ঘূর্ণবাত (Cyclone):
ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে কোন নিম্নচাপ কেন্দ্রকে বেষ্টন করে যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কুণ্ডলীবদ্ধ কেন্দ্রমুখী এবং ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ বায়ু আবর্তনশীল হয়, তাকে ঘূর্ণবাত বলে। অর্থাৎ স্বল্প পরিসর স্থান কোনাে কারণে উয় হলে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। বায়ুচাপের সমতা রক্ষা করার জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্লের বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রে ধাবিত হয় ও কালক্রমে উর্ধ্বগামী হয়। এই বায়ুকে ঘূর্ণবাত বলে। ঘূর্ণবাতের সমগ্র এলাকায় বায়ুর চাপ কম থাকে। বিশেষ করে ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে চাপ সর্বনিম্ন হয়। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে এই চাপ 850-900 মিলিবারও হয়ে থাকে। ঘূর্ণবাতে বায়ুপ্রবাহের গতি ঘণ্টায় 20 কিমির কম হয় না এবং গতিবেগ 400 কিমি পর্যন্ত হতে পারে।
প্রত্যেক ঘূর্ণবাতে ঘূর্ণির একটি শীর্ষ থাকে। এই শীর্ষস্তর জেট বায়ুস্রোতের সঙ্গে যুক্ত হলে ঘূর্ণবাতের গতিপথ ওই বায়ুস্রোতের পথকে অনুসরণ করে। এ ছাড়া বায়ুর চাপ বলয়ের স্থানান্তরের ফলেও এর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। ঘূর্ণবাতের বায়ুপ্রবাহ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঘােরে, যথা :
(১) উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে অর্থাৎ বামাবর্তে এবং
(২) দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Anti-Cyclone)
কোনো স্থানে উষ্ণতা হ্রাসের ফলে শীতলতার কারণে প্রবল উচ্চচাপ সৃষ্টি হলে ঐ উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে বাইরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে কুন্ডলাকারে বর্হিগামী বায়ুপ্রবাহ প্রবাহিত হয় , তাকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। অর্থাৎ হিমমণ্ডল এবং নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডলের অন্তর্গত অল্প পরিসর স্থানের বায়ু শীতল হয়ে উচ্চচাপ কেন্দ্র গঠিত হলে সেখান থেকে বায়ু নিম্নগামী ও বহির্মুখী হয়ে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপের দিকে যায়। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। ঘূর্ণবাত উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে অর্থাৎ বামাবর্তে অগ্রসর হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ এবং বাইরের দিকে থাকে নিম্নচাপ। এর কেন্দ্র ও বহির্ভাগে বায়ুচাপের পার্থক্য থাকে প্রায় 10 থেকে 20 মিলিবার। প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ুর গতিবেগ কম হয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান এবং প্রতীপ ঘূর্ণবাত দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। তাছাড়া প্রতীপ ঘূর্ণবাতে মেঘ সৃষ্টি হয় না। ফলে বায়ু শুষ্ক ও আকাশ পরিষ্কার থাকে।
ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্যঃ
ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে কোন নিম্নচাপ কেন্দ্রকে বেষ্টন করে যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কুণ্ডলীবদ্ধ কেন্দ্রমুখী। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
১। নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঝরকে ঘূর্নবাত বা সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, উচ্চচাপ বিশিষ্ট অঞ্চল থেকে বর্হিমুখী বায়ু প্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্নবাত বলে।
২। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে নিম্নচাপ। অন্যদিকে, প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ।
৩। ঘূর্ণবাতের বায়ু চারদিক থেকে কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। অন্যদিকে, প্রতীপ ঘুর্ণবাতে বায়ু কেন্দ্র থেকে চারদিকে প্রবাহিত হয়।
৪। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের বায়ু উষ্ণ ও ঊর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে, প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বায়ু শীতল ও অধােমুখী।
৫। উত্তর গােলার্ধে বায়ু বামাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে। বায়ু দক্ষিণাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বায়ু বামাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে প্রবাহিত হয়।
৬। মাঝারি থেকে তীব্র গতিসম্পন্ন। অন্যদিকে, ধীর গতিসম্পন্ন।
৭। ঘূর্ণবাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বৃষ্টি হয় না। আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
৮। আকাশ মেঘে পরিপূর্ণ থাকে। অন্যদিকে, মেঘের কোনাে চিহ্ন থাকে না। আকাশ রােদে ঝলমল করে।
৯। অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। তবে খুব শক্তিশালী ও বিধ্বংসী। অন্যদিকে, দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। তবে ঘূর্ণবাতের মতাে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হয় না।