জাত্যর্থক পদ (Connotative term):
যে পদ দ্বারা কোন বিষয় বা বস্তুর এবং ঐ বস্তু বা বিষয়ের সাধারণ ও অনিবার্য গুণকে বুঝানো হয় তাকে জাত্যর্থক পদ বলে। অর্থাৎ যে পদের ব্যক্ত্যর্থ এবং জাত্যর্থ দু’টোই আছে তাকে জাত্যর্থক পদ বলে। যেমন-মানুষ পদটি জাত্যর্থক, মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ হল সব মানুষ এবং এর জাত্যর্থক হল জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। তাই আমরা বলতে পারি, মানুষ পদটি জাত্যর্থক। কারণ মানুষ পদের জাত্যর্থ ও ব্যক্ত্যর্থ দুটোই আছে।
অজাত্যর্থক পদ (Non-Connotative Term):
যে পদ শুধুই কোন বস্তু বা ব্যক্তির গুণ নির্দেশ করে তাকে অজাত্যর্থক পদ বলে। অর্থাৎ যে পদের হয় ব ̈ক্ত ̈র্থ না হয় জাত্যর্থ আছে, কিন্তু দুটি এক সাথে নেই সে পদকে অজাত্যর্থক পদ বলে। যুক্তিবিদ মিল বলেন, একটি অজাত্যর্থক পদ হল সেই পদ যা শুধুমাত্র একটি বস্বাতুকে শুধুমাত্র একটি গুণকে প্রকাশ করে। যেমন-সততা, শুভ্রতা, লন্ডন ইত্যাদি। এখানে ‘লন্ডন’ পদ দ্বারা একটি শহর নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কেবল ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশিত হয়েছে। জাত্যর্থ প্রকাশিত হয়নি।
আবার সততা পদটি দ্বারা কেবল গুণ বা জাত্যর্থ প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু এর ব্যক্ত্যর্থ নেই। সেজন্যই লন্ডন ও সততা পদ দুটি অজাত্যর্থক।
জাত্যর্থক ও অজাত্যর্থক পদের মধ্যে পার্থক্যঃ
জাত্যর্থক পদ ও অজাত্যর্থক পদের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে আমরা এ দুই পদের মাঝে কত গুলো পার্থক্য লক্ষ্য করি। নিম্নে পার্থক্য গুলো আলোচনা করা হল-
১. জাত্যর্থক পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ উভয়ই আছে। অর্থাৎ জাত্যর্থক পদ দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর গুণ ও পরিমাণ উভয়ই প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, অজাত্যর্থক পদের হয় ব্যক্ত্যর্থ থাকে না জাত্যর্থ থাকে, এক সাথে দুটি থাকেনা। অর্থাৎ জাত্যর্থক পদ দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর গুণ অথবা পরিমাণ নির্দেশ করা হয়। কিন্তু এক সাথে দুটি প্রকাশ পায় না।
২. সকল বস্তুবাচক সার্বিক পদ গুলো জাত্যর্থক পদ বলে বিবেচিত হয়। কারণ সার্বিক বস্তুবাচক পদ গুলো তাদের অন্তর্গত সমস্ত বস্তুর ব্যক্ত্যর্থ এবং এসব বস্তুতে বিদ্যমান অনিবার্য গুণ গুলোকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে, সকল নামবাচক বিশিষ্ট পদ গুলো অজাত্যর্থক পদ হিসাবে গণ্য হয়। কারণ বিশিষ্ট নামবাচক পদ গুলো শুধু ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে, কোনো জাত্যর্থ নির্দেশ দেয় না।
৩. জাত্যর্থক পদ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কোন না কোন অর্থবোধক তাৎপর্য বহণ করে। অন্যদিকে, অজাত্যর্থক পদ গুলো তাৎপর্যপূর্ণ কোন অর্থ বহন করেনা।
৪. সমস্ত গুণবাচক সার্বিক পদ গুলোকে জাত্যর্থক পদ বলা হয়। কারণ সার্বিক গুণবাচক পদে পরিমাণ ও গুণ অর্থাৎ ব্যক্তর্থ ও জাত্যর্থ উভয়েই প্রকাশ পায়। অন্যদিকে সকল গুণবাচক বিশিষ্ট পদ গুলো অজাত্যর্থক পদ বলে বিবেচিত হয়। কারণ বিশিষ্ট গুণবাচক পদ গুলো কোনো ব্যক্ত্যর্থ বা পরিমাণ ব্যক্ত করেনা, বরং শুধু জাত্যর্থ বা গুণ প্রকাশ করে।
৫. জাত্যর্থক পদের পরিসর ব্যাপ্তি অজাত্যর্থক পদের চেয়ে বেশী। কারণ জাত্যর্থক পদে ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থ দুই-ই থাকে এবং এতে সার্বিক বস্তুবাচক অন্তর্ভুক্ত হয়। অন্যদিকে, অজাত্যর্থক পদের পরিসর জাত্যর্থক পদের চাইতে কম, কারণ অজাত্যর্থক পদের শুধু ব্যক্ত্যর্থ বা শুধু জাত্যর্থ থাকে এবং এতে শুধু বিশিষ্ট গুণবাচক ও নামবাচক পদ গলো অন্তর্ভূক্ত হয়।
৬. বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শ্রেণীবাচক পদ গুলোই জাত্যর্থক পদ হিসাবে আমরা পেয়ে থাকি। যেমন- সার্বিক বস্তুবাচক বা সার্বিক গুণবাচক পদ গুলো শ্রেণীবাচক পদেরই নির্দেশক। অন্যদিকে, অজাত্যর্থক পদ গুলো সাধারণত: শ্রেণীবাচক হয়না। বরং বিশিষ্ট পদ হয়ে থাকে। যেমন-বিশিষ্ট গুণবাচক বা বিশিষ্ট নামবাচক পদ গুলোই অজাত্যর্থক পদ।