পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
পূর্বঘাট পর্বত (Eastern Ghats Mountain) :
পূর্বঘাট পর্বতমালা ভারতীয় উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে অবস্থান করছে। পূর্বঘাট পর্বত মালা উত্তরে মহানদী থেকে দক্ষিণে নীলগিরি পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত।পূর্ব ঘাট অঞ্চল পশ্চিমঘাটের তুলনায় অধিক প্রাচীন,পূর্বঘাট পর্বতমালার অপর নাম মলয়াদ্রি। পূর্ব ঘাট চর্নাকোট, গ্রানাইট গিনিস, খুন্ডালাইট, মেটামোরফিক গিনিস এবং কোয়ার্টজাইট শিলায় সংযোজনে গঠিত। পূর্ব ঘাটের কাঠামোর মধ্যে রয়েছে সংযোজ্যতা এবং ভূচ্যুতি, যা তার পার্বত্য এলাকায় বিস্তৃত। চুনাপাথর, বক্সাইট এবং লৌহ আকরিক পূর্ব ঘাট পার্বত্য এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়।
পূর্বঘাট পর্বতমালার উচ্চতম শিখর হিমালয় পর্বতমালার কাছে দেখতে একটু নিম্নতর, তবে এটি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের একটি জনপ্রিয় স্থান এবং পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
পশ্চিম ঘাট পর্বত (Western Ghats Mountain) :
পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা ভারতীয় উপদ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে আরব সাগরের উপকূল বরাবর উত্তর দক্ষিণে অবস্থান করছে। পশ্চিম ঘাট পর্বতের অপর নাম সহ্যাদ্রি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার গড় উচ্চতা 600-900 মিটার। পূর্বঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নাম জিন্দাগাধা (1,690 মি)। পশ্চিম ঘাট পর্বত মালা গড়ে 50-80 কি:মি: চওড়া। এই পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে এখানে চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে। উপদ্বীপীয় ভারতের প্রধান প্রধান নদীগুলি এই পশ্চিমঘাট পর্বত থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. পূর্বঘাট পর্বতমালা ভারতীয় উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা ভারতীয় উপদ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে আরব সাগরের উপকূল বরাবর উত্তর দক্ষিণে অবস্থান করছে।
২. পূর্ব ঘাট পর্বত মালা উত্তরে মহানদী থেকে দক্ষিণে নীলগিরি পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে, পশ্চিম ঘাট পর্বত মালা উত্তরে তাপি নদী থেকে দক্ষিণে নীলগিরি পর্যন্ত বিস্তৃত।
৩. পূর্ব ঘাট পর্বতমালার অপর নাম মলয়াদ্রি। অন্যদিকে, পশ্চিম ঘাট পর্বতের অপর নাম সহ্যাদ্রি।
৪. পূর্ব ঘাট পর্বতমালার গড় উচ্চতা 900-1600 মিটার। অন্যদিকে, পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার গড় উচ্চতা 600-900 মিটার।
৫. পূর্ব ঘাট পর্বত মালা 100-200 কি:মি: চওড়া। অন্যদিকে, পশ্চিম ঘাট পর্বত মালা গড়ে 50-80 কি:মি: চওড়া।
৬. পূর্বঘাট পর্বতমালা ছোট ছোট পর্বত এর সমন্বয়ে গঠিত অবিচ্ছিন্ন প্রকৃতির। অন্যদিকে, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে উত্তর থেকে দক্ষিনে বিস্তৃত হয়েছে।
৭. পূর্বঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নাম জিন্ডা গারা। র পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নাম আনাইমুদি।
৮. পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। অন্যদিকে, মৌসুমী বায়ুর গতিপথে অবস্থিত পশ্চিমঘাট পর্বত অঞ্চলে শৈলোৎক্ষেপ শ্রেণীর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
৯. পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চলে শুষ্ক প্রকৃতির জলবায়ু বিরাজ করায় এই অংশে বিক্ষিপ্ত পর্ণমোচী অরণ্য ও ঝোপঝাড়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে এখানে চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে।
১০. পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চল থেকে তেমন কোনো বড়ো নদীর উৎপত্তি ঘটে নাই। অন্যদিকে, উপদ্বীপীয় ভারতের প্রধান প্রধান নদীগুলি এই পশ্চিমঘাট পর্বত থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।