পরিমাণগত এবং পর্যায়গত উপযোগ দুটি ভিন্ন ধারণা। পরিমাণগত উপযোগ এবং পর্যায়গত উপযোগ এই দুটি পদের মধ্যে একটি গুরুত্বমূলক পার্থক্য রয়েছে। নিচে পরিমাণগত উপযোগ এবং পর্যায়গত উপযোগের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
পরিমাণবাচক উপযোগ (Cordinal Utility) :
ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের (Gossen, Jevone, Walras, Marshall) মতে, কোনো দ্রব্যের উপযোগ সংখ্যাগতভাবে পরিমাপ করা যায়। মূলত আলফ্রেড মার্শাল পরিমাণগত উপযোগ ধারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এ উপযোগ ধারণায় গাণিতিক সংখ্যা বিবেচনা করে তার ভিত্তিতে উপযোগ পরিমাপ করা হয়। সাধারণত 1, 2, 3… ইত্যাদি Cardinal সংখ্যা। এ সংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের যেকোনোটিকে অন্যটির অনুপাত হিসেবে এবং একটি সংখ্যা অন্যটির কতগুণ সেভাবেও প্রকাশ করা যায়। এ সংখ্যাগত উপযোগ ধারণা দ্বারা বিভিন্ন দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত উপযোগের মধ্যে তুলনা করা যায়। আবার একই দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগের মধ্যে তুলনা করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগ যোগ করে মোট উপযোগ নির্ণয় করা যায়।
পর্যায়গত উপযোগ (Ordinal Utility) :
উপযোগের পর্যায়গত পরিমাণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন Pareto, Antonelli, Fisher প্রমুখ অর্থনীতিবিদ। পরবর্তী সময়ে Prof. J. R. Hicks এবং R. G. D Allen এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট মতামত তুলে ধরেন। মার্শালের সংখ্যাগত উপযোগ ধারণাটির সমালোচনা করতে গিয়ে তাঁরা পর্যায়গত উপযোগ ধারণাটি প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে, উপযোগকে কখনও সংখ্যা দ্বারা গণনা করা উচিত নয়, বরং উপযোগকে পর্যায়গতভাবে বা বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করে পরিমাপ করা উচিত। সুতরাং ভোক্তার উপযোগকে যখন সংখ্যাগতভাবে প্রকাশ না করে শুধু তুলনা করা হয়, তখন তাকে পর্যায়গত উপযোগ বলে। সাধারণত 1st, 2nd, 3rd ইত্যাদি হল পর্যায়গত (ordinal) সংখ্যা।
পরিমাণগত উপযোগ এবং পর্যায়গত উপযোগের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. যখন উপযোগকে ১, ২, ৩ ইত্যাদি সংখ্যা দ্বারা পরিমাপ করা হয়, তখন তাকে পরিমাণগত উপযোগ বলা হয়। যখন উপযোগকে বিভিন্ন পর্যায়ে পরিমাপ করা হয়, তখন তাকে পর্যায়গত উপযোগ বলা হয়। যেমন- ১ম, ২য়, ৩য় কিংবা রোমান ও, ওও, ওওও সংখ্যা ইত্যাদি।
২. পরিমাণগত উপযোগ পদ্ধতিতে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগকে পরস্পর যোগ করে মোট উপযোগ পরিমাপ করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন দ্রব্য ভোগ থেকে পর্যায়গতভাবে উপযোগ পরিমাপ করা হলে তাকে পর্যায়গত উপযোগ বলে। পর্যায়গত উপযোগের মাধ্যমে কেবল ভোক্তার বিভিন্ন দ্রব্যের প্রতি অবস্থানগত পার্থক্য বিবেচনা করা যায় ।
৩. পরিমাণগত উপযোগ বলতে বোঝায় একটি বিষয়ে সর্বাধিক তথ্য, বা বিষয়ে সঠিক পরিমাপ, পরিস্থিতি অথবা পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে, পর্যায়গত উপযোগ হল বিষয়টি সাধারণভাবে প্রযুক্তির কার্যকারিতা বা ব্যবহারের পরিধি বা পরিস্থিতিতে পরিমাপ করা।
৪. পরিমাণগত উপযোগটি প্রায় যেকোনো বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বা গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন: পরিমাপ, গবেষণা ডেটা, সংখ্যানিক তথ্য, পরিসংখ্যান, পরিমাপ, ইত্যাদি। অন্যদিকে, পর্যায়গত উপযোগটি বিভিন্ন সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক, বা পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রযুক্তিগত বা সাংগঠনিক উন্নতি বা সংস্থানের সামর্থ্য নির্ধারণে ব্যবহৃত হতে পারে।
৫. পরিমাণগত উপযোগের সমর্থক- মার্শাল, জেভন্স, ওয়ালরাস প্রমুখ (ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ)। অন্যদিকে, পর্যায়গত উপযোগের মূল সমর্থক- অধ্যাপক জন হিকস্ এবং এ্যালেন।