দান এবং সদকা মূলত একই জিনিস। আরবিতে সদকা আর বাংলায় দান। ‘সদকা’ -এর আক্ষরিক অর্থ ‘ন্যায়পরায়ণতা’ এবং দানকে বোঝায়। ইসলামী পরিভাষায়; সদকাকে ‘বিনিময়ে কোন কিছু না চেয়ে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে কাউকে কিছু দেওয়া’ বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও, আর-রাগিব আল-আসফাহানির মতে ‘সদকা হল যাকাতের মতো, আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার আশায়, ব্যক্তির যা কিছু আছে তা থেকে দেয়াকে সদকা বলে।’
‘সদকাহ’ শব্দটি আরবি মূল শব্দ ‘সিদক’ (আরবি: ص د ق) থেকে এসেছে, যার অর্থ আন্তরিকতা; এটি আন্তরিক বিশ্বাসের চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হয়। এই শব্দটি তিন অক্ষরের মূল ص د ق থেকে এসেছে, যার অর্থ, ‘সত্য কথা বলা, আন্তরিক হওয়া’ এবং ‘কারও প্রতিশ্রুতি পালন করা।’ দান-সদকার বিশেষ ফজিলত রয়েছে, পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ -(সুরা বাকারা: ২৭৪)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক ভালো। -(সুরা আল বাকারা: ২৭১)
আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে দানের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আমার যে বান্দারা ঈমান এনেছে, তাদের বলে দিন— তারা যেন সালাত আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; এমন দিন আসার আগে— যখন কোনো ক্রয়-বিক্রয় কিংবা বন্ধুত্ব থাকবে না।’ (সুরা ইবরাহিম, হাদিস : ৩১)
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খেজুরের এক টুকরা দিয়ে হলেও (দান করে) নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫১২)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন দুনিয়ার কোনো বন্ধুত্ব বা ক্রয়-বিক্রয় কোনো কাজে আসবেনা। এগুলোর মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করা যাবে না। একমাত্র নেক আমল সেদিন আল্লাহর মেহেরবানি ও রহমতের আহ্বায়ক হবে। আর আল্লাহর রহমত হলেই কেবল বাঁচা যাবে। আর সেই রহমত পাবার অন্যতম মাধ্যম হলো- দান-সদকা করা। যদি বেশি সামর্থ্য না থাকে, তাহলে অল্প হলেও করতে হবে। একটা আস্ত খেজুর দিতে না পারলে, অর্ধেক দান করা হোক— তবুও দান করা জরুরি।