বিপরীত পদ (Contradictary Contrary Term):
যদি দু’টি পদ পরস্পর বিরেধী হয় অথচ তারা যদি একত্রে একটি ব্যাপক পদে সমূদয় ব্যক্ত্যর্থক প্রকাশ করতে না পারে তাহলে তাদেরকে বিপরীত পদ বলে। যেমন-সাদা ও কালো। আমরা যাকে সাদা বলি তাকে কালো বলতে পারিনা, আবার যাকে কালো বলি তাকে সাদা বলতে পারিনা। তবে এ পদ দুটির সর্বব্যাপক নয়, রংয়ের জগতে এ দু’টি রং ছাড়া আরও বহু রং আছে। সাদা ও কালো যেখানে প্রয়োগ করা যায় না, সেখানে অন্য রং প্রয়োগ করা যেতে পারে। কেননা সাদা ও কালো রং ছাড়াও লাল, নীল, সবুজ ইত্যাদি রংও রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বিপরীত পদ দু’টির একই সঙ্গে সত্য হতে না পারলেও তারা একই সাথে মিথ্যা হতে পারে। যেমন-কোন বস্তু যদি সাদা হয় তবে তা কালো হতে পারে না। এবং যদি বস্তুটা কালো হয় তবে তা সাদা হতে পারেনা। অর্থাৎ বিপরীত পদের একটি সত্য হলে অপরটি মিথ্যা হতে বাধ্য। অপর পক্ষে একটি বস্তু যদি সাদা না হয় তবে যে কালো হবে এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই। কারণ জিনিসটি সাদা বা কালো ছাড়া অন্য যে কোন রংয়ের হতে পারে। তাহলে আমরা বলতে পারি যে, বিপরীত পদ দুটি একটি মিথ্যা হলে অন্যটি সত্য হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে।
বিরুদ্ধ পদ (Contrary Term):
পরস্পর বিরোধি দুটি পদের মধ্যে যদি কোন তৃতীয় বিকল্প পদ না থাকে এবং বিরোধি পদ দুটি যদি যুক্তিভাবে বা একত্রে তাদের নির্দেশিত বিষয় সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে তাহলে তাদেরকে বিরূদ্ধ পদ বলে। যেমন-মানুষ ও অমানুষ সুন্দর ও অসুন্দর সৎ ও অসৎ এ পদ গুলো হচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধ পদ। বিরুদ্ধ পদের ক্ষেত্রে একটি সত্য হলে অপরটি মিথ্যা হবে। আবার একটি মিথ্যা হলে অপরটি সত্য হবে। কারণ দু’টি বিরূদ্ধ পদ একই সময় কোন বস্তুর সম্পর্কে সত্য বা মিথ্যা হতে পারেনা। উদাহরণ স্বরূপ, মানুষ এবং অমানুষ একত্রে করলে তাদের নির্দেশিত বিষয় সকল প্রাণী পাওয়া যায়। কেননা মানুষ ছাড়া আর সমস্ত প্রাণী ‘অমানুষ’ পদটি অর্ন্তভুক্ত করে উভয় মিলে পূর্ণ ব্যক্তর্থে প্রকাশ করে।
তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দু’টি পদ কখনই এক সঙ্গে সত্য হতে পারেনা, আবার দু’টি মিথ্যা হতে পারেনা। একটি সত্য হলে অন ̈টি মিথ্যা হবে এবং একটি মিথ্যা হলে অন্যটি সত্য হবে। যেমন- মানুষ ও অমানুষ এই বিরূদ্ধ পদ দুটি একই সঙ্গে সত্য হতে পারেনা। কারণ একই জীব একই সঙ্গে মানুষ এবং অমানুষ দুই-ই হতে পারেনা। আবার ঐ জীব মানুষ ও নয়, অমানুষ ও নয় এটাও হতে পারেনা।
বিপরীত ও বিরুদ্ধ পদের মধ্যে পার্থক্যঃ
বিরূদ্ধ ও বিপরীত পদের সংজ্ঞা ও উদাহরণ বিশ্লেষণ করলে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা যায়। বিপরীত ও বিরুদ্ধ পদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. দুটি বিরূদ্ধ পদ যুক্তিভাবে তাদের আলোচ্য বস্তু বা বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করতে পারে। অন্যদিকে, দু’টি বিপরীত পদ যুক্তভাবে তাদের দ্বারা আলোচ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করতে পারেনা। আংশিক ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে থাকে। যেমন-সাদা এবং অসাদা এটি বিরূদ্ধ পদ রং বিষয়টির সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু সাদা আর লাল এ দুটি বিপরীত পদ রংয়ের সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করতে পারেনা। যেহেতু সাদা ও লাল ছাড়া কালো, নীল, হলুদ ইত্যাদি আরও রং রয়েছে।
২. দুটি বিরূদ্ধ পদের মধ্যে তৃতীয় কোন বিকল্প পদের সম্ভাবনা থাকেনা। যেমন সভ্য ও অসভ্যের মধ্যে তৃতীয় কোন বিকল্প পদ নেই। কিন্তু দুটি বিপরীত পদের মধ্যে তৃতীয় বিকল্প পদ থাকেনা। যেমন- লাল ও সবুজের তৃতীয় বিকল্প হতে পারে। যেমন সাদা, কালো, নীল ইত্যাদি
৩. কোন পদের একাধিক বিরূদ্ধ পদ থাকতে পারেনা। একটি পদের একটি মাত্র বিরূদ্ধ পদ থাকে। সাদা পদের আসাদ ছাড়া আর কোন বিরূদ্ধ পদ নেই। অন্যদিকে, একটি পদের একাধিক বিপরীত পদ থাকতে পারে, তেমনিভাবে লাল কিংবা সবুজ অথবা অন্য রং ও হতে পারে।
৪. দুটি বিরূদ্ধ পদের একিট সত্য হলে অপরটি অবশ ̈ই মিথ্যা হবে। অথবা একটি মিথ্যা হলে অপরটি অবশ্যই সত্য হবে। যেমন- সুন্দর সত্য হলে অসুন্দর অবশ্যই মিথ্যা হবে, অথবা অসুন্দর সত্য হলে সুন্দর অবশ্যই মিথ্যা হবে। অন্যদিকে, দুটি বিপরীত পদের একটি মিথ্যা হলে অপরটিও মিথ্যা হতে পারে; যেমন – সাদা ও সবুজ দুটি বিপরীত পদ। এখন কোন বস্তু লাল হয়ে থাকলে সাদা ও সবুজ এ দুটি বিপরীত পদই লাল বস্তুটি সম্পর্কে মিথ্যা।