সাধারন শেয়ার (Equity Shares):
সাধারনত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার ইস্যু করে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হলে তাকে ইক্যুইটি মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রেগুলেটরি বডির বা সরকারের অনুমতি নিয়ে ন্যূনতম মূলধন সংগ্রহের পর সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিবরণপত্র ছাপিয়ে কোম্পানিটি সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে জনগণের নিকট শেয়ার ক্রয়ের আবেদন চাওয়া হয়। আবেদন জমা হলে সেখান হতে লটারির মাধ্যমে শেয়ার বণ্টন করা হয়। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার ক্রয় করে উক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এরাই প্রকৃত পক্ষে কোম্পানির মালিক। ইহার মালিকদের কোম্পানি নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সাধারণ শেয়ার সহজে হস্তান্তরযোগ্য এবং বিনিয়োগকারী ইচ্ছে করলে যেকোনো সময় শেয়ার হস্তান্তর করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের লাভ হলে এদের মধ্যেই মুনাফা লভ্যাংশ হিসাবে বন্টন করা হয়। শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য নয়। তবে নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে শেয়ারহোল্ডাররা সেকেন্ডারি মার্কেটে (যেমন: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) অধিক মূল্যে শেয়ার বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করতে পারে। সাধারণত লাভজনক কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। তবে লভ্যাংশ প্রদানের কোনো নির্দিষ্ট হার পূর্ব নির্ধারিত থাকে না। কোম্পানির জন্য লভ্যাংশ প্রদান করা বাধ্যতামূলকও নয়। মুনাফা না হলে সাধারণত লভ্যাংশ প্রদান করা হয় না। মুনাফা হলেও সম্পূর্ণ অংকের মুনাফা লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন করা হয় না। কোম্পানি ইচ্ছে করলে যেকোনো হারে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে, আবার লভ্যাংশ নাও প্রদান করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের কাক্সিক্ষত পরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করতে না পারলে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারের মূল্য হ্রাস পায়, যা কোম্পানির জন্য ক্ষতিকর। তাই সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হওয়ায় এরকম শেয়ার থেকে আয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
অগ্রাধিকার শেয়ার (Preference Shares):
যে শেয়ারের মালিক লভ্যাংশ ও মূলধন ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে তাকে অগ্রাধিকার শেয়ার বলে। যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে নির্দিষ্ট হারে আয় করতে চায়, তাদের জন্য অগ্রাধিকার শেয়ার একটি ভালো বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অগ্রাধিকার শেয়ার হলো এমন এক ধরনের শেয়ার যা এর ক্রেতাকে আর্থিক সুবিধা ও অবসায়নের সময় অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। অগ্রাধিকার শেয়াহোল্ডারদের মুনাফা বন্টনের সময় অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং সর্ব প্রথম লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। তারপর সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বন্টন করা হয়। এধরনের শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার নেই এবং এরা কোম্পানির মালিক নয়। অনেক সময় অগ্রাধিকার শেয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পর সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করার বিকল্প সুযোগ দেয়া হয়। ফলে বিনিয়োগকারী ইচ্ছে করলে এই সুযোগ ব্যবহার করে সাধারণ শেয়ার মালিক হতে পারে।
সাধারণ ও অগ্রাধিকার শেয়ারের মধ্যে পার্থক্যঃ
সাধারণ শেয়ার ও অগ্রাধিকার শেয়ার যৌথমূলধনী কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের অন্যতম উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এদের
মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
১। যৌথ মূলধনী কোম্পানির নিজস্ব মূলধন এর ক্ষুদ্রতম অংশ হলো সাধারণ শেয়ার। অন্যদিকে, যে শেয়ারের মালিক লভ্যাংশ ও মূলধন ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে তাকে অগ্রাধিকার শেয়ার বলে।
২। সাধারণশেয়ার ক্রয় করলে প্রতিষ্ঠানের ভোটদানের অধিকার রয়েছে । অন্যদিকে, অগ্রাধিকার শেয়ার ধারা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ভোটাধিকার নাই।
৩। সাধারণ শেয়ার কোন নির্দিষ্ট মেয়াদকাল নেই প্রতিষ্ঠানের মেয়াদান্তে এর সমাপ্তি ঘটে। অন্যদিকে, কখনো কখনো অগ্রাধিকার শেয়ারের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদকাল থাকে।
৪। সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডারদের পরে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডাররা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আগে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে।
৫। কোম্পানি বিলুপ্তির সময় সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের দাবি অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডারদের পরে পরিশোধ করা হয়ে থাকে । অন্যদিকে, কোম্পানি বিলুপ্তির সময় অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডারদের দাবি সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের আগে পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
৬। সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা শুধুমাত্র কোম্পানি লাভ করতে পারলে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে । অন্যদিকে, অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডাররা সব সময় লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। তবে কোন বছর কোম্পানি লাভ করতে না পারলে তার পরের বছর পূর্বের লভ্যাংশ পেয়ে থাকে।
৭। সাধারণ শেয়ারের মেয়াদকাল চিরস্থায়ী। অন্যদিকে, অগ্রাধিকার শেয়ারের মেয়াদকাল চিরস্থায়ী বা পরিশোধ্য হতে পারে।