয, ‘২৬ মার্চ বাংলাদেগশের স্বাধীনতা দিবস’ বাংলাদেশ একটি সার্কভুক্ত দেশ, তখন এদের দ্বারা বিধৃত বক্তব্য বাস্তবের সাথে অনুরূপ বলেই আমরা জানি। তাই বচনগুলি সত্য। কিন্তু যখন বলা হয়, ‘বাংলাদেশের রাজধানী কুমিল্লা’ ‘দুধ কালো’ তখন এদের দ্বারা বিধৃত বক্তব্য বাস্তবের অনুরূপ না হওয়ায় আমরা মিথ্যা বলেই জানি।

অপরপক্ষে, কোন যুক্তির ক্ষেত্রে যখন বৈধতা কথাটি আরোপ করি তখন এর দ্বারা যুক্তিতে ব্যবহৃত বচনগুলির সত্যমান নিয়ে আমরা ভাবিনা। কেননা ন্যায়ের বৈধতা বচনের সত্য-মিথ্যার উপর নির্ভর করে না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে আমাদের বিচার্য বিষয় হবে আশ্রয় বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি বিধিসম্মত ভাবে নি:সৃত হয়েছে কিনা তা দেখা। যদি দেখা যায় সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে বিধিসম্মতভাবে নি:সৃত হয়েছে, তাহলে যুক্তিটিকে বৈধ বলি। আর যদি দেখি,
সিদ্ধান্তটি আশ্রয় বাক্য থেকে বিধিসম্মতভাবে নি:সৃত হয়নি তাহলে যুক্তিটিকে আমরা অবৈধ বলি।

যেমন-

সকল দার্শনিক হয় দেশপ্রেমিক। (আশ্রয়বাক্য)

রাসেল একজন দার্শনিক (আশ্রয়বাক্য)

রাসেল একজন দেশপ্রেমিক। (সিদ্ধান্ত)

এ সহানুমানটি বৈধ। কেননা এর সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে বিধিসম্মতভাবে নি:সৃত হয়েছে। সহানুমানে ব্যবহৃত
বচনগুলোর সত্যতা যাচাই আমাদের কাজ নয়। যেমন, রাসেল সত্যিকার অর্থে একজন দেশপ্রেমিক কিনা সেটা আমাদের
বিবেচ্য বিষয় নয়।

পক্ষান্তরে,

যদি বন্যা হয় তাহলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। (আশ্রয়বাক্য)

বন্যা হয়নি (আশ্রয়বাক্য)

দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবেনা (সত্য সিদ্ধান্ত)

এ যুক্তিটি অবৈধ। কেননা সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে বিধিসম্মতভাবে নি:সৃত হয়নি। যদিও বচনগুলো সত্য। এখানে
আমরা বচনের সত্য মিথ্যা যাচাই করি না।