সামাজিক পরিসংখ্যানের একাধিক চলকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সহসম্বন্ধ একটি বহুল ব্যবহৃত ও আলোচিত পরিসাংখ্যিক পদ্ধতি। দুটি চলক পরস্পরের মধ্যে কিভাবে একং কি পরিমাণে সম্পর্কযুক্ত সেটা সহসম্পর্ক নির্দেশ করে। সহসম্পর্ক ও নির্ভরণের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
সহসম্পর্ক(Correlation)
বাস্তবক্ষেত্রে আমাদেরকে দুই বা ততোধিক পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত চলক নিয়ে কাজ করতে হয়। যেমন- কোন শ্রেণির ছাত্রদের পরিসংখ্যান ও গণিত বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে পরষ্পর সম্পর্ককে পরিসংখ্যানের ভাষার সহসম্বন্ধ বলা হয়। সহসম্পর্ক একটি এককবিহীন সংখ্যা এবং এর মান +১ থেকে -১ পর্যন্ত হতে পারে, অর্থাৎ -১ ≤ r ≥ ১. যে পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে দুই বা ততোধিক রৈখিক স্বাধীন চলকের সম্পর্কের মাত্রা নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করতে পারি তাকে সহসম্পর্ক বিশ্লেষণ বলা হয়। সাধারণত ২(দুই) প্রকারের সহসম্পর্ক হতে পারে, যথা- ধনাত্মক সহসম্পর্ক এবং ঋণাত্মক সহসম্পর্ক। দুটি চলকের সহসম্পর্ক থাকলে এর সহগের মান -১ থেকে +১ পর্যন্ত হবে এবং সহসম্পর্ক না থাকলে এর মান শূন্য হবে।
নির্ভরণ (Regression) :
সহসম্পর্কের মাধ্যমে দুটি চলকের মধ্যে রৈখিক সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় এবং সম্পর্কের মাত্রা বের করা যায়। কিন্তু একটির পরিবর্তন অন্যটির ওপর কতটুকু নির্ভরশীল তা সহসম্পর্কের মাধ্যমে জানা যায় না। একটি চলকের একক পরিবর্তনের ফলে অন্যটির পরিবর্তনের হার কতটুকু তা জানা প্রয়োজন। নির্ভরণের মাধ্যমেই এই পরিবর্তনের হার সম্পর্কে জানা যায়। এক্ষেত্রে দুটি চলকের মধ্যে একটি নির্ভরশীল বা অধীন চলক এবং অন্যটি স্বাধীন চলক।
স্বাধীন চলকের মান পরিবর্তন করলে সাধারণত অন্যটির পরিবর্তন হয় এবং গড়পড়তা কী পরিবর্তন হবে তা নির্ভরণ দ্বারা নির্দেশিত। যেমন- কোন জমিতে সারের পরিমাণের পরিবর্তন করলে ঐ জমির ফসলের উৎপাদনের পরিবর্তন বাড়বে। বাবা-মার উচ্চতা বেশি হলে সন্তানের উচ্চতা বেশি হবে অর্থাৎ সন্তানের উচ্চতা বাবা-মার উচ্চতার সাথে সম্পর্কিত। এভাবে আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এসমস্ত উদাহরণে একটি চলকের পরিবর্তনের সাথে অন্যটির গড় পরিবর্তন কতটুকু তা জানার জন্যই নির্ভরণের প্রয়োগ করতে হয়।
সহসম্পর্ক ও নির্ভরণের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সহসম্পর্ক বলতে দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে রৈখিক সম্পর্ককে বুঝায়। অন্যদিকে, নির্ভরণ হচ্ছে একটি স্বাধীন চলকের ওপর আর একটি নির্ভরশীল চলকের নির্ভরণ।
২. সহসম্পর্কে চলকসমূহের সম্পর্কের কারণ ও প্রভাব বিশ্নেষণ করা হয় না শুধুমাত্র এদের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। অন্যদিকে, নির্ভরণের কাজই হলো চলকের সম্পর্কের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা অর্থাৎ স্বাধীন চলকের ভিন্ন মানের জন্য নির্ভরশীল চলকের গড় মান কত বাহির করা।
৩. সহসম্বন্ধ x এবং y দুটি চলক হলে x এর সাথে y এর সম্পর্কের সহগ এবং ণ এর সাথে ঢ এর সম্পর্কের সহগ সমান অর্থাৎ rxy = ryx. অন্যদিকে, নির্ভরণের X এবং Y দুটি চলক হলে X এর ওপর Y এর নির্ভরণের সহগ Y এর ওপর X এর নির্ভরণে সহগ সমান নয় অর্থাৎ bxy ≠ byx.
৪. সহসম্পর্কের সহগের মান – ১ থেকে +১ পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে, নির্ভরণ সহগের মান – α থেকে + α পর্যন্ত হতে পারে।
৫. সহসম্পর্কের সহগ মূল বিন্দু এবং মাপনীর ওপর স্বাধীন। অন্যদিকে, নির্ভরণের সহগ মূলবিন্দু পরিবর্তনের ওপর স্বাধীন কিন্তু মাপনীর ওপর নির্ভরশীল।
৬. সহসম্পর্কে ক্ষেত্রে X এবং Y দুটি দৈব চলক। অন্যদিকে, নির্ভরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নির্ভরশীল চলক X দৈব চলক। স্বাধীন চলক Y দৈব চলক নাও হতে পারে।