ইত্যাদি ও প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য

ইত্যাদি’ আর ‘প্রভৃতি’ সমার্থক বা প্রতিশব্দ হলেও ব্যাবহারিক প্রয়োগে শব্দ দুটির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। নিচে ইত্যাদি ও প্রভৃতির মধ্যে সংক্ষিপ্ত পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-

ইত্যাদি (Etyadi) :
সংস্কৃত ইতি+আদি-র সন্ধির ফলে ইত্যাদি শব্দের উৎপত্তি। ইতি মানে ইহা, শেষ আর আদি মানে প্রথম, খাঁটি মূল বা আরম্ভ। শব্দার্থে ইত্যাদি হচ্ছে ইতি হতে আরম্ভ, অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ। সমাস করলে দাঁড়ায়- ইতি হয়েছে আদি যার (বহুব্রীহি)। এখানেও পূর্ণাঙ্গ কিন্তু ব্যবহারিক অর্থে ইত্যাদি মানে “এগুলো এবং এরূপ আরো অনেক “। খেতে পছন্দ করি, যেমন আপেল, কলা, কমলা ইত্যাদি। এ বাক্যে ইত্যাদি শব্দে বোঝানো হচ্ছে। এরূপ আরো আছে। সময় এবং স্থানাভাবে তাদের নাম দেয়া গেল না। ইত্যাদি শব্দটি অব্যয় পদ।

প্রভৃতি (Probriti) :
প্রভৃতি শব্দটি কখনো বিশেষণ, কখনো অব্যয়। সং প্র+ র(ভৃ)+তি = প্রভৃতি। বিশেষণ হিসেবে প্রভৃতির অর্থ ইত্যাদি। আর অব্যয় হিসেবে এর অর্থ অবধি বা পর্যন্ত। শব্দগত বা ব্যবহারিক দিক দিয়ে প্রভৃতি এবং ইত্যাদি সমার্থক। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, সুবলচন্দ্র মিত্রের সরল বাঙ্গালা অভিধান, রাজশেখর বসুর চলন্তিকা, সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সেরকমই বলে। কিন্তু ইত্যাদি আর প্রভৃতির মধ্যে যে ব্যবধান বা পার্থক্য তা সম্পূর্ণরূপেই প্রায়োগিক। ভাষা শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ইত্যাদি আর প্রভৃতির ব্যবহার সম্পূর্ণ একটা রীতি-র মত চলে আসছে। আজ আর তার ব্যতিক্রম ঘটানো যাবে না। তবে তা হবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নামান্তর। তাতে ভাষা দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ট্যচ্যুত হবে। নষ্ট হবে সৌন্দর্য।

ইত্যাদি ও প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সংস্কৃত ইতি+আদি-র সন্ধির ফলে ইত্যাদি শব্দের উৎপত্তি। অন্যদিকে, প্রভৃতি শব্দটি কখনো বিশেষণ, কখনো অব্যয়। সং প্র+ র(ভৃ)+তি = প্রভৃতি।

২. ইত্যাদি এর অর্থ হল ‘এর পরে আরও অনেক কিছু’ বা ‘এর মতো আরো অনেক কিছু’। অন্যদিকে, প্রভৃতি এর অর্থও ‘এর মতো আরো অনেক কিছু’।

৩. সাধারণত একটি তালিকার শেষে ব্যবহৃত হয়। যখন আমরা কোনো কিছুর উদাহরণ দিই এবং এর পরে আরো অনেক কিছু থাকতে পারে তখন ‘ইত্যাদি’ শব্দটি ব্যবহার করি। অন্যদিকে, ‘প্রভৃতি’ শব্দটি ‘ইত্যাদি’ শব্দের মতোই ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ‘প্রভৃতি’ শব্দটি বেশি আনুষ্ঠানিক বা সাহিত্যিক শৈলীতে ব্যবহৃত হয়।

৪. সাধারণত দৈনন্দিন কথাবার্তায় ‘ইত্যাদি’ শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, আনুষ্ঠানিক লেখা বা বক্তৃতায় ‘প্রভৃতি’ শব্দটি ব্যবহার করা ভালো।

৫. ইত্যাদ একটা বহুব্রীহি সমাস এবং অব্যয় পদ। অন্যদিকে, প্রভৃতি শব্দটি কখনো বিশেষণ, কখনো অব্যয় হিসেবে ব্যাহারিত হয়।

৬. উদাহরণ:
আমি ফল খেতে পছন্দ করি, যেমন আপেল, কলা, কমলা ইত্যাদি। (দৈনন্দিন ব্যবহার)
দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ করা জরুরি। (আনুষ্ঠানিক ব্যবহার)