তিনটি শব্দ- ইউনাইটেড কিংডম সংক্ষেপে ইউকে, গ্রেট ব্রিটেন আর ইংল্যান্ড। আমরা অনেক সময়েই হয়তো একটু অসচেতনভাবেই এই তিনটি টার্মকে সাধারণত একই অর্থেই ব্যবহার করে ফেলি। বিষয়টি যেন আররো বেশি দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন পর্বজুড়ে। সেই বরিস জনসনের পদত্যাগ পর্ব থেকেই বার বার এ তিনটি শব্দ লেখা হচ্ছে, একই অর্থবোধকভাবে ব্যবহৃত, লিখিত বা উচ্চারিত হলেও এই তিনটির মধ্যে সামাজিক ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পার্থক্য রয়েছে।
ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউ কে’র মধ্যে পার্থক্যঃ
আপাতভাবে একই অর্থবোধকভাবে ব্যবহৃত, লিখিত বা উচ্চারিত হলেও এই তিনটির মধ্যে সামাজিক ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পার্থক্য রয়েছে। ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইউ কে’র মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
‘দ্য ইউনাইটেড কিংডম’ হলো ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড নিয়ে গঠিত সার্বভৌম একটি দেশ। ‘দ্য গ্রেট ব্রিটেন’ হলো ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বৃহৎ এক দ্বীপ, যার মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস নামক তিনটি দেশ রয়েছে। আর ‘ইংল্যান্ড’ হলো ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে আয়তন এবং জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড় দেশ।
গ্রেট ব্রিটেন কোনো দেশ নয় বরং বিশাল আয়তনের এক দ্বীপ। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় অখণ্ড দ্বীপ এটি। উত্তর আয়ারল্যান্ড বাদে অখণ্ড ই দ্বীপটি ভাগাভাগি করে নিয়েছে যুক্তরাজ্যের বাকি তিন দেশ- ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ড। মনে করা হয়, সবচেয়ে বড় দ্বীপ বলেই এর নামের আগে ‘গ্রেট’ শব্দটি বসানো হয়েছে। ব্রিটেন নামটি রোমান শব্দ ‘ব্রিটানিয়া’ থেকে এলেও এর সাথে গ্রেট শব্দটি কেন জুড়ে দেয়া হয়েছিল সে নিয়ে বিভিন্ন মতামত দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে যেটি মনে করা হয়,তা হলো পাশের ‘ব্রিটানি’ নামক একটি ফ্রেঞ্চ প্রতিবেশী রাজ্য থেকে এই ভূখণ্ডকে আলাদা করার জন্যই হয়তো এর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ‘গ্রেট’ শব্দটি। দ্বিতীয় আর একটি মত পাওয়া গিয়েছিল সেটি হলো, কিং জেমস চাইছিলেন না তাকে শুধুমাত্র ব্রিটেনের রাজা হিসেবে বলা হোক। কেননা ব্রিটেন বলতে তখন বোঝানো হতো রোমান ব্রিটেনকে, যেটা গঠিত হয়েছিল শুধুমাত্র ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে নিয়ে। তিনি ছিলেন গোটা দ্বীপটির রাজা অর্থাৎ, যার মধ্যে স্কটল্যান্ডও ছিল। এর রাজা হিসেবে নিজের প্রোফাইলটা বেশ বড় করে দেখানোর জন্যই তিনি ব্রিটেনের সাথে ‘গ্রেট’ শব্দটি জুড়ে দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।
আমরা অনেকেই ‘ইউনাইটেড কিংডম’ বলতে ‘ইংল্যান্ড’কেই বুঝে থাকি, বা বোঝাই। কিন্তু তা নয়, ওয়েলস কিংবা স্কটল্যান্ডের মতোই ইংল্যান্ড একটি দেশ। এর অবশ্য একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এটি ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় দেশ। তা ছাড়া ইউনাইটেড কিংডম গঠনের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড দেশটিরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল। সেই কারণেই হয়তো ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনকে ইউনাইটেড কিংডমেরও রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হয়।