সাম্প্রদায়িকতা (Communalism)
সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক বলে হয়, যখন সে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতিসাধন করার মানসিক প্রস্তুতি সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ পরিচয় অথবা বিরুদ্ধতা থেকে সৃষ্ট নয়। ব্যক্তিবিশেষ এ ক্ষেত্রে গৌণ, মুখ্য হলো সম্পদায়।ধর্মনিষ্ঠার সাথে সম্পর্ক আছে ধর্মীয় তত্ত্ব এবং আচার বিচারের। সাম্প্রদায়িকতার যোগ আছে সম্পদায়ের সাথে।
অর্থাৎ ধর্মনিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের আচরণ এবং ধর্মবিশ্বাসের গুরুত্ব বেশি। সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ এক জাতীয় আনুগত্যের গুরুত্ব বেশি। এ ছাড়া সত্যকার ধর্মনিষ্ঠা পরকালমুখী। পরকালেই তার সত্যকার পুরস্কারের আশা। সাম্প্রদায়িকতার মুনাফা ইহলোকে। ধর্মনিষ্ঠার জন্য অন্যের বিরুদ্ধাচরণের প্রয়োজন নেই।
অসাম্প্রদায়িকতা (Cosmopolitanism):
অসাম্প্রদায়িকতা (Cosmopolitanism) হল একটি আদর্শিক মতবাদ যেখানে সকল মানুষ পারস্পারিক নৈতিকতা ভাগাভাগির বা বিনিময়ের মাধ্যমে একটি একক সম্প্রদায়ের সদস্য হবে। যে ব্যক্তি অসাম্প্রদায়িকতার ধারণাকে যে কোন আকারে নিজের মাঝে ধারণ করেন তাকে একজন অসাম্প্রদায়িক বা ইংরেজিতে cosmopolitan বলা হয়। একটি অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় বা সমাজব্যবস্থা সার্বজনীন নৈতিকতা, বিনিময়মূলক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন জাতি দ্বারা পরিবেষ্টিত রাজনৈতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে।
একটি অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্থান বা দেশ থেকে আগত ব্যক্তিগণ পারস্পারিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করেন। উদাহরণস্বরূপ, কোয়ামি অ্যান্থনি এপিয়াহ এমন একটি অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থার পরামর্শ দেন যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যক্তিগণ তাদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস বা মূলনীতি থাকা সত্ত্বেও পারস্পারিক শ্রদ্ধার একটি সম্পর্কে প্রবেশ করবে।
সাম্প্রদায়িকতা এবং অসাম্প্রদায়িকতা -এর মধ্যে পার্থক্য:
সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক বলে হয় সাম্প্রদায়িকতা এবং অসাম্প্রদায়িকতা -এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
সাম্প্রদায়িক আর অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কিছু বলার নাই। যে সাম্প্রদায়িক সে একই সাথে একচোখা, অন্য ধরম্য বিদ্বেষী এবং শুধুমাত্র ভিন্ন ধরমের বলে একজন মানুষের শতগুন থাকার পরও তাকে ঘৃণা করবে। আরো বিশেষত্বের মধ্যে রয়েছে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে চুড়ান্ত মনে করে অন্য ধরমের লোকজনকে এবং তাদের ধরমকে অবজ্ঞা করা কুটক্তি করা।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এই করম মানুষেরা সব সময় সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং এই ধরনের বিশ্বাস থেকেই সমাজে ধর্মীয় হানাহানি মারামারি হয়। সাম্প্রদায়িকতার আরেকটি মাপকাঠি হচ্ছে এরা সব সময় নিজ দেশের সংখ্যা লঘুদের প্রতি অত্যাচার নিরযাতন এদের চোখে পড়বে না। কিন্তু অন্য দেশে নিজ ধরমের লোকজনের উপর অত্যাচার এদের চোখে পরবে। পারলে দা বটি গুলতি নিয়ে অক্রমন করে ওই দেশ ধ্বংস করে দিবে।
যেমন বাংলাদশের অনেক মানুষ এদেশের মন্দিরে হামলা ও পুজা মন্ডপ ধ্বংস করাটাকে কিছুই মনে করে না কিন্তু ভারতে কোথায় নামজে বাধা দিল, কথাও কিছু লোক মুসলিমকে আহত বা নিহত করলো তার জন্য প্রায় ভারত ধ্বংস করে ফেলতে চায়। ঠিক তেমনি ভারতে কিছু লোক আছে যারা নিজ দেশে মুসলিমদের প্রতি অন্যায় দেখতে পায় না কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষার জন্য জান দিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সবার উচিৎ নিজ পরিবারে, সমাজে এবং দেশে অসাম্প্রদায়িকতার চরচা করা, তাতেই নিজদেশের মান বাড়বে আর সমাজ উপকৃত হবে। বানান ভুল মার্জনা করবেন।