মূলধন ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য

মূলধন (Capital) :
মূলধন হতে হলে তা অবশ্যই মানুষের শ্রমের দ্বারা সৃষ্ট হতে হবে এবং ভবিষ্যৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হতে হবে। এজন্য মূলধনকে উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান বলা হয়। সুতরাং দেখা যায়, যে সকল দ্রব্যসামগ্রী মানুষের শ্রম দ্বারা উৎপাদিত এবং যা বর্তমানে ভোগের জন্য ব্যবহৃত না হয়ে অধিকতর উৎপাদনের জন্য পুনরায় উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হয় তাকেই অর্থনীতিতে ‘মূলধন’ বলে। যেমনঃ মেধা ও মনন, নগদ টাকা, আসবাবপত্র, মেশিনারিজ ইত্যাদি।

বিনিয়োগ (Investment) :
সাধারণত মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবসায় অর্থ খাটানো বা নিয়োজিত করাকেই বিনিয়োগ বলে। সাধারণ অর্থে ‘বিনিয়োগ’ বলতে অর্থলগ্নি করা বোঝায়। অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বলতে সমাজের প্রকৃত মূলধনের নিট বৃদ্ধিকে বোঝায়। অর্থাৎ মূলধন মজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি কিংবা মূলধন মজুদের অবক্ষয় পূরণের জন্য প্রতি সময় মেয়াদে যে ব্যয় প্রবাহ (flow) ঘটে, তা-ই বিনিয়োগ।

অধ্যাপক হিক্স (Hicks)-এর মতে, “Investment is the net addition to the stock of capital goods at the end of a period over that which existed at the beginning of the period.”

মূলধন ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্যঃ
মূলধনের উৎস হলো সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ এর উৎস হলো মূলধন। সঞ্চয় মূলধন গঠন করে এবং মূলধন বিনিয়োগ প্রবাহ সৃষ্টি করে। মূলধন ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে ব্যবহারযোগ্য স্থায়ী যন্ত্রপাতি বা উৎপাদিত দ্রব্যের সঞ্চয়িত মজুদকে (accumulated stock) মূলধন বলে। অন্যদিকে, কোনো নির্দিষ্ট সময় শেষে বর্তমান মজুদ মূলধনী দ্রব্যের সাথে অতিরিক্ত মূলধনী দ্রব্যের সংযোগকেই বিনিয়োগ বলা হয়।

২। মূলধন বলতে সেসব যন্ত্রপাতিকে বোঝায় যেগুলো তাৎক্ষণিক উপযোগ দান করে না, তবে ভবিষ্যতে উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়। অন্যদিকে, মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে মূলধন দ্রব্যকে উৎপাদনকার্যে নিয়োজিত করাই বিনিয়োগ।

৩। মূলধন হলো মজুদ বা স্টক ধারণা। অন্যদিকে, বিনিয়োগ হলো একটি প্রবাহ (flow) ধারণা। মূলধন নিজে কিছুই করতে পারে না যদি তাকে উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় বা বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত করা না হয়।

৪। মূলধনের উৎস হলো সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ এর উৎস হলো মূলধন। সঞ্চয় মূলধন গঠন করে এবং মূলধন বিনিয়োগ প্রবাহ সৃষ্টি করে।

৫। মূলধন ও বিনিয়োগ পরস্পরের পরিপূরক। মূলধনকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করে বিনিয়োগ। দেশে মূলধনের বৃদ্ধি দ্বারা উৎপাদনক্ষমতা এবং বিনিয়োগের দ্বারা সেই উৎপাদনক্ষমতার যাচাই করা হয়।

৬। মূলধন যখন দেশে মজুদ হিসেবে থাকে তখন উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। অন্যদিকে, বিনিয়োগ প্রবাহে চলমান থাকে, তখন উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।