নাটক এবং প্রহসন দুটোই মঞ্চে অভিনীত শিল্পকলা, তবে তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে নাটক ও প্রহসনের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
নাটক (Drama)
নাটক হলো মানুষের গতিশীল জীবনের প্রতিচ্ছবি। নাটক সংলাপ নির্ভর বাস্তবসম্মত জীবনকাহিনির রূপায়ণ। নাটকের সাথে মঞ্চের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নাটক জীবনেরই একরকম কাব্যিক প্রকাশ। অভিনয় কুশলতাই নাটকের প্রাণ। পাত্র-পাত্রীর অভিনয়ে ফুটে উঠে মানবজীবনের ঘটনাবহুল বিচিত্র পটভূমি। রস ভাব ব্যঞ্জন সহযোগে আনন্দদান নাটকের উদ্দেশ্য। নাটকে সুসংবদ্ধ কাহিনি, জীবনবাস্তবতা, পরিবেশ পরিস্থিতি হবে জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। স্থান, কাল ও ঘটনার ঐক্য নাটকের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। সাধারণত পাঁচ অঙ্কে বিভাজিত হয় নাটক।
প্রহসন (Comedy) :
প্রহসন একপ্রকার নাট্য সৃষ্টি যেখানে হাস্যরসময় জীবনের আলেখ্য রূপায়িত হয়। সমাজের কুরীতি সংশোধনের জন্য রহস্যময় ঘটনা সংবলিত হাস্যপ্রধান একাঙ্কিকা নাটককে প্রহসন বলে। নানাবিধ সামাজিক সমস্যা, প্রাচীনপন্থি ও নব্য সমাজের মানুষের চারিত্রিক অসঙ্গতিই প্রহসনের বিষয়। উনিশ শতকের গদ্যসাহিত্যে যে ব্যঙ্গাত্মক নকশা জাতীয় রচনার সৃষ্টি হয়েছিল, মনে হয় নাটকের আঙ্গিকে সেই জাতীয় বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা থেকেই প্রহসনের জনন্ম।
এতে চরিত্রের চেয়ে ঘটনা বিন্যাসের দিকে বেশি দৃষ্টি দেওয়া হয়। প্রহসনের মূল উদ্দেশ্য সমাজের নানান অসঙ্গতি, উচ্ছৃঙ্খলতা, কুপ্রথা, অনাচার ইত্যাদিকে ব্যঙ্গাত্মক রসঘন উপস্থাপনায় তুলে ধরা। রামনারায়ণ তর্করত্ন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, মীর মশাররফ হোসেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ বাংলা প্রহসনের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
নাটক ও প্রহসনের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. নাটক হলো মানুষের গতিশীল জীবনের প্রতিচ্ছবি। নাটক সংলাপ নির্ভর বাস্তবসম্মত জীবনকাহিনির রূপায়ণ। অন্যদিকে, সমাজের কুরীতি সংশোধনের জন্য রহস্যময় ঘটনা সংবলিত হাস্যপ্রধান একাঙ্কিকা নাটককে প্রহসন বলে।
২. নাটকের পরিসর বিস্তৃত। অন্যদিকে, প্রহসনের পরিসর সীমিত।
৩. নাটক জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনির বর্ণনা। অন্যদিকে, প্রহসন উদ্দেশ্যমূলক রচনা।
৪. নাটকে যেকোনো রস থাকতে পারে। অন্যদিকে, প্রহসন সাধারণত ব্যঙ্গরসাশ্রিত।
৫. নাটকে মানবজীবনের বিচিত্র বিষয় তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে, প্রহসনে সমাজ সংশোধনের জন্য কিছু চরিত্র তুলে ধরা হয়।
৬. নাটক সাধারণত পাঁচ অঙ্ক বিশিষ্ট। অন্যদিকে, প্রহসন এক অঙ্ক বিশিষ্ট।