সাধারণ মাথাব্যাথাঃ
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণ মাথার যন্ত্রণার বেশ কিছু লক্ষণ এবং কারণ রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথার যন্ত্রণা চিন্তার কারণে হতে পারে। এক্ষেত্রে খিদে না পাওয়া, অবসাদ, দুশ্চিন্তা, কম ঘুম, স্লিপ অ্যাপনিয়া, আর্থারাইটিস, স্ট্রেসের কারণে হতে পারে। এছাড়াও সাধারণ মাথা ব্যথার লক্ষণ হিসেবে মাথার কোনও একটি দিকে প্রবল ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, জল পড়া, অ্যালার্জি, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও মাথা যন্ত্রণা হলে বমি, চোখে ব্যথা, আলো এবং শব্দতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মারাত্মক আকারে মাথার ব্যথা হলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, ঘুমের সমস্যা, ব্রেন টিউমর, স্ট্রোক, মাথায়, ঘাড়ে, কাঁধে প্রবল ব্যথার লক্ষণও দেখা দেয়।
মাইগ্রেনঃ
পেন মেডিসিন’য়ের বর্ণনা অনুযায়ী, “মাইগ্রেইন হল স্নায়ুজনীত রোগ যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্নায়ুতন্ত্রের গতিপথ ও বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদান। মাইগ্রেনের সমস্যা বলতে ক্রমাগত দীর্ঘদিন মাথার যন্ত্রণায় ভোগার সমস্যাকে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মাথার যন্ত্রণা যখন জটিল আকার নেয়, তখনই তা মাইগ্রেন হিসেবে ধরা হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, খিদে না পাওয়া, ঘাড় ঘোরাতে সমস্যা, আলো এবং শব্দে সমস্যা, মাঝেমধ্যেই মেজাজ বদলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
সাধারণ মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের মধ্যে পার্থক্যঃ
সাধারণ মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের ব্যাথার দুটির যন্ত্রণাদায়ক হলেও এদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
শুধু মাথাব্যথায় কেবল মাথার যন্ত্রণা করে, কিন্তু মাইগ্রেনে মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে শরীরে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সঙ্গে শুধু মাথাব্যথা হলে মাথার যন্ত্রণাটি পুরো মাথাজুড়ে হতে পারে। কিন্তু মাইগ্রেন হলে মাইগ্রেন সচরাচর মাথার যে কোনো একপাশে হয়। শুধু মাথার যন্ত্রণা যতটা মারাত্মক হয়, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা আরও বেশি হয়।
শুধু মাথাব্যথা বলতে বুঝায়-মাথা অথবা মুখ অথবা ঘাড়ে কোনো ধরনের যন্ত্রণা করা। সে পেইন মস্তিষ্কের ভেতর, মস্তিষ্কের ওপর, ঘাড়ে অথবা মুখের পেশি, চোখ, নাক, কান, গলা, মুখ এবং এই অঞ্চলটি ঘিরে হাড়গুলোতেও হতে পারে।
পৃথিবীর ৭৫ ভাগ মানুষের কোনো না কোনো ধরনের মাথার যন্ত্রণা বছরের কোনো একটা সময় একবার অথবা একাধিকবার হয়।
শুধু মাথাব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো মাইগ্রেন। মাইগ্রেন হলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়।
মাইগ্রেন হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল পেইন বা যন্ত্রণা। আগেই বলেছিলাম মাইগ্রেন হলে এটি সচরাচর মস্তিষ্কের একপাশে হয়। কিন্তু মাইগ্রেন ছাড়া অন্য কোনো মস্তিষ্কের যন্ত্রণা হলে সেটি পুরো মস্তিষ্কজুড়ে অথবা মস্তিষ্কের আশপাশের অংশে যে কোথাও হতে পারে। শুধু মস্তিষ্কের যন্ত্রণা যতটা ভোগায় তার চেয়ে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা আরও বেশি ভোগায়। মাইগ্রেন হলে মাইগ্রেনের আগে কিছু সমস্যা বা পূর্বাভাস দেখা দেয়। শুধু মাথাব্যথা বা যন্ত্রণায় এমন কোনো পূর্বাভাসের লক্ষণ দেখা যায় কম। মাইগ্রেন জেনেটিক কারণে বেশি হয়ে থাকে। শুধু মাথাব্যথার জেনেটিক কারণ যতটা থাকে তার চেয়ে অন্য অনেক কারণ, পরিবেশ, শরীরের অবস্থা, স্ট্রেস, এমন সব অবস্থাগুলো দায়ী।
শুধু মাথাব্যথা হলে মাথায় নিউরোলজিক্যাল পেইন অনুভব করে। কিন্তু মাইগ্রেন হলে মাথার সঙ্গে চোখ, পেট, মুখ, নাক, অনেক কিছুই আক্রান্ত হয় বা হতে পারে। মাইগ্রেন হলে আলো, শব্দ, গন্ধ, দৃষ্টিতে সমস্যা, চিন্তায় অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া, ফোকাসিং পাওয়ার কমে যাওয়া, শরীরজুড়ে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া, কথা বলতে সমস্যা, রোদ, তীব্র লাইট, হালকা শব্দ এবং ধুলোবালি সহ্য করতে পারে না।
মাইগ্রেন হলে মস্তিষ্কে এক ধরনের নিউরোকেমিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। এই নিউরোকেমিক্যাল সমস্যার কারণে মাইগ্রেন হওয়ার আগেই কিছু প্রি সিম্পটম দেখা যায়। অবস্থাটিকে বলে Aura। এমন হলে চোখে কম দেখতে থাকে, জিগজাগ লাইন দেখতে থাকে, অথবা ফ্লাশিং লাইট দেখতে থাকে। তখনো মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় না।
তারপর মস্তিষ্কের কিছু অংশ তার নরমাল কাজগুলো করতে পারে না বলে ব্রেইন ফ্রগ বা মস্তিষ্ক কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকে। এতে মস্তিষ্কের কগনিটিভ পাওয়ার বা চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়।
মস্তিষ্কের সঙ্গে পেটের একটি সংযোগ আছে। সংযোগটি তৈরি করে শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু ভেগাস নার্ভ। মাইগ্রেনে এটির কাজ বা মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের বা পেটের অংশের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে পেটে পরিপাকের কিছু সমস্যা যেমন দেখা দেয়, সঙ্গে পেটে খাবার থেকে গেলে সেই খাবারটি অন্ত্রে পরিশোধিত হওয়ার কাজটি কমে যায়। আর তাতে বমি বমি ভাব হয় অথবা বমি হতে থাকে।
মাইগ্রেন বা শুধু মাথাব্যথা হলে তা থেকে শরীরকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় উপায় হলো-ঠিক যে কারণে হয়, সে কারণগুলো খুঁজে বের করতে পারা। তারপর সে কারণগুলো হতে না দেওয়া। এক্ষেত্রে মাইগ্রেন যেহেতু শুধু মাথাব্যথার চেয়ে অধিক বার হয়, মাসে যদি একাধিকবার হয়, তবে একটি মাইগ্রেন হেডেক ডায়েরি মেন্টেন করবেন। কিছুদিন পর দেখতে পাবেন একটি ফ্রিকোয়েন্ট অনুযায়ী ব্যথাটি আসছে। সেই সময়টির এক বা দুই দিন আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করলে অথবা যে কারণগুলো সেই অবস্থানের দিকে নিয়ে যায় তা থেকে দূরে থাকলে মাইগ্রেনও আপনার থেকে দূরে থাকবে।
শুধু মাথাব্যথা হলে যে কোনো পেইন কিলার সহজে কাজ করে। কিন্তু মাইগ্রেন হলে স্পেসিফিক পেইন কিলার যতটা ভালো কাজ করে, এবং সেই মেডিসিন যথাসময়ে খেলে আরও দ্রুত কাজ করে। বিশেষ করে ট্রিপটান জাতীয় ওষুধ মাইগ্রেন এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। একনাগাড়ে এক সপ্তাহের বেশি এমন জাতীয় মাইগ্রেনের ওষুধ খাবেন না। সঙ্গে বমি বমি ভাব হলে বমির ভাব দূর করার ওষুধ খেতে পারেন। তবে সব ক্ষেত্রেই আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারলে ভালো। মাইগ্রেন যেহেতু জেনেটিক এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়ে থাকে, সঙ্গে খুব স্পেসিফিক প্যাটার্নের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাতে মাইগ্রেন ডায়াগনোসিস করা সহজ হয়। কিন্তু শুধু মাথাব্যথা থাকলে তার অনেক কারণ অনুসন্ধান করে সেই কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে পারলে শুধু মাথা ব্যথা কম হয় এবং সহজে চলে যায়।