বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্য

মানবদেহে দুই ধরনের গ্রন্থি রয়েছে: বহিঃক্ষরা এবং অন্তঃক্ষরা। উভয়েরই দেহের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তবে তাদের কার্যপ্রণালী ও কাজের ধরন ভিন্ন। বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (Exocrine Gland) :
বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হচ্ছে সেইসব গ্রন্থি যারা নালীর মাধ্যমে আবরণী টিস্যুর উপরিভাগে পদার্থ উৎপন্ন এবং ক্ষরণ করে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থির উদাহরনের মধ্যে আছে ঘর্ম গ্ৰন্থি, মুখের লালা গ্ৰন্থি, স্তন, সেরুমিনাস, লেক্রিমাল, সেবাসিয়াস এবং মিউকাস। বহি:ক্ষরা গ্রন্থি মানুষের দেহের দুই প্রকার গ্রন্থির মধ্যে একটি, অপরটি হচ্ছে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যা তাদের পদার্থগুলকে সরাসরি রক্তে ক্ষরণ করে। যকৃত এবং অগ্ন্যাশয় উভয় অন্তঃক্ষরা এবং বহিঃক্ষরা গ্রন্থি; তারা বহিঃক্ষরা গ্রন্থি কারণ তারা পিত্ত এবং অগ্ন্যাশয় রস উভয়ই একসারি নালীর মাধ্যমে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে ক্ষরণ করে এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কারণ তারা অন্যান্য পদার্থ সরাসরি রক্তে ক্ষরণ করে।

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine Gland) :
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির আরেক নাম অনালী গ্রন্থি। যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ কোন নালীর ভিতর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি রক্তস্রোতের সাথে মিশে যায়, সেসব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন যেসব কলা বা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়, সেসব গ্রন্থিকে বলা হয় অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র হচ্ছে রাসায়নিক বার্তাবহনের একটি অবস্থা, যা হরমোন তৈরীকারক গ্রন্থি দিয়ে গঠিত। মানবদেহে প্রধান অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হলো থাইরয়েড, অ‍্যাড্রেনাল গ্রন্থি। ভার্টিব্রাটায়, হাইপোথ্যালামাস অন্তঃক্ষরাতন্ত্রে সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্যঃ
১. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হচ্ছে সেইসব গ্রন্থি যারা নালীর মাধ্যমে আবরণী টিস্যুর উপরিভাগে পদার্থ উৎপন্ন এবং ক্ষরণ করে। অন্যদিকে, যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ কোন নালীর ভিতর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি রক্তস্রোতের সাথে মিশে যায়, সেসব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলা হয়।

২. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত বস্তু বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- দুধ, ঘাম, এনজাইম প্রভৃতি। অন্যদিকে, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত বস্তুর নাম হরমোন।

৩. বহিঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ হচ্ছে ঘর্মগ্রন্থি, অশ্রুগ্রন্থি, স্তনগ্রন্থি, লালাগ্রন্থি, যকৃত, পরিপাকগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয়, মূত্রগ্রন্থি প্রভৃতি। অন্যদিকে, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ হচ্ছে পিটুইটারি গ্রন্থি, প্যারাথাইরয়েড, থাইরয়েড, এড্রিনাল, যৌনগ্রন্থি, থাইমাস, প্যানোক্রিয়াস, পিনিয়াল গ্রন্থি প্রভৃতি।

৪. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হল যখন আমরা খাবার খাই, তখন লালাগ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয় যা খাদ্যকে ভেজা করে এবং পরিপাক প্রক্রিয়া শুরু করে।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হল থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরোক্সিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে।

৫. বহিঃক্ষরা গ্রন্থির কাজ অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। অন্যদিকে, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী।