গুচ্ছধ্বনি :
গুচ্ছধ্বনি হল এমন একটি ধ্বনি যা উচ্চারণের সময় দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি একত্রে উচ্চারিত হয়, কিন্তু এদের মধ্যে কোনও স্বরধ্বনি থাকে না। অর্থাৎ, গুচ্ছধ্বনির মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনি ছাড়া অন্য কোনও ধ্বনি থাকে না। পাশাপাশি উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ, যাদের মাঝখানে স্বরধ্বনি থাকে না, কিন্তু দলসীমা থাকে তাদের গুচ্ছধ্বনি বলে। ‘উত্তর’ শব্দটিতে (উ+ত+ত+অ+র ) পাশাপাশি দুটি ‘ত’ আছে, যাদের মাঝে কোনো স্বরধ্বনি নেই। তবে এই দুই ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে স্বরধ্বনি না থাকলেও দলসীমা ( উত্ – তর) থাকে। অর্থাৎ দুটি ব্যঞ্জনবর্ণের ( ‘ত’ ও ‘ত’ ) প্রথমটি পূর্ববর্তী দলের এবং শেষেরটি পরবর্তী দলের অংশ। উদাহরণ-
ক্ল – ক্লাস, ক্লান্ত, ক্লিষ্ট
প্ল – প্লেট, প্লুটো, প্ল্যাস
স্ন – স্নান, স্নিগ্ধ, স্নায়ু
আবার, ‘করছি’ শব্দে ( ক+অ+র+ছ+ই ) পাশাপাশি ‘র’ ও ‘ছ’ আছে, যাদের মাঝে কোনো স্বরধ্বনি নেই। তবে দলসীমা ( কর – ছি ) আছে। প্রথম দলের শেষে ‘র’এবং পরবর্তী দলের প্রথমে ‘ছ’ অবস্থান করছে।
বাংলায় দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ২০০ টিরও বেশি। তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ৮ টি, যার তৃতীয় ব্যঞ্জন অবশ্যই ‘র’। চারটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি একমাত্র গুচ্ছধ্বনি যুক্ত শব্দ ‘সংস্কৃত’।
যুক্তধ্বনি :
যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ গুলি শব্দের আদ্য অবস্থানে থাকে এবং তার সাথে কোনো দলসীমা থাকে না তাদের যুক্তধ্বনি বলে। অর্থাৎ যুক্তধ্বনি হল এমন একটি ধ্বনি যা উচ্চারণের সময় দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত হয়, এবং এদের মধ্যে একটি স্বরধ্বনি থাকে। অর্থাৎ, যুক্তধ্বনির মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনির পাশাপাশি একটি স্বরধ্বনি থাকে। একই রকমভাবে ‘স্থির’শব্দের আদ্য অবস্থানে ‘স্থ’উচ্চারিত হয়। ব্যঞ্জনের এই সমাবেশে কোনো দলসীমা ( স্থির – একদল ) থাকে না। তৃণ’ শব্দের আদ্য অবস্থানে বা দলের আদিতে ‘তৃ’ উচ্চারিত হয়। এই ব্যঞ্জনধ্বনি গুলির মাঝে কোনো দলসীমা ( তৃ – ণ ) নেই। উদাহরণ-
ক + আ = কা – কাচ, কাপ, কাঠ
প + আ = পা – পা, পাঁচ, পাখি
স + আ = সা – সাত, সারা, সাফল্য
বাংলায় এরকম যুক্তধ্বনির সংখ্যা ২৮ টি এবং প্রধানত ইংরেজি থেকে আগত ঋণ শব্দে আরো ১৮ টি। তিন ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি যুক্তধ্বনি ২ টি — ‘স্ত্র’ও ‘স্পৃ’।এগুলি দিয়ে যথাক্রমে ‘স্ত্রী’ও ‘স্পৃহা’প্রভৃতি শব্দ গঠন করা যায়।
গুচ্ছধ্বনি এবং যুক্তধ্বনির মধ্যে পার্থক্যঃ
গুচ্ছধ্বনি ও যুক্তধ্বনি উভয়ই বাংলা ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরা উভয়ই দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত হয়। তবে, এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ-
১. গুচ্ছধ্বনি হল এমন একটি ধ্বনি যা উচ্চারণের সময় দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি একত্রে উচ্চারিত হয়, কিন্তু এদের মধ্যে কোনও স্বরধ্বনি থাকে না। অন্যদিকে, যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ গুলি শব্দের আদ্য অবস্থানে থাকে এবং তার সাথে কোনো দলসীমা থাকে না তাদের যুক্তধ্বনি বলে।
২. গুচ্ছধ্বনি উচ্চারণের সময় দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি একত্রে উচ্চারিত হয়। অন্যদিকে যুক্তধ্বনি উচ্চারণের সময় দুটি বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত হয়, এবং এদের মধ্যে একটি স্বরধ্বনি থাকে।
৩. গুচ্ছধ্বনি সাধারণত তৎসম শব্দের মধ্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন, ক্লাস, ক্লান্ত, ক্লিষ্ট। অন্যদিকে, যুক্তধ্বনি সাধারণত তদ্ভব শব্দের মধ্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন, কাচ, কাপ, কাঠ। তবে, কিছু অব্যয়ও যুক্তধ্বনি দ্বারা গঠিত। যেমন, কে, কি, কেমন, কেন।
৪. গুচ্ছধ্বনি ধ্বনিগত গঠনে ব্যঞ্জনধ্বনি ছাড়া অন্য কোনও ধ্বনি থাকে না। অন্যদিকে, যুক্তধ্বনি ধ্বনিগত গঠনে ব্যঞ্জনধ্বনির পাশাপাশি একটি স্বরধ্বনি থাকে।
৫. বাংলায় দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ২০০ টিরও বেশি। তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ৮ টি, যার তৃতীয় ব্যঞ্জন অবশ্যই ‘র’। চারটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি একমাত্র গুচ্ছধ্বনি যুক্ত শব্দ ‘সংস্কৃত’।
অন্যদিকে, বাংলায় এরকম যুক্তধ্বনির সংখ্যা ২৮ টি এবং প্রধানত ইংরেজি থেকে আগত ঋণ শব্দে আরো ১৮ টি। তিন ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি যুক্তধ্বনি ২ টি — ‘স্ত্র’ও ‘স্পৃ’।এগুলি দিয়ে যথাক্রমে ‘স্ত্রী’ও ‘স্পৃহা’প্রভৃতি শব্দ গঠন করা যায়।