নাগরিক (Citizens) :
শব্দগত অর্থে নগরের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়, যেমন− ঢাকার নাগরিক, লন্ডনের নাগরিক ইত্যাদি। এরূপ স্থানীয় নাগরিকত্বের পরিচয় ছাড়াও একজনের জাতীয় রাষ্ট্রের সদস্য হিসাবে পরিচয় থাকে। মূলত জাতীয় রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবেই নাগরিকের পরিচয় ঘটে। যেমন− বাংলাদেশ বা ভারতের নাগরিক। নাগরিকের সংজ্ঞা দিয়ে এরিস্টটল বলেন, “আমরা সেই ব্যক্তিকে নাগরিক বলব যাদের উক্ত রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নমূলক এবং বিচারবিষয়ক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে।” কিন্তু আধুনিককালের বড় বড় রাষ্ট্রে নাগরিকদের সরাসরি রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রীয় কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকে নাগরিকের মানদণ্ড হিসেবে বিচার করেন না। বরং তাদের মতে, “সেই ব্যক্তি নাগরিক যে কোন রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সামজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের মতে, “নাগরিকরা রাজনৈতিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সেই জনসমষ্টি যারা রাষ্ট্র গঠন করে এবং সকলে মিলে মিশে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অধিকার রক্ষার্থে সরকার গঠন করে অথবা সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে।”
বিদেশি (Foreigners) :
বিদেশীদের সাথে নাগরিকদের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে। নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে, যেখানে বিদেশিদের অধিকার ও দায়িত্ব সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, নাগরিকরা ভোট দিতে পারে, নির্বাচিত হতে পারে, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে, কিন্তু বিদেশিরা তা পারে না। স্থায়ী বাসিন্দারা হলো সেই বিদেশি যারা কোনো রাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদীভাবে বসবাস করে এবং সেই রাষ্ট্রের আইন ও নিয়ম মেনে চলে। স্থায়ী বাসিন্দাদের সাধারণত কিছু অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, যেমন কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা।
অস্থায়ী বাসিন্দারা হলো সেই বিদেশি যারা কোনো রাষ্ট্রে স্বল্পমেয়াদীভাবে বসবাস করে। অস্থায়ী বাসিন্দাদের সাধারণত স্থায়ী বাসিন্দাদের মতো অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না।অভিবাসী হলো সেই বিদেশি যারা কোনো রাষ্ট্রে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে আসেন। অভিবাসীদের সাধারণত স্থায়ী বাসিন্দাদের মতো অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
নাগরিক ও বিদেশিদের মধ্যে পার্থক্যঃ
নাগরিক ও বিদেশিদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক। নাগরিক ও বিদেশিদের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
১। নাগরিকরা সেই রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা যারা রাষ্ট্রের আইন ও নিয়ম মেনে চলার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাদের রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকত্বের অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভোটদান, নির্বাচিত হওয়া, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা ইত্যাদি।
অন্যদিকে, বিদেশিরা হলো সেই ব্যক্তি যারা অন্য কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক। তারা সেই রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারে, কিন্তু তাদের সেই রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের অধিকার নেই।
২। নাগরিক নিজ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে কিন্তু বিদেশী বসবাসকারী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদান করে না। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার একজন নাগরিক অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাস করলেও বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদান করে না। বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনে চললেও সে তার নিজ রাষ্ট্র আমেরিকার প্রতিই আনুগত্য প্রদান করে।
৩। নাগরিককে রাষ্ট্র বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আদেশ দিতে পারে। অন্যদিকে, বিদেশীকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বা যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য করতে পারে না।
৪। নাগরিক রাষ্ট্রপ্রদত্ত সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে। অন্যদিকে, বিদেশী কেবলমাত্র সামাজিক অধিকার ভোগ করে।
৫। একজন নাগরিক নিজ রাষ্ট্রে ও অন্য রাষ্ট্রে নিজ রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা লাভের অধিকারী। অন্যদিকে, এমনকি বিদেশী হিসেবেও বসবাসরত রাষ্ট্রের নিকট থেকে সে নিরাপত্তা লাভ করে।
অন্যদিকে, একজন বিদেশী বসবাসকারী রাষ্ট্রে অবস্থানকালীন সে রাষ্ট্রের নিকট থেকে নিরাপত্তা লাভ করলেও অন্যরাষ্ট্রে অবস্থানকালে বসবাসকারী রাষ্ট্র থেকে নিরাপত্তা লাভ করে না। যেমন− একজন নেপালী বাংলাদেশে বসবাসরত অবস্থায় ভারতে গিয়ে বিপদে পড়লে সে বাংলাদেশের নিকট সাহায্য চাইতে পারবে না।
৬। বিদেশীদের উপর কখনও কখনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যেমন− বিদেশীকে কোন কোন সময় থানায় নাম রেজিস্ট্রি করতে হয়, কিন্তু নাগরিকের উপর এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় না। সুতরাং নাগরিক ও বিদেশীর মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে পার্থক্য বিদ্যমান।