ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমারস শব্দদুটোকে প্রায়ই পরস্পরের বদলে ব্যবহার করতে শুনেছেন এবং প্রতিটি শব্দের অর্থ আসলে কী তা নিয়ে বিভ্রান্তিতেও ভুগেছেন। ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমারের মধ্যে লক্ষন ও বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমারের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
ডিমেনশিয়া (Dementia) :
যখন একজন ব্যক্তির মানসিক সক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে, তিনি আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না তখন তাকে ডিমেনশিয়া বলে। ডিমেনশিয়া হলে মানুষের স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করার সক্ষমতা, যুক্তি-বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ডিমেনশিয়ার নানা প্রকার রয়েছে। যার প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট ধরণের মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত, যা থেকে তাদের উপসর্গের ধরনও নির্ধারণ হয়। ডিমেনশিয়াকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। তবে কিছু কিছু ডিমেনশিয়া দুই ভাগেই পড়ে:
১. কর্টিকাল ডিমেনশিয়া, যা গুরুতরভাবে স্মৃতিশক্তি ধ্বংস করে (আলঝেইমারস এর ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যায়)।
২. সাব-কর্টিক্যাল ডিমেনশিয়া, যা চিন্তার গতি এবং কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে (পারকিনসন রোগের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়)।
আলঝেইমারস ছাড়া ডিমেনশিয়ার অন্য সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া। তবে এই দুটি রোগ ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না। ডিমেনশিয়ার অন্যান্য সাধারণ রূপগুলো হল ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া। এটি বেশিরভাগই ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। মস্তিষ্কে প্রোটিন জমাট বাধার কারণে এক ধরনের ডিমেনশিয়া হয়। যার ফলে স্নায়ুগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ডিমেনশিয়া একসময় চরম আকার ধারন করে।
আলঝেইমারস (Alzheimer’s) :
আলঝেইমারস হল ডিমেনশিয়ার একটি বিশেষ রূপ। এটি মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ। মগজের কোষেগুলোতে ক্ষয়ের পর মস্তিষ্কের জটিল পরিবর্তনের কারণে এই রোগ হয়। উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন জট লেগে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ঘিরে ফেলে, এবং অনেক কোষের ক্ষয় ও মৃত্যু ঘটে। যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাধারণত মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলের কোষগুলো দেখা দেয় এই সমস্যা। হিপ্পোক্যাম্পাস হল শেখার এবং স্মৃতির কেন্দ্র। যার ফলে স্মৃতিশক্তি দূর্বল হয়ে আসে। আলঝেইমারস থেকে ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দেয়। যেমন, শর্ট-টার্ম মেমোরি বা অল্প সময়ের মধ্যেই কোনো কিছু ভুলে যাওয়া, বিল পরিশোধ করা বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট মনে রাখতে না পারা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো আরও খারাপ হয়ে উঠে। রোগী সঠিকভাবে কথা বলতে বা লিখতে, পোশাক পরার মতো দৈনন্দিন কাজগুলো করতে বা আত্মীয় স্বজনদের মনে রাখার ক্ষমতা হারাতে পারে। আলঝেইমারসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সহজেই বিভ্রান্ত এবং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং কখনও কখনও রাগ দেখানো বা হিংসাত্মক আচরণ করতে পারে।
ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমারের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. যখন একজন ব্যক্তির মানসিক সক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে, তিনি আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না তখন তাকে ডিমেনশিয়া বলে। অন্যদিকে, আলঝেইমারস হল ডিমেনশিয়ার একটি বিশেষ রূপ। এটি মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ।
২. ডিমেনশিয়া একটি সাধারণ শব্দ, যা দিয়ে একজন ব্যক্তির সার্বিক মানসিক সক্ষমতার অবনতিকে বুঝায়। নানা কারণে এই মানসিক সক্ষমতার অবনতি হয়। যার মধ্যে একটি হল আলঝেইমারস, যা ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ।
৩. আলঝেইমারস হল স্মৃতিভ্রংশ। অন্যদিকে, ডিমেনশিয়া সার্বিকভাবে বুদ্ধির বৈকল্য বা মস্তিষ্কের সক্ষমতা কমে যাওয়াকে বোঝায়।
৪. ৬০-৮০% ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী এই আলঝেইমারস। যে কারণে কখনও কখনও ডিমেনশিয়া আর আলঝেইমারসকে একই মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবে আলঝেইমারস হল ডিমেনশিয়ার একটি বিশেষ রুপ।
৫. মস্তিষ্কে প্রোটিন জমাট বাধার কারণে এক ধরনের ডিমেনশিয়া হয়। যার ফলে স্নায়ুগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ডিমেনশিয়া একসময় চরম আকার ধারন করে। অন্যদিকে, আলঝেইমারস উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন জট লেগে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ঘিরে ফেলে, এবং অনেক কোষের ক্ষয় ও মৃত্যু ঘটে। যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।