ঋণ মূলধন (Debt Capital) :
ঋণ মূলধন বলতে এমন মূলধনকে বোঝায় যা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি উৎস হতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত দেওয়ার শর্তে ঋণ নেওয়া হয়। এই ঋণ স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী উভয়ই হতে পারে। গৃহীত ঋণের বিপরীতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করতে হয়। এর ফলে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কখনো কখনো জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, বিশেষত যখন সুদের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে। একটি কোম্পানিকে আইনতভাবে এর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বণ্টনের পূর্বে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়। যার ফলে বার্ষিক আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে ঋণ মূলধন পরিশোধ সর্বাপেক্ষা প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
ঋণ মূলধন একটি ব্যবসায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হতে পারে। এটি একটি ব্যবসায়ের জন্য দ্রুত অর্থায়ন পেতে এবং ঋণগ্রহীতার নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে অর্থায়ন পেতে একটি ভাল উপায় হতে পারে। তবে, ঋণ মূলধনের সাথে দীর্ঘমেয়াদী দায়বদ্ধতা এবং সুদ ব্যয়ের মতো কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
ইক্যুইটি মূলধন (Equity Capital) :
ইক্যুইটি মূলধন হল একটি ব্যবসায়ের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগ। এটি একটি ব্যবসায়ের জন্য মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণের একটি অংশ। ইক্যুইটি মূলধনের উৎস হল শেয়ারহোল্ডাররা, যারা ব্যবসায়ের মালিক। ইক্যুইটি মূলধনের ব্যয় নির্ণয় করা তুলনামূলক কঠিন। ইক্যুইটি মূলধন ঋণ মূলধনের মত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার প্রয়োজন হয় না। তবে শেয়ার বাজারে শেয়ারে পারফর্মেন্স ও শেয়ারে মূল্যের ওঠা-নামার উপর ভিত্তি করে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগের জন্য মুনাফার একটি অংশ পেয়ে থাকেন। বিনিয়োগকারীরা যাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে নিয়মিত বিনিয়োগ করে সেজন্য কোম্পানিগুলোতে শেয়ার মূল্যের যথাযথ মূল্যায়ন ও লভ্যাংশ প্রদানের মাধ্যমে নিয়মিত আয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাশিত আয়ের হার বা ইক্যুইটি মূলধনের ব্যয় নির্ণয়ের জন্য ক্যাপিটাল এসেট প্রাইজিং মডেল (CAPM) ব্যবহার করা হয়।
ইক্যুইটি মূলধন একটি ব্যবসায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হতে পারে। এটি একটি ব্যবসায়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা প্রদান করতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি ছাড়াই অর্থায়ন পেতে একটি ভাল উপায় হতে পারে। তবে, ইক্যুইটি মূলধনের সাথে শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি এবং শেয়ারহোল্ডারদের সাথে ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়ার মতো কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
ঋণ মূলধন ও ইক্যুইটি মূলধনের মধ্যে পার্থক্যঃ
ঋণ মূলধন এবং ইক্যুইটি মূলধন হল একটি ব্যবসায়ের জন্য দুটি প্রধান ধরনের মূলধন। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যামান। ঋণ মূলধন ও ইক্যুইটি মূলধনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। ঋণ মূলধন হল একটি ব্যবসায়ের জন্য দেওয়া ঋণ, যেমন ব্যাংক ঋণ বা বন্ড। অন্যদিকে, ইক্যুইটি মূলধন হল একটি ব্যবসায়ের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগ।
২। ঋণ মূলধন হল একটি দেওয়া ঋণ, তাই ব্যবসায়ের ঋণদাতাদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে, ইক্যুইটি মূলধন হল শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগ, তাই ব্যবসায়ের শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে।
৩। ঋণ মূলধনের জন্য সাধারণত সুদ প্রদান করতে হয়। অন্যদিকে, ইক্যুইটি মূলধনের জন্য সাধারণত সুদ প্রদান করতে হয় না।
৪। ঋণ মূলধন সাধারণত মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, যার অর্থ ঋণদাতাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে, ইক্যুইটি মূলধন সাধারণত মেয়াদোত্তীর্ণ হয় না, যার অর্থ শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ কখনই ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা পায় না।
৫। ঋণ মূলধন একটি ব্যবসায়ের জন্য দ্রুত অর্থায়ন পেতে একটি ভাল উপায় হতে পারে, তবে এটি ব্যবসায়ের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী দায়বদ্ধতাও তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, ইক্যুইটি মূলধন একটি ব্যবসায়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা প্রদান করতে পারে, তবে এটি ব্যবসায়ের জন্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষতিও করতে পারে।