কপিরাইট (Copyright):
পৃথিবীর দেশে দেশে সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপি বা পুনরুৎপাদন, অবৈধ ব্যবহার ইত্যাদি বন্ধের জন্য যে আইনের বিধান রাখা হয়েছে, তাকে কপিরাইট আইন বলে। সম্পদ দু’ধরনের, বস্ত্তগত সম্পদ এবং মেধাসম্পদ। কপিরাইট আইন আছে মেধা সম্পদের জন্য। মেধা সম্পদের আওতায় আছে- গবেষণাকর্ম, সাহিত্যকর্ম, নাট্যকর্ম, শিল্পকর্ম, সঙ্গীতকর্ম, অডিও-ভিডিওকর্ম, চলচ্চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্যকর্ম, সম্প্রচারকর্ম, রেকর্ডকর্ম, সফট্ওয়্যার, ই-মেইল, ওয়েব-সাইট, বেতার ও টেলিভিশন সম্প্রচারকর্ম ইত্যাদি। World Intellectual Property Organization (WIPO) এর মতে, ‘Intellectual Property refers to creations of mind: Inventions, literary and artistic works, and symbols, names, images, and designs used in commerce’।
মানুষের বস্ত্তগত সম্পদ যেমন মালিক ছাড়া অন্য কেউ অনুমতি বা মূল্য পরিশোধ ব্যতীত ভোগ বা ব্যবহার করতে পারে না, মেধাসম্পদের ক্ষেত্রেও সে বিধান একইভাবে প্রযোজ্য। প্রতিটি মেধাকর্ম কপিরাইট আইনে গ্রন্থস্বত্ব বা লেখস্বত্ব দ্বারা রক্ষিত। মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে কপি করা বা নকল করা সহজ হয়েছে বলে, লেখকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৬৬২ সালে যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম কপিরাইট আইন চালু হয়। এ আইনে বিভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ বা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের আওতায় চলে আসে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সকল সৃজনশীল বা বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ ব্যবহার করার স্বাধীনতা থাকে।
পেটেন্ট (Patent):
পেটেন্ট হচ্ছে একচেটিয়া অধিকার, কোনো কিছু উদ্ভাবনের জন্য এটা অনুমোদন করা হয়। উদ্ভাবনটি হতে পারে একটি পণ্য বা একটি প্রক্রিয়া যা কোনো কিছু সম্পাদনের নতুন পদ্ধতি প্রদান করে বা কোনো সমস্যার নতুন কারিগরী সমাধান প্রস্তাব করে। একটি পেটেন্ট, এর মালিককে তার উদ্ভাবনের সুরক্ষা প্রদান করে। সীমিত সময়ের জন্য এই সুরক্ষা বলবৎ থাকে, সাধারণত ২০ বছর পর্যন্ত।
সাধারণত নতুন ও উপকারী যন্ত্রপাতি, শিল্পজাত দ্রব্য ও শিল্প প্রক্রিয়ার জন্য এবং বিদ্যমান যন্ত্রপাতি, দ্রব্য বা প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নসাধনের জন্য কৃতিস্বত্ব অনুমোদন করা হয়। এছাড়া নতুন রাসায়নিক যৌগ, খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ ও এগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্যও পেটেন্ট প্রদান করা হয়। কিছু কিছু রাষ্ট্রে বংশগতি প্রকৌশলকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ বা প্রাণীর জন্যও পেটেন্ট অনুমোদন করা হতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডব্লুটিও (WTO ) ট্রিপস (TRIPS) চুক্তির অধীনে, সংস্থার সদস্যদেশগুলিতে কোনও উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট পাওয়া যায়। যদিও দেশভেদে এবং কৃতিস্বত্বের বিষয়ের অনুযয়ী এটি পরিবর্তিত হতে পারে। ট্রিপস চুক্তি অনুযায়ী একটি পেটেন্টের সময়সীমা কমপক্ষে ২০ বছর হওয়া উচিত।
কপিরাইট এবং পেটেন্টের মধ্যে পার্থক্যঃ
পেটেন্ট হচ্ছে একচেটিয়া অধিকার, কোনো কিছু উদ্ভাবনের জন্য এটা অনুমোদন করা হয়। উদ্ভাবনটি হতে পারে একটি পণ্য। কপিরাইট এবং পেটেন্টের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। পৃথিবীর দেশে দেশে সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপি বা পুনরুৎপাদনের, অবৈধ ব্যবহার ইত্যাদি বন্ধনের জন্য যে আইনের বিধান রাখা হয় তাকে কপিরাইট (Copyright) আইন বা সংক্ষেপে কপিরাইট বলে। অন্যদিকে, পেটেন্ট হচ্ছে একচেটিয়া অধিকার, কোনো কিছু উদ্ভাবনের জন্য এটা অনুমোদন করা হয়।
২। সাধারণত একটি সীমিত সময়ের জন্য কপিরাইট কার্যকর হয়। অন্যদিকে, একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য পেটেন্ট দেয়া হয় যা পরে নবায়ন করা যায়।
৩। কপিরাইটের ক্ষেত্রে, এটি শুধুমাত্র স্রষ্টার মৃত্যুর পরে স্থানান্তর করা যাবে। অন্যদিকে, পেটেন্ট অন্য কোন স্থানান্তর বা বিক্রি করা যাবে আবিষ্কারক দ্বারা, পেটেন্টের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
৪। সৃষ্টির কপিরাইট সুরক্ষা মুহূর্তটি তৈরি হয় এবং সৃষ্টিকর্তার জীবদ্দশায় 50-70 বছর ধরে চলতে থাকে। অন্যদিকে, পেটেন্ট জারি করা হয়েছে এবং দেশের আইন অনুযায়ী 10-20 বছর ধরে চলতে থাকলেই একটি উদ্ভাবন সুরক্ষিত হয়।
৫। কপিরাইটের অর্থ আসল কাজটির স্রষ্টাকে দেওয়া এক প্রকার সুরক্ষা, যা অন্যকে কাজ সম্পাদন, বিক্রয় বা ব্যবহার থেকে বাদ দেয়। অন্যদিকে, পেটেন্ট বলতে উদ্ভাবককে মালিকানাধীন মালিকানাধীন অধিকারগুলি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য আবিষ্কার তৈরি, ব্যবহার বা বাণিজ্য থেকে অন্যকে বাদ দেয় না।
৬। কপিরাইট সৃজনশীল এবং বৌদ্ধিক রচনাগুলিকে সুরক্ষা দেয়, যা শৈল্পিক, সাহিত্যিক, বাদ্যযন্ত্র এবং নাটকীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত করে। এটি বিভিন্ন শ্রেণীর কাজের পার্থক্য করতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, ক পেটেন্ট সৌর প্যানেল, ইঞ্জিন, ব্যাটারি ইত্যাদির মতো অন্যদের দ্বারা ব্যবহৃত বা উত্পাদিত হওয়া থেকে নতুন আবিষ্কারগুলি রক্ষা করে