ডিপােজিট (Deposit):
ডিপােজিট এর বাংলা অর্থ অন্যের নিকট গচ্ছিত বা জমা রাখা। ডিপােজিট বলতে বুঝায় কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদের জন্য জমা রাখার নাম ডিপােজিট। ডিপােজিট একাউন্ট ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব যেকোন বাংলাদেশী নাগরিক হিসাব খুলতে পারেন। ডিপােজিটের ক্ষেত্রে এককালীন নির্দিষ্ট টাকা জমা রাখতে হয়। ডিপােজিট এর মেয়াদকাল সাধারণত ১মাস থেকে শুরু করে ৫ ও ১০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা ব্যাংকভেদে ভিন্ন হতে পারে।
আমানতের পরিমাণ সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা জমা রাখতে হয়। এটা ব্যাংকভেদে ভিন্ন হতে পারে। ডিপােজিটে ডিপিএস থেকে মুনাফার হার বেশি। ডিপােজিটের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণের কোন উর্ধ্বসীমা থাকে না।
ডিপিএস (DPS):
ডিপিএস ডিপিএস হল ডিপােজিট পেনশন স্কিম। মাসিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখাকেই ডিপিএস বলে। ডিপিএস একাউন্ট ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব যেকোন বাংলাদেশী নাগরিক এবং নাবালকের সাথে যৌথভাবে পিতা বা মাতা অথবা আইনগত অভিভাবক নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই হিসাব খুলা যায়। ডিপিএস এ মাসিক কিস্তিতে টাকা জমা রাখা যায়। এই হিসাবের উপর কিছু ব্যাংক মাসিক, ত্রৈমাসিক বা ছয় মাসিক অন্তর অথবা বাৎসরিক সুদ দিয়ে থাকে।
কিছু ব্যাংক সুদ বা মুনাফার ওপর উৎসে আয়কর কেটে রাখে, আবার কিছু ব্যাংক প্রতিবছর সুদ বা মুনাফা প্রদান করে কিন্তু উৎসে আয়কর কেটে না রাখে মেয়াদ শেষে ভাঙানোর সময় উৎসে আয়কর কেটে রাখে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে:
১. বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যাবে।
২. যদি প্রতিবছর মুনাফা বা সুদের ওপর উৎসে আয়কর কেটে রাখে, তাহলে মোট (গ্রস) সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎসে আয় হিসাবে দেখাতে হবে এবং বছর শেষে স্থিতি সম্পদ বিবরণীতে দেখাতে হবে।
৩. মুনাফা ব্যাংক বিবরণীতে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু উৎসে আয়কর কেটে রাখছে না। এ ক্ষেত্রে শুধু সম্পদ বিবরণীতে যে পরিমাণ টাকা জমা দেখানো হচ্ছে, সে পরিমাণ টাকা সম্পদ বিবরণীতে আগের বছর জমা দেখানো থাকলে তার সঙ্গে যোগ করে এবার দেখাতে হবে। যে বছরর মেয়াদপূর্তি বা ভাঙানো হবে, সে বছর পুঞ্জীভূত মুনাফা অন্যান্য উৎসের আয় হিসাবে দেখাতে হবে।
৪. প্রতিবছরের ব্যাংক বিবরণী নিতে হবে এবং ভাঙানোর সময় সার্টিফিকেট নিতে ভুল করা যাবে না।
ডিপোজিট ও ডিপিএস এর মধ্যে পার্থক্যঃ
ডিপোজিট ও ডিপিএস এর মধ্যে অনেকাংশ মিল থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে। ডিপোজিট ও ডিপিএস এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। ডিপােজিট এর বাংলা অর্থ অন্যের নিকট গচ্ছিত বা জমা রাখা। ডিপােজিট বলতে বুঝায় কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদের জন্য জমা রাখার নাম ডিপােজিট। অন্যদিকে, ডিপিএস ডিপিএস হল ডিপােজিট পেনশন স্কিম। মাসিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখাকেই ডিপিএস বলে।
২। ডিপোজিট টাকার উপর ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস, ১২ মাস, ২৪ মাস অথবা ৩৬ মাস পরপর মুনাফা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদিকে, ডিপিএস এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কোন মুনাফা পাওয়া যায় না। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ভাঙ্গলে আংশিক মুনাফা পাওয়া যায়।
৩। প্রয়োজনে ডিপোজিট এর উপর লোন নেওয়া যায়। অন্যদিকে, ডিপিএস এ জমাকৃত টাকার উপর ৯০% পর্যন্ত লোন নেওয়া যায়।
৪। নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে ডিপোজিট ভাঙ্গানো যায়। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিয়মানুসারে মুনাফার কিছু অংশ ফেরত দিতে হবে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে ডিপিএস ভাঙ্গানো যায়। তবে এক্ষেত্রে মুনাফা আংশিক পাওয়া যায়।
৫। ডিপোজিট ভাঙ্গালে মুনাফা থেকে ১০% অথবা ১৫% ট্যাক্স কর্তন করা হয়। অন্যদিকে, ডিপিএস ভাঙ্গালে মুনাফা থেকে ১০% অথবা ১৫% ট্যাক্স কর্তন করা হয়।
৬। ডিপোজিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেটাকে আবার নতুনভাবে বিনিয়োগ করা যায়। টার্ম ডিপোজিটের ক্ষেত্রে এটা করা হয়। অন্যদিকে ডিপিএস এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভেঙ্গে নিতে হয়।
৭। ডিপোজিটের পরিবর্তে লোন নিলে সেই লোনের মুনাফার হার ডিপোজেটের প্রযোজ্য মুনাফার হারের চাইতে ১ থেকে ২ শতাংশ বেশী হয়। অন্যদিকে, ডিপিএসের জমা হওয়া টাকার উপর লোন নিলে সেই লোনের মুনাফার হার ডিপিএসের প্রয়োজ্য হারের চাইতে ১ থেকে ২ শতাংশ বেশী হয়।
৮। ডিপোজিটের টাকা এককালীন জমা দিতে হয় বিধায় একাউন্ট জন্ধ হওয়ার কোন উপক্রম নেই। অন্যদিকে, ডিপিএস এর কিস্তি পর পর ৩টি দিতে ব্যর্থ হলে একাউন্ট সাময়িক বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যায়। পুনরায় ব্যাংকে গিয়ে কিছু জরিমানা দিয়ে আবার নিয়মিত করত হয়।