মৌলিক গবেষণা (Basic Research) এবং সামাজিক গবেষণা (Social Research) উভয়ই অনুসন্ধানের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, কিন্তু তাদের লক্ষ্য, পদ্ধতি এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে মৌলিক ও সামাজিক গবেষণার মধ্যে পার্থক্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
মৌলিক গবেষণা (Basic Research):
যে গবেষণার দ্বারা কোনো মৌলিক তত্ত্বের ও পূর্বানুমানের উন্নয়ন ও পরীক্ষা করা হয় তাই মৌলিক গবেষণা। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি এবং গবেষণার জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভিত্তির উন্নয়ন। মৌলিক গবেষণাপ্রাপ্ত এসব জ্ঞান এবং তত্ত্বের ভবিষ্যতে সামাজিক প্রায়োগিক দিক থাকবে, কিন্তু বর্তমানের সমস্যা সমাধানের কোনো প্রায়োগিক দিক নেই (ড. খুরশিদ আলম ২০০৩:৯৭)। এক কথায় বললে যে গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের চর্চা হয় এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হয় তাই মৌলিক গবেষণা
মৌলিক গবেষণার আসল উদ্দেশ্য হলো নতুন তত্ত্ব তৈরি করা কিংবা বিদ্যমান কোনো তত্ত্বের উন্নয়ন করা। যেমন: পিয়াঁজে শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ নিয়ে একটা গবেষণা করেছিলেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুরা কীভাবে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে শিখে থাকে তাই নিয়ে একটা তত্ত্ব দেওয়ার জন্য তিনি গবেষণা কাজটি পরিচালনা করেন। শিশুদের শিখনের আনুষ্ঠানিক অপারেশনাল স্তরে এসে তা তাঁদের আচরণে পরিণত হয়। শিশুরা কী শিখবে বা শিক্ষা কী হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করতে শিখে।
সামাজিক গবেষণা (Social Research):
সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাকে বোঝানো হয়। সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিষয়বস্তু মানুষ, মানুষের মন, মানুষের সমাজ, মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের অর্থনীতি, মানুষের রাজনীতি প্রভৃতি। মোট কথা মানুষ, তার আচরণ ও ক্রিয়া এবং মানুষের সমাজ-সংগঠন সামাজিক বিজ্ঞানীদের সাধারণ বিষয়বস্তু। একারণে সামাজিক গবেষণা বলতে শুধু সমাজতাত্ত্বিক গবেষণাকে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। তাছাড়া, সামাজিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি এবং পদ্ধতিতত্ত্বের যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকায় সামাজিক গবেষণা বিষয়ক আলোচনায় সাধারণত ব্যাপক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। আমরা সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার উপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিলেও এখানে সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাকেই বোঝানো হবে। বলা বাহুল্য, সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিষয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেই বুঝায়।
মৌলিক ও সামাজিক গবেষণার মধ্যে পার্থক্য
১. মৌলিক গবেষণায় নতুন তত্ত্ব সৃষ্টি এবং বিদ্যমান তত্ত্বের উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণা বাস্তবসম্মত উপায়ে যে কোনো সামাজিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে গবেষণা পরিচালিত হয়
২. মৌলিক গবেষণায় জ্ঞান সৃষ্টির উপর মূল মনোযোগ থাকে। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণার জ্ঞান প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগ থাকে।
৩. মৌলিক গবেষণা জ্ঞানের একটি শাখার বিভিন্ন মৌলিক নীতিসমূহ প্রয়োগ করে তত্ত্বটি বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণা জ্ঞানের একটি প্রায়োগিক শাখাকে বিবেচনা করে সমস্যার সমাধান করে।
৪. মৌলিক গবেষণা জ্ঞানের একটি মাত্র শাখা থেকে সমস্যাটিকে বিশ্লেষণ করে। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণা অনেক সময় একটি সমস্যা সমাধানের জন্য জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সমন্বিত হয়ে কাজ করে।
৫. মৌলিক গবেষণার ফলাফল সার্বজনীন করার পক্ষপাতী। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণা কখনও কখনও ফলাফল সার্বজনীন করার উদ্দেশ্য ছাড়াও একক কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করে।
৬. মৌলিক গবেষণায় পূর্বাভাস পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণার কোনো বিষয় বা ঘটনা কিভাবে পরিবর্তিত হয়ে তা ব্যাখ্যা করার লক্ষ্যে গবেষণা কাজ পরিচালিত হয়।
৭. মৌলিক গবেষণায় অন্যান্য চলকসমূহের পরিবর্তন হবে না ধরে নিয়েই গবেষণা করা হয়। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণা স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য চলকগুলো পরিবর্তনশীল ধরে নেওয়া হয়।
৮. মৌলিক গবেষণা জ্ঞানের নির্দিষ্ট একটা শাখার প্রযুক্তিগত ভাষা অনুসরণ করে প্রতিবেদন সংকলন করা হয়। অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণা সাধারণ ভাষা ব্যবহার করে গবেষণা প্রতিবেদন সংকলন করা হয়।