ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতার মধ্যে পার্থক্য

ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতা, দুটিই পরমাণুর ইলেকট্রন আকর্ষণের ধারণাকে বোঝায়, তবে তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতার মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity) :
গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের ১ মোল পরমাণুর তার সর্ববহিঃস্থ স্তরে অসীম দূরত্ব থেকে একটি একটি করে মোট ১ মোল ইলেকট্রন গ্রহন করে প্রতিটি একক ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট ১ মোল গ্যাসীয় ঋনাত্মক আয়ন বা অ্যানায়ন এ রূপান্তরিত হতে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে । পর্যায় সারণির সব থেকে বেশি ইলেকট্রন আসক্তি বিশিষ্ট মৌল হলো ক্লোরিন (Cl)।

ইলেকট্রন আসক্তি হচ্ছে একটি পর্যাবৃত্ত ধর্ম। পারমাণবিক ব্যাসার্ধের সাথে সাথে ইলেকট্রন আসক্তিও পরিবর্তন হয়। পরমাণুর আকার বৃদ্ধিতে ইলেকট্রন আসক্তি হ্রাস পায় এবং নিউক্লিয়াসে চার্জ বৃদ্ধিতে ইলেকট্রন আসক্তি বৃদ্ধি পায়, আবার একই পর্যায়ের বাম থেকে ডান দিকে গেলে ইলেকট্রন আসক্তি বৃদ্ধি পায় এবং একই গ্রুপের ওপর থেকে নীচের দিকে গেলে ইলেকট্রন আসক্তি হ্রাস পায়। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা (Electronegativity) :
কোনো মৌলের অণুতে পরমাণু কর্তৃক শেয়ারকৃত ইলেক্ট্রনযুগলকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার তুলনামূলক ক্ষমতাকে সেই মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে। তড়িৎ ঋণাত্মকতা প্রতীক χ হল এমন এক ধরনের রাসায়নিক ধর্ম যা কোনো পরমাণু বা অন্য কোন রাসায়নিক সত্ত্বার (অনু,পরমাণু ও আয়ন) ইলেকট্রন বা ইলেকট্রন ঘনত্বকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাকে প্রকাশ করে। তড়িৎ ঋণাত্মকতা পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা, কেন্দ্র থেকে যোজ্যতা ইলেকট্রনের দুরত্ব ইত্যাদীর উপর নির্ভর করে। তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান যত বেশি হয় কোন রাসায়নিক সত্ত্বার (পরমাণু, অণু বা মূলক ও আয়ন) নিজের দিকে ইলেকট্রন ঘনত্বকে টেনে নেয়ার প্রবণতা তত বেশি হয় । ফ্লোরিন সবচেয়ে বেশি তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল। ফ্লোরিনের তড়িৎ ঋণাত্মকতা ৪.০।তড়িৎ ঋণাত্মকতার ক্রম F>O>N, Cl>Br>I, C>H

ইলেকট্রন আসক্তি ও তড়িৎ ঋণাত্মকতার মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে স্থিত কোনো বিচ্ছিন্ন গ্যাসীয় পরমাণুতে ১টি অতিরিক্ত ইলেকট্রন যুক্ত করার ফলে নির্গত শক্তির পরিমাণ কে ইলেকট্রন আসক্তি বলে। অন্যদিকে, কোনো মৌলের অণুতে পরমাণু কর্তৃক শেয়ারকৃত ইলেক্ট্রনযুগলকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার তুলনামূলক ক্ষমতাকে সেই মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।

২. ইলেকট্রন আসক্তি মৌলের বিচ্ছিন্ন পরমাণুর ধর্ম। এর মান নির্দিষ্ট। যেমন- ১ এর ইলেকট্রন আসক্তির মান 2.07 eV atm বা 200 kJ mol¹.e-96.49 kJ) অন্যদিকে, তড়িৎ ঋণাত্মকতা কোনো যৌগে উপস্থিত মৌলের পরমাণুর ধর্ম। এ মান বিভিন্ন যৌগে বিভিন্ন হতে পারে। SF, ও SCI₂ যৌগে S এর তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান ভিন্ন হয়।

৩. ইলেকট্রন আসক্তি বিচ্ছিন্ন পরমাণুর ধর্ম। অন্যদিকে, তড়িৎ ঋণাত্মকতা সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ পরমাণুর ধর্ম।

৪. ইলেকট্রন আসক্তির কারণে কোনো মৌলের পরমাণুএক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। যেমন, Cl(g)+e~CI– ;∆H =-348.8 kJ/mol F(g)+e~F–; ∆H=-328.8 kJ/mol. অন্যদিকে, তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাবে সমযোজী বন্ধন অংশগ্রহণকারী পরমাণুদ্বয়ের মধ্যে আংশিক ধনাত্বর ও আংশিক ঋণাত্মক চার্জের উদ্ভব ঘটে। যেমন, H$+-F$-, H$+-C$-.

৫. কোনো মৌলের পরমাণুর অ্যানায়ন গঠনের প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। অন্যদিকে, সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ দুটি পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য সংশ্লিষ্ট বন্ধনের পোলারিটি সম্পর্কে ধারণা দেয় ।

৬. পর্যায় বা গ্রুপ বরাবর ইলেকট্রন আসক্তির পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়মিত (irregular)। অন্যদিকে, পর্যায় বা গ্রুপ বরাবর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পরিবর্তন প্রায় নিয়মিত (regular)।