পরীক্ষা ও অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য

পরীক্ষা ও অভীক্ষা দুটি পৃথক প্রক্রিয়া, যদিও তারা প্রায়ই একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। পরীক্ষা ও অভীক্ষার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে পরীক্ষা ও অভীক্ষার মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি দেওয়া হলো:

পরীক্ষা (Examination) :
কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের আলোকে পাঠ্যসূচীর সামগ্রিক ধারণা পরিমাপ করার লক্ষ্যে প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য পাঠ্যসূচীর ব্যাপক ক্ষেত্রে যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয় তাকে পরীক্ষা বলে। অর্থাৎ কোনো ধারণাকে সমর্থন, খণ্ডন বা যাচাই করার জন্য কার্যপ্রণালীকে পরীক্ষা বলে। পরীক্ষায় কোন নির্দিষ্ট গুনকে প্রভাবিত করে সেটির ফলাফল বর্ণনা করা হয়। এর মাধ্যমে পরীক্ষা কারণ এবং প্রভাবের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা যায়। উদ্দেশ্য এবং মাত্রার ভিত্তিতে পরীক্ষার পার্থক্য আছে। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষাই ফলাফলের পুনরাবৃত্তিমূলক পদ্ধতি এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক পরীক্ষামূলক গবেষণারও অস্তিত্ব রয়েছে।

একজন শিশু মাধ্যাকর্ষণকে বোঝার জন্য কিছু সাধারণ পরীক্ষা করতে পারে, যেথায় বিজ্ঞানীদের দল কয়েক বছর ধরে শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঘটনাটিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। পরীক্ষা এবং অন্যোন্য হাতে-কলমে কার্যক্রম শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা ফলাফলের মান বাড়ায় এবং একটি শিক্ষার্থীকে উক্ত বিষয়ে আরও নিয়জিত ও আগ্রহী করে; বিশেষ করে যখন এটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হয়।

অভীক্ষা (Test) :
শিক্ষা ক্ষেত্রে Test এর প্রচলিত বাংলা প্রতিশব্দ অভীক্ষা। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ম্যারী ও জয়সি ই. লিন এর মতে “পরীক্ষা গ্রহণের জন্য যে প্রশ্নপত্র বা উপকরণ বা কৌশল ব্যবহৃত হয় তাকে অভীক্ষা বলে” । শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার কৌশল অবলম্বন করা হয়। যেমন: রচনামূলক প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়ে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করতে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা থেকে তাদের অর্জিত জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

এখানে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতকৃত প্রশ্নপত্রই অভীক্ষা এবং একে রচনামূলক অভীক্ষা বলা হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে কাজ করার দক্ষতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহারিক কাজ করতে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারিক কাজের নির্দেশনা বা প্রশ্নপত্র হচ্ছে ব্যবহারিক অভীক্ষা। আসুন এবার আমরা বিভিন্ন প্রকার অভীক্ষার একটি চার্ট প্রস্তুত করি।

পরীক্ষা ও অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য:
১। যে পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে বিশেষ ধরনের শিক্ষাগত বা মানসিক বৈশিষ্ট্য বা যোগ্যতা পরিমাপ করা হয়, তাকেই অভীক্ষা বলে। অন্যদিকে, কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের আলোকে পাঠ্যসূচীর সামগ্রিক ধারণা পরিমাপ করার লক্ষ্যে প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য পাঠ্যসূচীর ব্যাপক ক্ষেত্রে যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয় তাকে পরীক্ষা বলে।

২। যে সকল উপকরণ বা হাতিয়ার বা কৌশলের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান, কৃতিত্ব বা পারদর্শিতা যাচাই করে তাদের পরস্পরের শিক্ষাগত পার্থক্য নিরূপন করা হয়, তাদের শিক্ষামূলক অভীক্ষা বলে। অন্যদিকে, পরীক্ষা সাধারণত সনদ ভিত্তিক হয়ে থাকে।

৩। পরীক্ষা মূলতঃ পূর্বপরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিগত কার্যক্রম। শিক্ষার সাধারণ উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট স্তরের সামগ্রীক পাঠ্যসূচী মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা নিরূপন করা হলো পরীক্ষার শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণিতে প্রমোশন প্রদান, তাদের মেধা অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস, বৃত্তি নির্বাচন কিংবা শিক্ষার্থীদের ত্রুটি নির্ণয় এবং সংশোধনের জন্যও পরীক্ষা পদ্ধতি দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে।

অন্যদিকে, অভীক্ষা হলো পরীক্ষা গ্রহণের একটি কৌশল বা উপকরণ (Tool)। তুলনামূলক স্বল্প সময়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে পাঠ্যসূচীর নির্দিষ্ট অংশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীর সামর্থ ও দক্ষতা বিচারের জন্য অভীক্ষা প্রণয়ন করা হয়।

৪। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক স্তরের আচরণগত পরিবর্তন বা উদ্দেশ্য পরিমাপ করার জন্য পারদর্শিতা বা কৃতিত্ব অভীক্ষা ব্যবহার করা হয়। অনুভূতিমুলক স্তরের উদ্দেশ্য পরিমাপের জন্য বিশেষ ধরণের অভীক্ষা, যেমন- মনোভাব পরিমাপক স্কেল, আগ্রহ পরিমাপক স্কেল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে, মনোপেশীজ বা ক্রিয়ামূলক স্তরের উদ্দেশ্য যাচাইয়ের জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা বা হাতে-কলমে কাজের ব্যবস্থা করা হয়।

৫। প্রাপ্ত ফল শিক্ষার্থীদের পরস্পরের মধ্যে শিক্ষাগত পার্থক্য নিরূপণে ব্যবহার করা হয় এবং অভীক্ষার ফল সংখ্যায় প্রকাশযোগ্য হয় ।