ব্যবসায় ঝুঁকি (Business Risk):
প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসায়ীক মুনাফার হ্রাস পাওয়ার যে সম্ভাবনা থাকে ব্যবসায় ঝুঁকি বলে। ব্যবসায়িক ঝুঁকি সাধারনত আয়-ব্যয়ের অনিশ্চয়তা থেকে সৃষ্টি হয়। একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন রকম পরিচালনা ব্যয়ের দরকার হয়। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচামাল ক্রয়, বিক্রয় খরচ, কর্মচারিদের বেতন, অফিস ভাড়া, বিমা খরচ ইত্যাদি। এসব পরিচালনা খরচ পরিশোধের অক্ষমতা থেকে ব্যবসায়িক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। কোনো কোম্পানির পরিচালনা ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নির্ভর করে বিক্রয় থেকে আয়ের স্থিতিশীলতা এবং পরিচালনা খরচের মিশ্রণ অর্থাৎ স্থায়ী এবং চলতি খরচের অনুপাতের উপর। বিক্রয় আয়ে যদি স্থিতিশীলতা না থাকে অর্থাৎ কোনো সময় আয় বেশি হলে আবার কোনো সময় আয় কম হলে, ব্যসায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আবার পরিচালন ব্যয়ে স্থায়ী খরচ যেমন: অফিস ভাড়া, বিমা খরচ ইত্যাদির পরিমাণ বেশি হলে ব্যবসায়িক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যদি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে অর্থাৎ কোম্পানি কোনো বহিস্থ অর্থায়ন না করে তখন মুনাফা সংক্রান্ত এই অনিশ্চয়তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলে। ব্যবসায়িক ঝুঁকির অন্যতম উৎস হলো বিক্রয়মূেল্যর পরিবর্তন, বিক্রয়ের পরিমাণ পরিবর্তন, উৎপাদনের উপকরণের মূল্য পরিবর্তন, চাহিদার পরিবর্তন, অতিরিক্ত স্থায়ী খরচের প্রবণতা ইত্যাদি।
আর্থিক ঝুঁকি (Financial Risk):
কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূলধন কাঠামোতে ঋণকৃত মূলধন ব্যবহারের ফলে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে আর্থিক ঝুঁকি বলা হয়। অর্থাৎ কোন বিনিয়োগ হতে ঋনকৃত মূলধনের সুদ এবং আসল করার মতো পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ পাওয়ার সম্ভাবনাকে আর্থিক ঝুঁকি বলা হয়। সাধারনত ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকির সৃষ্ঠি হয়। যদি কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ঋণকৃত মূলধন ব্যবহার করা না হয় তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠেিন কোন আথিক ঝুঁকি থাকে না। একদিকে ঋণকৃত মূলধন ব্যবহার করা হলে প্রতিষ্ঠানের মালিকদের যেমন আয় বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে আর্থিক দায় বৃদ্ধি পায়। যে সকল প্রতিষ্ঠানে ঋণকৃত মূলধনের পরিমাণ বেশি, সে সকল প্রতিষ্ঠানে আর্থিক ঝুঁকি ও বেশি। কারণ ঋণকৃত মূলধনের জন্য সুদ প্রদান করা বাধ্যতামূলক। আবার অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করা হলে মুনাফা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়। ঋণকৃত মূলধন ব্যবহার করা হলে সুদ এবং উক্ত ঋণকৃত অর্থ পরিশোধের দায় সৃষ্টি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যদি সোনালী ব্যাংক হতে ১০% হারে ৫০ লক্ষ টাকা ৫ বছরের জন্য ঋণ গ্রহণ করে, তাহলে প্রতিবছর ৫,০০০০০ টাকা সুদ এবং পাঁচ বছর শেষে ৫০ লক্ষ টাকা পরিশোধের দায় সৃষ্টি হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সাধারণত ঋণকৃত মূলধন বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত নগদ প্রবাহ দিয়ে ঋণকৃত মূলধনের দায় পরিশোধ করে। কোনো কারণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ না পেলে দায় পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে। দীর্ঘসময় দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ঋণ সরবরাহকারী ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠনিটি দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে আর্থিক দায় পরিশোধের ব্যর্থতা থেকে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়, তাকে আর্থিক ঝুঁকি বলে।
ব্যবসায় এবং আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পার্থক্যঃ
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ কোন প্রকল্পের প্রত্যাশিত আয় থেকে প্রকৃত আয়ের পরিবর্তনশীলতাই ঝুঁকি। ব্যবসায়ের এবং আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি দেখানো হয়েছে-
১। ব্যবসায়ের অপ্রতুল মুনাফার কারণে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল যার কারণে ফার্মটি সময়মতো ব্যয় পরিশোধ করতে সক্ষম হয় নি তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি হিসাবে পরিচিত।
অন্যদিকে, আর্থিক ঝুঁকি মূলত ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে জড়িত। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে ঋণকৃত মূলধন না থাকে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে আর্থিক ঝুঁকিও থাকবে না। অর্থাৎ ঋণ ব্যবহারের কারণেই আর্থিক ঝুঁকির সৃষ্টি।
২। ব্যবসায়ের ঝুঁকিতে অপারেশনাল এবং মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জড়িত থাকে। অন্যদিকে, আর্থিক ঝুঁকিতে কোনও সংস্থাকে কীভাবে অর্থায়ন করা হয় সে সম্পর্কিত আর্থিক সংস্থাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
৩। সুস্পষ্ট ভিত্তিক সিদ্ধান্তের ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়ের ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। অন্যদিকে, ঋণের চেয়ে ইক্যুইটির বৃহত অনুপাতে অনুদানের মিশ্রণটি পরিবর্তন করে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।
৪। ব্যবসায়ের ঝুঁকি অপারেশন থেকে আয়কে পরিবর্তন করে। অন্যদিকে, আর্থিক ঝুঁকি নিট আয়কে পরিবর্তিত করে।
৫। সুদের হার পরিবর্তিত হলে ব্যবসায়ের ঝুঁকি প্রভাবিত হয় না। অন্যদিকে, সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আর্থিক ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়, এবং হার কমে গেলে হ্রাস পায়।
৬। নেট অপারেটিং আয়ের এবং নেট নগদ প্রবাহের পার্থক্যের মাধ্যমে ব্যবসায়ের ঝুঁকিটি প্রকাশ করা যেতে পারে। অন্যদিকে, আর্থিক ঝুঁকির বিপরীতে, যা ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডারদের ফেরতের পার্থক্যের দ্বারা প্রকাশ করা যেতে পারে।
৭। সুদের এবং ট্যাক্সের আগে আয়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ঝুঁকি মূল্যায়ন করা যেতে পারে। অন্যদিকে, আর্থিক ঝুঁকিটি লিভারেজ গুণক এবং ঋণ থেকে সম্পদ অনুপাতের সাহায্যে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।