প্রগতিশীল সমাজ (Conservative society) :
রক্ষণশীলতা যার অর্থ নতুন কোন বিষয়কে মেনে না নেওয়া। সাধারণভাবে রক্ষণশীলতা বলতে বুঝায় প্রগতিশীলতার বিপরীত ধারণাকে। অর্থাৎ যে সমাজে পরিবর্তন সহজে মেনে নেওয়া হয়না এবং প্রচলিত সমাজব্যবস্থাকে আকড়ে ধরে ধর্মীয় নীতিবোধ, রীতিনীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া হয় সে সমাজকে রক্ষণশীল সমাজ বলা হয়। যারা অতীত ঐতিহ্য, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কার, কর্ম, পন্থা, প্রথা ইত্যাদি সবকিছুকে অতীত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বজায় রাখতে চায় এবং পরিবর্তনশীল মনোভাব তৈরি করতে পারে না। নতুনকে গ্রহণ করার অভ্যাস তাদের নেই তারা পুরাতনকে নিয়ে পড়ে থাকতে চায় তাকে রক্ষণশীলতা বা রক্ষণশীল সমাজ বলে।
প্রধানত আব্রাহামিক ধর্মের ঐতিহ্যবিশিষ্ট দেশগুলোতে রক্ষণশীলতাবাদে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সমর্থনের প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে সেগুলো হল প্রধান বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম। ইংল্যান্ডে প্রকাশিত এডমান্ড বার্কের Reflections on the revolution in France বইয়ে লেখক অভিমত দেন যে, কোন যত্নবান সরকারের কর্তব্য হল জনগণকে সন্তুষ্ট রাখা এবং আইনানুগভাবে তাদের ব্যবস্থাপনা করা।তার এই দুটি নীতিই পরবর্তীকালে একই সঙ্গে প্রচলিত হয়।
প্রগতিশীল সমাজ (Progressive society) :প্রগতি
শব্দের অর্থ জ্ঞানে বা কর্মে এগিয়ে চলা
। যাঁরা এই কাজটা যথাযথভাবে করতে সক্ষম, তাঁদেরই প্রগতিশীল
বলা হয়। আর প্রগতিশীলতা হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। প্রগতিশীল মানুষ সমাজের ঘুণে ধরা জরা দূর করতে জীবন উৎসর্গ করে। প্রগতিশীল মানুষ নিজে সৃষ্টিশীল কাজ করে, অন্যদের উৎসাহিত করে। চেতনায় বিপ্লব ঘটানোই হচ্ছে প্রগতিশীল হওয়া।
সমাজ বিপ্লবের সাথে সম্পর্কহীন করে প্রগতিশীলতাকে বুঝলে আমরা বারবার ভুল জায়গাতে প্রগতিশীলতাকে খুঁজতে পারি। সমাজ বিপ্লবকে ঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারলে আমরা প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীলের পার্থক্য হয়তো ঠিকঠাক বুঝতে পারবো। সমাজ বিপ্লব হলো, পুরনো সমাজ ব্যবস্থা থেকে প্রগতিশীল শক্তিগুলোর মাধ্যমে সাধিত বিকাশের একটি গুণগত, নতুন ও উচ্চতর পর্যায়ের দিকে সমাজের অগ্রগতি, একটি নতুন ও প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরণ।
ইংরেজি Progressive শব্দের বাংলা অর্থ প্রগতিশীল। প্রগতিশীল শব্দের দ্বারা আমরা এমন একটি শ্রেণিকে বুঝি যে শ্রেণি অর্থনৈতিক লড়াইয়ে অতীতের সমাজকে ভেঙে নতুন সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। প্রগতিশীলতা হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান কে ভবিষ্যতের যৌক্তিকতায় ধারন করা এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে এবং সমাজকে নির্দেশনা দেয়াই হচ্ছে প্রগতিশীলতা।
রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে পার্থক্যঃ
রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে পার্থক্য মূলত তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
১. রক্ষণশীল সমাজ ঐতিহ্য, রীতিনীতি, ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা পরিবর্তনের প্রতি সাবধানী ও সন্দিহান। অন্যদিকে, প্রগতিশীল সমাজ নতুনত্ব, উদ্ভাবন, ও পরিবর্তনের প্রতি উদার ও উৎসাহী।
২. রক্ষণশীল সমাজে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ধর্মীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্যদিকে, প্রগতিশীল সমাজে ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখা হয়। তারা ধর্মীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতি ঐতিহ্যবাহী আনুগত্যকে প্রত্যাখ্যান করে।
৩. রক্ষণশীল সমাজে সামাজিক নীতিগুলি ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তারা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিবর্তনকে দ্রুত ও ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতে চায় না। অন্যদিকে, প্রগতিশীল সমাজে সামাজিক নীতিগুলি প্রগতিশীল মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তারা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়।
৪. রক্ষণশীল সমাজে অর্থনৈতিক নীতিগুলি ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বাজারভিত্তিক অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তারা সরকারের হস্তক্ষেপকে সীমিত করতে চায়। অন্যদিকে, প্রগতিশীল সমাজে অর্থনৈতিক নীতিগুলি সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তারা সরকারের হস্তক্ষেপকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করে।
৫. রক্ষণশীল সমাজে পরিবেশ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবে তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। অন্যদিকে, প্রগতিশীল সমাজে পরিবেশ সংরক্ষণকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারা পরিবেশবান্ধব নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে জোর দেয়।