ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (Digital Security Act ) :
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ হল একটি বাংলাদেশি আইন যা ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করে। এই আইনটি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস হয়। যেমন, এ আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হয়েছে- ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা বলতে কী বোঝায় সেটির সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা আইনটিতে নেই। প্রশ্ন হতে পারে, তাতে ক্ষতিটা কিসের? ক্ষতি হল, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে বিধিবিধান দরকার, সেটিও এই আইনে অনুপস্থিত।
মোটের ওপর বলা যায়, ‘তথ্যের অবাধ আদান-প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্যের যথাযথ গোপনীয়তা (Confidentiality), সঠিকতা (Integrity), প্রাপ্যতা (Availability) ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যকে সুসংহত করতে গিয়ে যে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির কারিগরি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Technical control) এবং পদক্ষেপ (Measure) দরকার, সেটিই হল ডিজিটাল সিকিউরিটি’।
এই আইনের উদ্দেশ্য হল ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করা। এই আইনে মোট ৪০টি ধারা রয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন (Cyber Security Act) :
সাইবার নিরাপত্তা আইন হল এমন একটি আইন যা সাইবার পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সাইবার পরিবেশে ডিজিটাল তথ্য, ডিজিটাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত। সাইবার নিরাপত্তা আইন সাইবার হামলা, সাইবার অপরাধ এবং সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য হল:
i. সাইবার পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ii. সাইবার হামলা এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করা।
iii. সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস করা।
iv. সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলা করা।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে:
i. সাইবার হামলা এবং সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা।
ii. সাইবার হামলা এবং সাইবার অপরাধের শাস্তি।
iii. সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন।
iv. সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থা।
v. সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলা ব্যবস্থা।
ডিজিটাল ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে পার্থক্যঃ
ডিজিটাল এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন উভয়ই ডিজিটাল তথ্য এবং সিস্টেমগুলিকে সুরক্ষিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই দুটি আইনের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাধারণত ডিজিটাল তথ্যের গোপনীয়তা, অখণ্ডতা এবং প্রাপ্যতা রক্ষার উপর ফোকাস করে। এটি ডিজিটাল তথ্যের ক্ষতি, হুমকি বা অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উপরে নির্ভর করে, তবে এটি সাইবার পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপরও ফোকাস করে। সাইবার পরিবেশে ডিজিটাল তথ্য, ডিজিটাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত।
২। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল তথ্যের গোপনীয়তা, অখণ্ডতা এবং প্রাপ্যতা রক্ষার উপর ফোকাস করে। অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল তথ্যের পাশাপাশি সাইবার পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপরও ফোকাস করে।
৩। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল তথ্যের ক্ষতি, হুমকি বা অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইন সাইবার হামলা এবং সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৪। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- ডিজিটাল তথ্যের নিয়মিত ব্যাকআপ নেওয়া, ডিজিটাল তথ্যে অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল তথ্যের জন্য সফ্টওয়্যার হালনাগাদ, ডিজিটাল তথ্যের জন্য নিরাপদ নেটওয়ার্ক এবং ডিজিটাল তথ্যের জন্য নিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন।
অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- সাইবার হামলা থেকে রক্ষা, সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির মূল্যায়ন, সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস এবং সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলা।