কারণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে যুক্তিবিদ মিল বলেন, কারণ হল সদর্থক ও নঞর্থক শর্তসমুহের সমষ্টি। এসব শর্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কার্য সংগঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং কারণ হল কতগুলো শর্তের সমষ্টি এবং শর্ত হল কারণের এক অপরিহার্য অংশ। কারণের শর্তগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা সদর্থক শর্ত ও নঞর্থক শর্ত।
যুক্তিবিদ মিলের মতে, যে সব শর্ত উপস্থিত থাকলে কার্য সংঘটিত হয়, তাদের সদর্থক শর্ত বলে। পক্ষান্তরে যে সব শর্ত অনুপস্থিত থাকলে কার্য সংঘটিত হয়, তাদের নঞর্থক শর্ত বলে।
কার্ভেথ রীড বলেন, কার্যকে নস্যাৎ না করে যে শর্তকে বাদ দেয়া যায় না তাকে সদর্থক শর্তবলে। কার্যকে নস্যাৎ না করে যে শর্তকে উপস্থাপন করা যায় না তাকে নঞর্থক শর্ত বলে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কোন কার্যকে উৎপাদন করতে হলে সদর্থক শর্তাবলীর উপস্থিতি এবং নঞর্থক শর্তগুলোর পরোক্ষ অবদান থাকে। তাই আমরা বলতে পারি, কারণের সদর্থক শর্তগুলো অনুপস্থিত থাকলে এবং নঞর্থক শর্তগুলো উপস্থিত থাকলে ঐ কারণের পক্ষে কার্য
উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তাই উভয় প্রকার শর্তই কারণের অংশ হিসেবে গণ্য।
উদাহরণ- নদীতে নৌকাডুবির ফলে একটি শিশুর মৃত্যু হল। এক্ষেত্রে মৃত্যু হচ্ছে কার্য। এর কারণ হিসেবে আমরা অনেকগুলো শর্তের সন্ধান পাই। এদের মধ্যে ঝড়ো বাতাস, তীব্র জলস্রোত, পানির ঘূর্ণিপাক, অত্যাধিক বোঝাই ইত্যাদি হচ্ছে সদর্থক শর্ত। কেননা, এদের
উপস্থিতির ফলে নৌকা ডুবিতে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। অপরপক্ষে মাঝির পারদর্শিতা, শিশুটির সাঁতার জ্ঞান, উদ্ধারকারী কোন নৌকা ইত্যাদি হচ্ছে নঞর্থক শর্ত। কেননা এগুলোর অনুপস্থিতির ফলে শিশুটির মৃত্যু সম্ভব হয়েছে। সুতরাং শিশুটির মৃত্যুর ব্যাপারে সদর্থক
শর্তগুলোর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ শর্তগুলোর পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
কারণ ও শর্তের মধ্যে পার্থক্যঃ
কারণ ও শর্তের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্যণীয়। কারণ ও শর্তের প্রকৃতি ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তাদের মধ্যে যে সব পার্থক্য নির্দেশ করা যায় সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল-
১. কারণ হল কার্য সংঘটনের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলীর সমষ্টি। অন্যদিকে, শর্ত হলো কার্য সংঘটনের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন ঘটনা।
২. একটি কার্যের কেবল একটি কারণ থাকতে পারে। অন্যদিকে, একটি কার্য সংগঠনের ক্ষেত্রে একাধিক শর্ত থাকে।
৩. কারণকে সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, শর্ত সদর্থক বা নঞর্থক হয়ে থাকে।
৪. কারণকে গুণগত ও পরিমাণগত দিক থেকে বিচার করা যায়। অন্যদিকে, শর্তকে গুণগত ও পরিমাণগত দিক থেকে বিচার করা যায় না।
৫. কারণ হল কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাবলীর সমষ্টি। অন্যদিকে, শর্ত কার্যের পরিবর্তনশীল পূর্ববর্তী ঘটনা হতে পারে।
৬. পরিমাণগত দিক থেকে কারণ কার্যের সমান। অন্যদিকে, পরিমাণগত দিক থেকে কোন একক শর্ত কার্যের সমান নয়।
৭. কারণ কার্যের অব্যাহতি ও পূর্ববর্তী ঘটনা। অন্যদিকে, শর্ত দূরবর্তী ঘটনা হতে পারে।
৮. যে কোন কারণকে শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু যে কোন শর্তকে সমগ্র কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
৯. কারণ নির্ণয়ের জন্য শর্ত অপরিহার্য। অন্যদিকে, শর্ত নির্ণয়ের জন্য কারণ অপরিহার্য নয়।
১০. কারণকে লৌকিক, বৈজ্ঞানিক ও শক্তির অনিবশ্বরতার দিক থেকে বিচার করা যায়। অন্যদিকে, শর্তকে কেবল বস্তুর অবিনশ্বরাতার দিক থেকে বিচার করা যায়।