পরিবেশ দূষণ ও অবনমনের মধ্যে পার্থক্য

পরিবেশ দূষণ (Environmental Pollution) :
পরিবেশ দূষণ আমাদের পরিপার্শ্বে কোন এমন রাসায়নিক ( chemical) ছড়ানো হয়েছে। যাতে মাটি জল ও বায়ু সেই রাসায়নিক অবশোষণ ( absorb) করে । এইভাবেই মাটি , জল ও বায়ু মানুষের উপভোগের ( consumption) জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। পরিবেশের ভৌত,রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্চিত পরিবর্তন জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাকেই দূষণ বলে। ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশের উপাদানসমূহে যুক্ত হলে তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। বায়ু দূষণ, জল দূষণ, শব্দ দূষণ এবং মৃত্তিকা দূষণ এর মধ্যে অন্যতম।

পরিবেশ অবনমন (Environment Degradation) :
পরিবেশ অবনমন একটি জঙ্গল আছে । কিন্তু আমরা সেই জঙ্গলের বেশিরভাগ গাছ কেটে ফেলেছি। এখন সেই জঙ্গলের বাতাস শুদ্ধিকরণ ক্ষমতা অনেক হ্রাস পায় । পূর্ববৎ অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা পুনরায় উপলব্ধ করা অসম্ভব। প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাগত অবক্ষয়ের মাধ্যমে গুনগত মানের অধপতনকেই পরিবেশগত অবনমন (Environmental Degredation) বলে। এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কার্যকলাপের দ্বারা হয়ে থাকে, যেগুলি পরিবেশ থেকে এতো দ্রুত সম্পদ আরোহন করে পরিবেশ সেগুলি পূরন করতে সক্ষম হয় না, ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটে। কিছু কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন – ভূমিকম্প ও ভূমিধ্বস প্রকৃতির অবনমন ঘটায়।

পরিবেশগত অবনমন দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাসস্থান সম্পূর্ন ভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পরিবেশগত অবনমন এমন এক ধারণা যা বৃক্ষচ্ছেদন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, মরুকরণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন, প্রানীর অবলুপ্তি, দূষণ ও আরও অনেক কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে।

পরিবেশ দূষণ ও অবনমনের মধ্যে পার্থক্যঃ
পরিবেশ দূষণ আমাদের পরিপার্শ্বে কোন এমন রাসায়নিক (chemical) ছড়ানো হয়েছে। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ অবনমের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ-

১, ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশের উপাদানসমূহে যুক্ত হলে তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাগত অবক্ষয়ের মাধ্যমে গুনগত মানের অধপতনকেই পরিবেশগত অবনমন (Environmental Degredation) বলে।

২. পরিবেশ দূষণ হল পরিবেশের গুণমানের হ্রাস, যা দূষকগুলির উপস্থিতির কারণে ঘটে। দূষকগুলি হল এমন পদার্থ বা শক্তি যা পরিবেশের ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে, পরিবেশ অবনমন হল পরিবেশের গুণমানের ধীর ও দীর্ঘমেয়াদী হ্রাস। এটি প্রাকৃতিক বা মানুষের কার্যকলাপের ফলে হতে পারে।

৩. পরিবেশ দূষণ সাধারণত দ্রুত ঘটে। অন্যদিকে, পরিবেশ অবনমন ধীরে ধীরে ঘটে।

৪. পরিবেশ দূষণের প্রভাব সাধারণত স্থানীয়ভাবে সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে, পরিবেশ অবনমনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী হতে পারে।

৫. পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হল মানুষের কার্যকলাপ। অন্যদিকে, পরিবেশ অবনমের কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক বা মানুষের কার্যকলাপ।

৬. পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ এবং তেজস্ক্রিয় দূষণ। অন্যদিকে, পরিবেশ অবনমনের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন বন উজাড়, ভূমিক্ষয়, মরুভূমির প্রসার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস।