তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ:
যে কোষে বাইরের উৎস থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলে। তড়িৎ রাসায়নিক কোষে অ্যানোড ঋণাত্মক ও ক্যাথোড ধনাত্মক প্রকৃতির। তড়িৎ বিশ্লেষ্য হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা কোন পোলার দ্রাবকে যেমন- পানি দ্রবীভূত করলে তড়িৎ পরিবাহী দ্রবণ তৈরি করে। দ্রবীভূত তড়িৎ বিশ্লেষ্য বিশ্লিষ্ট হয়ে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিভক্ত হয়, যা দ্রবণে সুষমভাবে বিন্যস্ত থাকে। তাড়িতিকভাবে, এমন দ্রবণ নিরপেক্ষ। এমন দ্রবণে তড়িৎ বিভব প্রয়োগ করা হলে, দ্রবণের ক্যাটায়নগুলো ঐ তড়িৎদ্বারের দিকে যায়, যার ইলেকট্রন প্রাচুর্য আছে।
অন্যদিকে অ্যানায়নগুলো সেই তড়িতদ্বারের দিকে যায়, যার ইলেকট্রন ঘাটতি আছে। দ্রবণের মধ্যে অ্যানায়ন ও ক্যাটায়নের এমন বিপরীতমুখী গতি তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। অধিকাংশ দ্রবণীয় লবণ, অম্ল ও ক্ষারক এর অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু গ্যাস, যেমন- হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl), উচ্চ তাপমাত্রা অথবা নিম্ন চাপে তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে কাজ করতে পারে। কিছু কিছু জৈবিক যেমন- ডি.এন.এ, পলিপেপটাইড এবং কৃত্রিম পলিমার যেমন- পলিস্টাইরিন সালফোনেট।
গ্যালভানিক কোষ:
গ্যালভানিক কোষ যা লুইজি গ্যালভানির নামানুসারে গঠিত হয়েছে, তা দুটি আলাদা ধাতুর তৈরি তড়িতদ্বারকে একটি লবণ সেতু বা দুটি আলাদা অর্ধকোষকে একটি পোরোয়াস ডিস্কের সংযোগে তৈরি করা হয়। একে ভলটায়িক কোষ বা ইলেকট্রোকেমিক্যাল কোষও বলা হয়ে থাকে।
একটি গ্যালভানিক কোষে দুটি অর্ধকোষ থাকে। প্রতিটি অর্ধকোষে একটি ইলেকট্রোড যা জিঙ্ক ও কপারের পাত এবং একটি ইলেকট্রোলাইট যা এদের জলীয় দ্রবণ ZnSO4 ও CuSO4। ধাতব ইলেকট্রোডের ধাতু মিশ্রণের সাথে দ্রবীভূত হতে পারে এবং এর ফলে ইলেকট্রোলাইটে ধনাত্মক আয়ন যুক্ত হয় এবং ইলেকট্রনে ঋনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড থাকে। এভাবে সকল অর্ধকোষে নিজস্ব অর্ধ-বিক্রিয়া ঘটে। চিত্রে প্রদর্শিত ডেনিয়েল কোষে Zn অনুর দ্রবীভূত হবার প্রবণতা Cu অণু থেকে বেশি। নির্দিষ্ট করে বললে, জিঙ্ক ইলেকট্রোডের ইলেকট্রনগুলোতে কপার ইলেকট্রোডের ইলেকট্রনের তুলনায় বেশি শক্তি থাকে।
কেননা ইলেকট্রনের আধান ঋনাত্মক, এখন ইলেকট্রনকে আরো শক্তি দিতে হলে জিঙ্ককে কপারের চেয়ে বেশি ঋনাত্মক ইলেকট্রিকাল পোটেনশিয়াল থাকতে হবে। অবশ্য ইলেকট্রোডদ্বয়ের মধ্যে বাহ্যিক সংযোগ না থাকলে বিদ্যুত প্রবাহিত হয় না।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ও গ্যালভানিক কোষের মধ্যে পার্থক্য:
যে কোষে বাইরের উৎস থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলে। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ ও গ্যালভানিক কোষের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে তড়িৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়। অন্যদিকে গ্যালভানিক কোষে রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় ।
২। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে অ্যানোড পজেটিভ এবং ক্যাথোড নেগেটিভ হয়। অন্যদিকে গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড নেগেটিভ ও ক্যাথোড পজিটিভ।
৩। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে অ্যানোডে হবে মৌলের ইলেক্ট্রন ছাড়বে এবং ক্যাথোডে হবে আয়নিত মৌলের ইলেক্ট্রন গ্রহন। অন্যদিকে গ্যালভানিক কোষে অ্যানোডে অ্যানায়ন ইলেক্ট্রন ছাড়বে। ক্যাথোডে ক্যাটায়ন ইলেক্ট্রন ধরবে।
৪। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের তড়িৎদ্বার গঠনে দুটি তড়িৎদ্বার ব্যাটারির পজিটিভ ও নেগেটিভ প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয় যা শুধু ইলেক্ট্রনিক পরিবাহি ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। অন্যদিকে গ্যলাভানিক কোষের তড়িৎদ্বার গঠনে সক্রিয়তার মাত্রা দ্বারা দুটি তড়িৎদ্বার নিরুপিত হয় এবং এদের প্রত্যেক কেই আলাদা ভাবে নিজ নিজ লবণের ( তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ ) দ্রবণে দ্রবীভুত করা হয়।
৫। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ এ তড়িৎ প্রয়োগে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে গ্যালভানিক কোষে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন হয়।
৬। তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ এর বাইরের ব্যাটারি থেকে আসা তড়িৎ দ্রবণে আয়ন তৈরি করে। অন্যদিকে গ্যালভানিক কোষে ইলেকট্রন কোত্থেকে তড়িৎদ্বার এর মাধ্যমে বাইরে প্রবাহিত হয়।