সিলোম (Coelom):
বহুকোষী প্রাণীর পৌষ্টিক নালি এবং দেহ প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে সিলোম বলে। অথাৎ ত্রিস্তরী প্রাণির ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের সময় যে দেহগহ্বর সৃষ্টি হয় তাকে সিলোম বলা হয়। এটি মেসোডার্মাল কোষের পেরিটোনিয়াম নামক ঝিল্লিতে আবদ্ধ থাকে। তবে দেহগহ্বর মানেই সিলোম না। মেসোডার্মালের পেরিটোনিয়াম ঝিল্লির গহ্বরই শুধু সিলোম। সিলোম একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ ফাঁপা গহ্বর। প্রাণীতে নিষেক ঘটার পরে উৎপন্ন জাইগোটটি বিভিন্ন কোষীয় বিভাজনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ক্লিভেজ, মরুলা ও ব্লাস্টুলা দশাপ্রাপ্ত হয়। ক্লিভেজ হতে উৎপন্ন কোষগুলো হলো ব্লাস্টোমিয়ার। এরপরে একসময় ব্লাস্টোমিয়ার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ব্লাস্টুলা ফাঁপা বলের আকৃতি নেয়।
এই ব্লাস্টুলার কেন্দ্রীয় গহ্বরকে ব্লাস্টোসিল বলে। ব্লাস্টুলা একসময় গ্যাস্ট্রুলায় রূপান্তরিত হয়। গ্যাস্ট্রুলার গহ্বর আর্কেন্টেরোন নামক এন্ডোডার্ম দ্বারা আবদ্ধ থাকে। গ্যাস্ট্রুলার বাইরের স্তর হচ্ছে এক্টোডার্ম আর ভেতরের স্তর হচ্ছে এন্ডোডার্ম। আর এর মাঝখানের গহ্বর হলো ব্লাস্টোসিল। ইউসিলোমেট প্রাণীর ব্লাস্টোসিলে সিলোম অবস্থান করে।
হিমোসিল (Hemocoel):
দেহপ্রাচীর ও পৌষ্টিকনালির মধ্যবর্তী রক্তপূর্ণ গহ্বরকে হিমোসিল বলে। আর্থ্র্রােপোডা পর্বের প্রাণীর দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বরকে হিমোসিল বলে।মূলত এই পর্বের প্রাণীদের দেহে প্রকৃত সিলোম বিদ্যমান যা হিমোসিল ধরনের এবং হিমোলিম্ফ নামক তরলে পূর্ণ।হিমোসিল এমন গহ্বর যা রক্ত বা হিমোলিম্ফ দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। হিমোলিম্ফে হিমোসাইট নামক রক্তকণিকা এবং প্লাজমা বা রক্তরস রয়েছে। আর্থ্রোপোডা ও মোলাস্কা পর্বের প্রাণীতে হিমোসিল থাকে।
সিলোম ও হিমোসিলের মধ্যে পার্থক্যঃ
বহুকোষী প্রাণীর পৌষ্টিক নালি এবং দেহ প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে সিলোম বলে। সিলোম ও হিমোসিলের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
১। প্রাণীর দেহপ্রাচীর ও পৌষ্টিকনালির মধ্যবর্তী সিলোমিক তরলপূর্ণ গহ্বরকে সিলোম বলে। অন্যদিকে, দেহপ্রাচীর ও পৌষ্টিকনালির মধ্যবর্তী রক্তপূর্ণ গহ্বরকে হিমোসিল বলে।
২। সিলোম দেহের কোনো অঙ্গে বা উপাঙ্গে প্রসারিত হয় না। অন্যদিকে,
৩। সিলোম রক্ত সংবহনতন্ত্রের অংশ গঠন করে না। অন্যদিকে, হিমোসিল দেহের কোনো উপাঙ্গে প্রসারিত হয়।
৪। সিলোমে পুষ্টি পদার্থ পরিবাহিত হয় না। অন্যদিকে, হিমোসিল রক্ত সংবহনতন্ত্রের অংশ গঠন করে।
৫। অ্যানেলিডাসহ কর্ডাটা পর্বের প্রাণীতে সিলোম পাওয়া যায়। অন্যদিকে, আর্থ্রোপোডা ও মোলাস্কা পর্বের প্রাণীতে হিমোসিল থাকে।