অটিজম ও ডাউন সিনড্রোম উভয় ক্ষেত্রেই ভাষার বিকাশ এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটাতে পারে। তবে অটিজম ও ডাউন সিনড্রোম মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে। নিচে অটিজম ও ডাউন সিনড্রোমের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
অটিজম (Autism) :
অটিজম হলো ব্রেনের একধরনের ত্রুটি, যে ত্রুটির কারণে জন্মের পর থেকে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি হলেও মানসিক বৃদ্ধি হয় না। অর্থাৎ অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল পার্থক্য যা একজন ব্যক্তির ভাষা, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আচরণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। শিশু-কিশোরদের ডেভেলপমেন্টাল মনোবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করা মনোবিজ্ঞানী বাহার অ্যাটিস(Bahar Ates) ‘গুড অটিজম স্কুল’ সাইটে ‘অটিজম বনাম ডাউন সিনন্ড্রোম’ আর্টিক্যালে অটিজম এবং ডাউন সিনড্রোম নিয়ে স্পষ্ট একটি ব্যাখা দিয়েছেন। তাঁর মতে, অটিজম হলো একটি ডেভেলপমেন্টাল ব্যাধি যা সাধারণত তিন বছর বয়স সময়কালে নির্ণয় করা শুরু হয় এবং পরবর্তী জীবনে চলতে থাকে। এটি কাউকে পরিবেশের সঙ্গে উপযুক্ত মৌখিক এবং অ-মৌখিক সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে।
ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome) :
মানবদেহে প্রতিটি কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা থাকে ৪৬টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসমি ২১’ বলা হয়। এ অতিরিক্ত ক্রোমোজোমটির কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়। ২১তম ক্রোমোজোমের অসংগতির ফলে ডাউন সিনড্রোম দেখা দেয়। ডাউন সিনড্রোমের কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে: বুদ্ধি কম থাকা, কথা বলতে দেরি হওয়া, মাংসপেশির গঠন সঠিক হয় না, জিহ্বা বের হয়ে থাকা, মুখের আকৃতির ভিন্নতা
ডাউন সিনড্রোম সাধারণত জন্মের সময় নির্ণয় করা হয়। এ ব্যাধির কোনো প্রতিকার নেই। প্রাথমিক হস্তক্ষেপ ও থেরাপি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা বিকাশ করতে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
অটিজম ও ডাউন সিনড্রোমের মধ্যে পার্থক্য :
১. অটিজম হলো একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল পার্থক্য যা একজন ব্যক্তির ভাষা, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আচরণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। অন্যদিকে, ডাউন সিন্ড্রোম একটি ক্রোমোসোমাল অবস্থা। ডাউন সিনড্রোমের তিন প্রকার রয়েছে– ট্রাইসোমি ২১, ট্রান্সলোকেশন এবং মোজাইসিজম।
২. ম্যাসেজ থেরাপিস্ট মিশ্যাল আর ব্রিটোর(Michelle R Britto) সঙ্গে। তিনি বলেন, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) এবং ডাউন সিনড্রোমের (DS) কিছু মিল থাকলেও, দুটি এক নয়, সম্পূর্ণ আলাদা সিনড্রোম।’
৩. মানসিক বিকাশ অটিজমের সঙ্গে প্রাধান্য পায়, তাই এই শিশুদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা যায়। যদিও অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক দেখায়। অন্যদিকে, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের শারীরিক পরিবর্তন বেশি দেখা যায়।
৪. অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ব্যাধির প্রকৃতি এবং মাত্রা একটি স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য আকারে দেখায় না। অন্যদিকে, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা আরও স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
৫. অটিজম আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, নির্দেশ দেওয়া কঠিন। অন্যদিকে, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ এবং তাদের নির্দেশ দেওয়া সহজ হয়।
৬. প্রকৃতপক্ষে, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা খুব বহির্মুখী কাঠামো প্রদর্শন করে এবং অটিজম শিশুদের মধ্যে লজ্জাবোধের বিষয়টি রয়েছে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের বেশি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য থাকে, তবে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এটি সব সময় ঠিক নয়।
৬. অটিজম এবং ডাউন সিনড্রোমের মধ্যে পার্থক্য গর্ভাবস্থায় নিজেকে প্রকাশ করে। যদিও ডাউন সিনড্রোম এমন একটি ব্যাধি যা গর্ভাবস্থায় কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। তবে অটিজম হলো এমন একটি ব্যাধি, যা তিন বছর বয়সের আগে বা সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো দেখা দেয়, গর্ভাবস্থায় নয়।
৭. যদিও মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অটিজম বেশি দেখা যায়। তবে ডাউন সিনড্রোম উভয় লিঙ্গেই সমানভাবে লক্ষ্য করা যায়।