নগদ ঋণ ও জমাতিরিক্ত ঋণের মধ্যে পার্থক্য

নগদ ঋণ এবং জমাতিরিক্ত ঋণ ব্যাংকিং খাতের দুটি সাধারণ ঋণ সুবিধা যা ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য ব্যবহৃত হয়। নগদ ঋণ ও জমাতিরিক্ত ঋণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নগদ ঋণ ও জমাতিরিক্ত ঋণের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ-

নগদ ঋণ (Cash Credit) :
এটি সি.সি লোন হিসেবে পরিচিত। এ ঋণের জন্য ব্যাংক জামানত নিয়ে গ্রাহকের জন্য একটি উত্তোলন সীমা নির্ধারণ করে দেয়। গ্রাহক যতবার খুশী এ হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারে এবং জমা দিতে পারে। প্রতিদিনের ব্যালেন্সের উপর দৈনন্দিন ভিত্তিতে (daily basis) সুদ চার্জ করা হয়। এ ঋণ চলতি মূলধনের চাহিদা মেটানোর জন্য দেয়া হয়। এটি দু’ধরনেরঃ প্রথম প্রকার হলো CC Pledge – এক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবসায়ীর ক্রয়কৃত মালকেই তার গোডাউনে জামানত হিসেবে রাখে। পরে গ্রাহক তার প্রয়োজন মত মালের অর্থ পরিশোধ করে মাল ছাড়িয়ে নেয়।

অন্য প্রকার হলো CC Hypothecation – -এর ক্ষেত্রে ঋণের অর্থে ক্রয়কৃত মাল গ্রাহকের দোকান বা গোডাউনে রাখার অধিকার দেয়া হয়। দোকান বা গোডাউনের স্টক কখনো ঋণকৃত অর্থমূল্যের কম রাখা যাবে না। এ মালের মালিকানা ব্যাংকের থাকে কিন্তু তত্ত্বাবধান করে গ্রাহক। গ্রাহক কিস্তিতে বা মাঝে মাঝে মূল ঋণের অংশ ও সুদ পরিশোধ করতে থাকে।

জমাতিরিক্ত ঋণ (Bank Overdraft) :
ব্যাংকে আপনার একটি হিসাব আছে। সেখান থেকে টাকা তোলার জন্য আপনার একজন গ্রাহকে একটি চেক দিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা হিসাবে নেই। ব্যাংকের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো হলে ব্যাংক চেকের টাকা দিয়ে দিবে। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে দেয়া হলো তা অতিরিক্ত টাকা হিসেবে গণ্য হবে। এটাই মূলত: জমাতিরিক্ত ঋণ। চলতি হিসাবের মালিকদেরকে জমাতিরিক্ত ঋণের সুবিধা দেয়া হয়। যখন কোন ব্যাংক চলতি হিসাবের মালিকদেরকে জরুরি অর্থের প্রয়োজনে উক্ত হিসাবে জমাতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ প্রদান করে, তখন ‘জমার অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের সুবিধা’কে জমাতিরিক্ত ঋণ বলা হয়।

ব্যাংক যখন কোন মক্কেলের আর্থিক সচ্ছলতা সম্পর্কে, লেনদেন সম্পর্কে, পর্যাপ্ত জামানত সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়, তখনই তাকে জমাতিরিক্ত ঋণ সুবিধা প্রদান করে। জমাতিরিক্ত ঋণ এক চেকে একবারে বা অল্প অল্প করে উত্তোলন করা যায়। এ ঋণের জামানত হিসেবে, শেয়ার, স্বর্ণ, সঞ্চয়পত্র, পণ্য খালাসের অর্ডার ইত্যাদি জমা নেওয়া হয়।

নগদ ঋণ ও জমাতিরিক্ত ঋণের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. নগদ ঋণ সি.সি লোন হিসেবে পরিচিত। বন্ড বা সিকিউরিটি বন্ধক রেখে ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে নগদ ঋণ বলে। গ্রাহক যতবার খুশী এ হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারে এবং জমা দিতে পারে।

অন্যদিকে, টাকা তোলার জন্য আপনার একজন গ্রাহকে একটি চেক দিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা হিসাবে নেই। ব্যাংকের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো হলে ব্যাংক চেকের টাকা দিয়ে দিবে। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে দেয়া হলো তা অতিরিক্ত টাকা হিসেবে গণ্য হবে।

২. নগদ ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ মেটানোর মেয়াদ কম থাকে। অন্যদিকে, জমাকৃত জমাতিরিক্ত ঋণে সময় বেশি দেওয়া হয়।

৩. ঋণ নগদ ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার সাধারণত কম হয়ে থাকে। অন্যদিকে, জমাতিরিক্ত দিনে ঋণের হার বেশি থাকে।

৪. নগদ ঋণের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ নেওয়া হয় তার ওপরে সুদ ধার্য করা হয়। অন্যদিকে, জমাতিরিক্ত ঋণ শুধুমাত্র পুরাতন চলতি হিসাবের মক্কেল কে তার হিসেবের মাধ্যমে এই ঋণ প্রদান করা হয়।

৫. নগদ ঋণ প্রতিদিনের ব্যালেন্সের উপর দৈনন্দিন ভিত্তিতে (daily basis) সুদ চার্জ করা হয়। এ ঋণ চলতি মূলধনের চাহিদা মেটানোর জন্য দেয়া হয়। অন্যদিকে, ব্যাংক যখন কোন মক্কেলের আর্থিক সচ্ছলতা সম্পর্কে, লেনদেন সম্পর্কে, পর্যাপ্ত জামানত সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়, তখনই তাকে জমাতিরিক্ত ঋণ সুবিধা প্রদান করে।