কোপা আমেরিকা (L Copa America):
কোপা আমেরিকা অথবা কনমেবল কোপা আমেরিকা হচ্ছে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা, যেখানে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (কনমেবল) সদস্যপ্রাপ্ত পুরুষদের জাতীয় ফুটবল দলগুলো প্রতিযোগিতা করে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে। এই প্রতিযোগিতাটি ১৯১৬ সালে সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয়। এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে পরিচিত ছিল, অতঃপর ১৯৭৫ সালে বর্তমান নামে পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি বর্তমানে চলমান প্রাচীনতম আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক দেখা ফুটবল প্রতিযোগিতা।
১৯৯০-এর দশকের পর থেকে উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার দলগুলোকেও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতায় সাধারণত ১২টি দল অংশগ্রহণ করে — কনমেবল থেকে ১০টি দল এবং অন্যান্য কনফেডারেশন থেকে অতিরিক্ত ২টি দল। এই প্রতিযোগিতার ২০১৬ সালের আসরটি কোপা আমেরিকার ১০০তম বছর পূর্তি উৎযাপন করেছিল।
উয়েফা ইউরো (UEFA Euro):
উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ (সাধারণত ইউরো নামে পরিচিত) হচ্ছে একটি প্রাথমিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, যেখানে ইউরোপীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের (উয়েফা) সদস্যপ্রাপ্ত পুরুষদের জাতীয় ফুটবল দলগুলো প্রতিযোগিতা করে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে। ১৯২৭ সালে, ফরাসি ফুটবল ফেডারেশনের মহাসচিব অঁরি দলোনে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যকার একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন করার সর্বপ্রথম একটি ধারণা প্রদান করেন, কিন্তু দলোনের মৃত্যুর তিন বছর পরে ১৯৫৮ সালে এটি বাস্তবায়ন হলেও সে বছর কোন আসর অনুষ্ঠিত হয়নি।
এই প্রতিযোগিতাটি ১৯৬০ সাল থেকে প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর বিশ্বকাপের মাঝে প্রতি জোড় বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় সাধারণত ২৪টি দল অংশগ্রহণ করে। ফিফা বিশ্বকাপের পর এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগীতার আসর বলে ধরা হয়ে থাকে।
কোপা আমেরিকা ও উয়েফা ইউরোর মধ্যে পার্থক্য-
১। কোপা আমেরিকা ফুটবলের সবচেয়ে পুরনো আসর যেটি প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯১৬ সালে। অন্যদিকে, উয়েফা ইউরোর প্রথম আসর বসে ১৯৬০ সালে।
২। ২০২১ সালের সর্বশেষ আসরে এখন পর্যন্ত ৪৭টি আসর খেলেছে কোপা আমেরিকা এবং এতে অংশগ্রহণ ছিল মোট ১৯টি দেশের । অন্যদিকে, ইউরোতে আসর বসেছে মাত্র ১৬টি, এতে অংশগ্রহণ করে মোট ৩৫টি দেশ।
৩। কোপায় বিশ্বকাপ জয়ী দলের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে মিলে কাপ নিয়েছে মোট ৯ বার। অন্যদিকে, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন মোট ১২ টি বিশ্বকাপ জেতে।
৪। প্রতিযোগিতার মানের দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে থাকবে ইউরো৷ ২০২০ সালের ইউরোতে অংশ নিয়েছিল মোট ২৪টি দেশ। মূল পর্বে অংশগ্রহণের টিকেট পেতে বাছাইপর্বে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে প্রতিটি দেশকেই, যে কারণে দলগুলার মধ্যে লড়াই করার মানসিকতা অনেক বেশি। অন্যদিকে, কোপা আমেরিকার প্রতি আসরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ১০টি দেশ অংশগ্রহণ করে থাকে। এর বাইরে আমন্ত্রিত দুটি দেশসহ মোট ১২টি দেশ নিয়েই সাধারণত আয়োজিত হয় কোপা আমেরিকা।
৫। সর্বশেষ ইউরো এবং কোপা আমেরিকা একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় দুই টুর্নামেন্টের খেলার ধরনের পার্থক্যটা খালি চোখেই বেশ ভালোভাবে ধরা পড়েছে। ইউরোতে দেখা গেছে টেকনিক্যাল ফুটবলের লড়াই, সে তুলনায় কোপা আমেরিকার বেশিরভাগ দলগুলোই খেলেছে ফিজিকাল ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ফুটবল। ইউরোতে যেমন প্রতিটা দলই ‘কম্বিনেশনাল’ ফুটবলের দিকে জোর দিয়েছে, কোপাতে দেখা গেছে তার ঠিক উল্টোটা। একটা সময় লাতিন আমেরিকা ছিল ক্রিয়েটিভ ফুটবলারদের স্বর্গরাজ্য, আর এখন সেই স্বর্গরাজ্য ধরা হয় ইউরোকে।
৬। দর্শকের উপস্থিতিতে কোপা আমেরিকা আর ইউরোর মধ্যে তুলনা করলে খেলার মাঠে দর্শকের উপস্থিতি দিয়ে কোপাকে ছাড়িয়ে গেছে ইউরো। কোপা আমেরিকার কথা মাথায় আসলেই সবার সামনে ভাসতো ছন্দময় ফুটবলের সাথে তাল মিলিয়ে দর্শকদের সুরের ঐকতান। কিন্তু সর্বশেষ ২০২১ এর কোপায় মাঠের খেলায় ছিল না তেমন কোন দর্শক। কোপার ম্যাচগুলোতে গ্যালারিতে দর্শকের উপস্থিতি না থাকায় খেলোয়াড়দের মাঝে সেই লড়াই করার বাড়তি উত্তেজনার বেশ কমতি ছিল। অন্যদিকে, ২০২১ এ অনুষ্ঠিত হওয়া ২০২০ এর সর্বশেষ ইউরোতে গ্যালারী ভর্তি দর্শকে মেতেছিল ইউরোপ।
৭। প্রাইজমানির দিক দিয়ে কোপার তুলনায় অনেক এগিয়ে ইউরো। ফিফা বিশ্বকাপের পর অন্য যেকোনো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের থেকেই প্রাইজমানির দিক দিয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিসাব করলে, এবারের ইউরো অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য ইউরো ২০২০-এ কোয়ালিফাই করা ২৪টি দলই পেয়েছে ৯.২৫ মিলিয়ন ইউরো করে। গ্রুপপর্বে একটি ম্যাচ জেতার জন্য দলগুলো পেয়েছে ১.৫ মিলিয়ন ইউরো। পরবর্তী রাউন্ডগুলোতে কোয়ালিফাই করা দলগুলো পেয়েছে যথাক্রমে ২ মিলিয়ন, ৩.২৫ মিলিয়ন এবং ৫ মিলিয়ন ইউরো করে। রানার্স আপ হওয়া ইংল্যান্ড পেয়েছে ৭ মিলিয়ন ইউরো এবং শিরোপাজয়ী ইতালি পেয়েছে ১০ মিলিয়ন ইউরো প্রাইজমানি।
অন্যদিকে, প্রাইজমানির দিক দিয়ে ইউরোর চেয়ে বহুগুণে পিছিয়ে ছিল সর্বশেষ কোপা আমেরিকা আসরটি। অংশগ্রহণ করা দলগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল না কোন প্রাইজমানি। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা দলগুলো পেয়েছে ১.৫ মিলিয়ন ডলার, তৃতীয় এবং চতুর্থ হওয়া দলগুলো পেয়েছে যথাক্রমে ৩ মিলিয়ন এবং ২.৫ মিলিয়ন ডলার। রানার্সআপ হওয়া ব্রাজিল পেয়েছে ৩.৫ মিলিয়ন ডলার এবং শিরোপাজয়ী আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৬.৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এবারের কোপা আমেরিকায় প্রাইজমানি বাবদ কনমেবল খরচ করেছে মাত্র ২৩ মিলিয়ন ডলার, যা ইউরোর তুলনায় অনেক কম।