প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র (Direct Democracy) :
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার বা শাসনব্যবস্থা গঠন করা হয় তা’ হচ্ছে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে বোঝায় এমন এক সরকারকে যেখানে দেশের সকল নাগরিক সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণপূর্বক শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। বর্তমানে রাষ্ট্রের পরিধি ও জনসংখ্যার আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বেশ জটিল ও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বর্তমানকালে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পৃথিবীর খুব একটা বেশি দেশে দেখা যায় না। তবে সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি প্রদেশে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে।
পরোক্ষ গণতন্ত্র (Indirect Democracy) :
যে গণতন্ত্রে পরোক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সরকার নির্বাচন করে তাকে পরোক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলা হয়। অর্থাৎ পরোক্ষ গণতন্ত্র বলতে বোঝায় সেই ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিগণ শাসনকার্য পরিচালনা করে। প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করা হয় বিধায় এর অপর নাম প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র।
এ জাতীয় শাসনব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন না করে নিজ নিজ এলাকায় প্রতিনিধি নির্বাচন করে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। এ জন্যেই একে পরোক্ষ গণতন্ত্র বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি রাষ্ট্রে এ ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের পার্থক্যঃ
গণতন্ত্র অর্থ জনগণের সরকার। গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এর উপর ভিত্তি করে গণতন্ত্রকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরােক্ষ গণতন্ত্র। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার বা শাসনব্যবস্থা গঠন করা হয় তা’ হচ্ছে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। অন্যদিকে, যে গণতন্ত্রে পরোক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সরকার নির্বাচন করে তাকে পরোক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলা হয়।
২. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রকে সরকারের ব্যবস্থা বলা যেতে পারে, যেখানে আইনের প্রয়োগ কার্যকর করা সম্ভব হয় সকল নাগরিকের সাধারণ ভোটের মাধ্যমে। অন্যদিকে, পরোক্ষ গণতন্ত্র এমন একটি সরকারী রূপ যেখানে জাতির নাগরিকরা এজেন্টদের ভোট দেয় যাদের ক্ষমতা দেওয়া হয় তাদের পক্ষ থেকে চয়ন করুন।
৩. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সরকারী নীতি, আইন এবং অন্যান্য ইস্যু সম্পর্কিত পছন্দগুলি জনগণ গ্রহণ করে। অন্যদিকে, পরোক্ষ গণতন্ত্রে থাকাকালীন জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে আইন ও নীতি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
৪. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে পুরো সম্প্রদায় আইনসভা গঠন করে। অন্যদিকে, পরোক্ষ গণতন্ত্রে বিজয়ী দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করেন এবং আইনসভার অংশ হন।
৫. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র শুধুমাত্র ক্ষুদ্রায়তন ও সংখ্যালঘু রাষ্ট্রেই সম্ভব। অন্যদিকে, বৃহদায়তন ও জনবহুল রাষ্ট্রে পরােক্ষ গণতন্ত্র বিশেষ উপযােগী এবং কাম্য।