ভূত্বক (Earths Crust):
পৃথিবীর সবচেয়ে বহির্ভাগের কঠিন, হালকা ও পাতলা শিলা দ্বারা গঠিত স্তর টিকে ভূত্বক বলে। অর্থাৎ ভূত্বকের নীচ থেকে কেন্দ্র মন্ডলের উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের অংশ কে গুরু মন্ডল বলে। ভূত্বক হল পৃথিবীর বাইরের দিকের একটি পাতলা আবরণ, যা পৃথিবীর আয়তনের ১% এরও কম অংশ জায়গা দখল করে আছে। এটি অশ্মমণ্ডলের উপরের অংশ। অশ্মমণ্ডল ভূত্বকীয় পাতে বা টেকটোনিক প্লেটে বিভক্ত, পাত বা প্লেটগুলো চলমান। এর মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরের তাপ মহাকাশে মুক্ত হতে পারে।
ভূত্বক ম্যান্টলের ওপরে অবস্থিত। এই অবস্থানটি স্থিতিশীল কারণ উপরি ম্যান্টলটি পেরিডোটাইট দিয়ে তৈরি এবং তাই ভূত্বকের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ঘন। পৃথিবীর ভূত্বকে দুটি স্বতন্ত্র ধরন আছে। যথা-
১। মহাসাগরীয়: ৫ কিমি থেকে ১০ কিমি পুরু এবং মূলত আরও ঘন, অধিকাংশ ম্যাফিক শিলা, যেমন বেসাল্ট, ডায়াবেস এবং গ্যাব্রো দিয়ে গঠিত।
২। মহাদেশীয়: ৩০ কিমি থেকে ৫০ কিমি পুরু এবং প্রধানত কম ঘনত্বের অধিকাংশ ফেলসিক শিলা, যেমন গ্রানাইট দ্বারা গঠিত।
গুরুমন্ডল (Bryosphere):
ভূত্বক বা শিলামন্ডলের নিচে 2900 কিমি গভীরতা পর্যন্ত যে অঞ্চলে সিলিকন, লোহা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি অর্ধতরল বা স্থিতিস্থাপক অবস্থায় রয়েছে তাকে গুরুমন্ডল বলে। অর্থাৎ গুরুমণ্ডল শিলামণ্ডলের নীচে অর্থাৎ ৩৫ কিমি গভীরতা থেকে প্রায় ২,৯০০ কিমি গভীর পর্যন্ত গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল বা ব্যারিস্ফিয়ারের (Mantle/Barysphere) ব্যাপ্তি। লােহা, কার্বন, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পদার্থগুলি এখানে ভূ-অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপ ও তাপের ফলে তরল অবস্থায় রয়েছে। উপাদান ও অবস্থান অনুসারে গুরুমন্ডল দুটি ভাগে বিভক্ত, যথা-
১। বহিঃগুরুমন্ডল-কার্বন সিলিকন ও লৌহ দ্বারা গঠিত এই স্তরটি 30-700 কিমি গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্রোমিয়াম (Cr), লোহা (Fe), সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Mg) এই স্তরের প্রধান উপাদান বলে একে ক্রোফেসিমা বলা হয়।
২। অন্তঃগুরুমন্ডল👉🏻সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ ও নিকেল দ্বারা গঠিত এই স্তরটি 700-2900 কিমি গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত।নিকেল (Ni), লোহা (Fe) সিলিকন( Si) ও ম্যাগনেসিয়াম(Mg) এই স্তরের প্রধান উপাদান বলে একে নিফেসিমা বলা হয়।
ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের মধ্যে পার্থক্যঃ
পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ কে তিনটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা – ভূত্বক, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্র মন্ডল। ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হলো-
১। পৃথিবীর সবচেয়ে বহির্ভাগের কঠিন, হালকা ও পাতলা শিলা দ্বারা গঠিত স্তর টিকে ভূত্বক বলে। অন্যদিকে, শিলামন্ডলের নিচে 2900 কিমি গভীরতা পর্যন্ত যে অঞ্চলে সিলিকন, লোহা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি অর্ধতরল বা স্থিতিস্থাপক অবস্থায় রয়েছে তাকে গুরুমন্ডল বলে।
২। ভূত্বকের গড় গভীরতা প্রায় 30 থেকে 40 কিমি। অন্যদিকে, গুরুমণ্ডল ভূত্বকের নিম্ন সীমা থেকে প্রায় 2900 কিমি গভীর।
৩। ভূত্বকের গড় ঘনত্ব প্রায় 2.7-2.9 গ্রাম। অন্যদিকে, গুরুমণ্ডলের গড় ঘনত্ব প্রায় 4.6 গ্রাম/ঘনসেমি।
৪। ভূত্বক কে দুটি উপস্তরে ভাগ করা হয়। যথা: মহাদেশীয় ভূত্বক ও মহাসাগরীয় ভূত্বক। অন্যদিকে, গুরুমন্ডল কে দুটি স্তরে ভাগ করা হয়। যথা: ঊর্ধ্ব গুরুমন্ডল ও নিম্ন গুরুমন্ডল।
৫। ভূত্বক মূলত গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত। অন্যদিকে, গুরুমন্ডল মূলত পেরিডোটাইট জাতীয় শিলা যেমন- অলিভিন, পাইরক্সিন দ্বারা গঠিত।
৬। ভূত্বক পৃথিবীর মোট আয়তন ও ভরের মাত্র ১% দখল করে আছে। অন্যদিকে, গুরুমন্ডল পৃথিবীর মোট আয়তন ও ভরের প্রায় ৮০% ও ৬৮% অধিকার করে আছে।
৭। ভূত্বক মূলত সিলিকা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি খনিজের সমন্বয়ে গঠিত। অন্যদিকে, গুরুমন্ডলের প্রধান উপাদান হলো লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি।