Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

চোখ ওঠা ও অঞ্জনির মধ্যে পার্থক্য

চোখ ওঠা ও অঞ্জনি

চোখ ওঠাঃ
চোখ ওঠা রোগকে বলে কনজাংটিভাইটিস। চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহই চোখ ওঠা রোগ। এ রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে। সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়।

সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যেমন: রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

চোখে অঞ্জনিঃ
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যা স্টাই বা হরডিওলাম, তা-ই চলিত কথায় চোখের অঞ্জনি। চোখের পাপড়ি যেখান থেকে গজায়, সেই রেখা ঘেঁষে যে লাল লাল ছোট্ট দানা বা পুঁটুলির মতো তৈরি হয়, সেটা অঞ্জনি। চোখে অনেক রকমের গ্রন্থি আছে। এমনই একটি চোখের পানি তৈরি করে, এর নাম মেবোমিয়ান গ্রন্থি। এই গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ভেতরে ময়লা জমে সংক্রমণ থেকে অঞ্জনির সৃষ্টি হয়। কখনো অন্যান্য গ্রন্থিও আক্রান্ত হতে পারে। এই দানাটা লাল হয়ে ফুলে যায় ও ব্যথা করে। অঞ্জনির সঙ্গে চোখের পাপড়ির প্রদাহ থাকতে পারে।

অনেকের ধারণা, চোখে ময়লা জমে বা সংক্রমণ হলেই কেবল অঞ্জনি দেখা দেয়। তবে সব সময় যে সংক্রমণ থাকবে, তা নয়। চোখে অনেক ক্ষুদ্র তেল গ্রন্থি আছে। বিশেষ করে চোখের পাতার ওপর। মৃত কোষ, ময়লা বা তেল জমে ওই ছোট ছোট তেল গ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ করে দেয়। তখন ভেতরে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেওয়ায় অঞ্জনি হয়। এটা চোখের ভেতরে এবং বাইরে হতে পারে।

চোখ ওঠা ও অঞ্জনির মধ্যে পার্থক্যঃ

চোখ ওঠা ও অঞ্জনি এক নয়। এই দুটি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা আলাদা। চোখ ওঠা ও অঞ্জনির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১. চোখ ওঠা রোগকে বলে কনজাংটিভাইটিস। অন্যদিকে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যা স্টাই বা হরডিওলাম, তা-ই চলিত কথায় চোখের অঞ্জনি।

২. অঞ্জনির ক্ষেত্রে চোখের পাতার ভেতরে বা নিচে একটি শক্ত পিণ্ডের সৃষ্টি হয়। যা ফোঁড়ার মতো পাকে ও পরবর্তী সময়ে ফেটে যায়। অন্যদিকে, পিংক আইজ বা চোখ ওঠার সমস্যায় চুলকানি ও ব্যথা থাকলেও কোনো ধরনের পিণ্ড দেখা দেয় না।

৩. চোখ ওঠা রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে। সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। অন্যদিকে, চোখের পানি তৈরি করে, এর নাম মেবোমিয়ান গ্রন্থি। এই গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ভেতরে ময়লা জমে সংক্রমণ থেকে অঞ্জনির সৃষ্টি হয়।

৪. অঞ্জনি কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ হতে পারে। তবে চোখের পাতার টিস্যুর মধ্যে থাকা কোনো তেল গ্রন্থিতে সংক্রমণ ঘটলে সেখান থেকে অঞ্জনির সৃষ্টি হতে পারে।

অন্যদিকে, গোলাপি চোখের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বা অ্যালার্জেন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। এছাড়া বায়ু দূষণ, কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণেও চোখে সংক্রমণ হতে পারে।

৫. চোখ ওঠার সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া বেশ কিছু উপায় অনুসরণ করতে পারেন। যেমন- ঠান্ডা সেঁক নেওয়া, চোখ বারবার স্পর্শ না করা, চোখের ড্রপ ব্যবহার করা ইত্যাদি। গুরুতর ক্ষেত্রে চোখে ঝাপসা দেখা, তীব্র ব্যথা, চুলকানিসহ লাল লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সাধারণত চোখ ওঠার সমস্যা ৩-৫ দিনের মধ্যে না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অন্যদিকে, অঞ্জনির চিকিৎসায় আমেরিকান চক্ষুবিদ্যা অ্যাকাডেমির পরামর্শ হলো, আক্রান্ত চোখ পরিষ্কার করে হালকা গরম সেঁক নিন। দিনে ৫ বার ১৫ মিনিট পর্যন্ত এটি অনুসরণ করুন। তবে চোখ ঘষবেন না। কয়েকদিন পরও যদি অঞ্জনি না সারে তাহলে ডাক্তারের কাছে যান। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিতে পারেন।

৬. চোখ ওঠার লক্ষণ যথা- চোখে ঝাপসা দেখা, চোখের পাতায় প্রদাহ ও লালভাব, চোখের চারপাশে কাটা ফোঁটার অনুভূতি, চোখের সাদা অংশে লালভাব, চোখ দিয়ে সাদা স্রাব বের হওয়া, অনবরত পানি পড়া, চুলকানি ইত্যাদি।

অন্যদিকে, অঞ্জনির লক্ষণ যথা- চোখের ভেতরে বা চারপাশে ব্যথা, চোখের পাতায় লাল পিণ্ড হওয়া, ফোলা চোখের পাতা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, চোখ দিয়ে পুঁজ বা স্রাব বের হওয়া, রক্তবর্ণ চোখ, চোখে একটি তীক্ষ্ণ অনুভূতি।

৭. অঞ্জনি ও চোখ ওঠার এড়াতে করণীয় হল- নিয়মিত হাত ধোয়া, মেকআপ রিমুভার দিয়ে চোখের মেকআপ পরিষ্কার করা, বিছানার চাদর ও বালিশ ঘন ঘন ধোয়া, তোয়ালে, ওয়াশক্লথ, প্রসাধনীসহ চোখ স্পর্শ করে এমন জিনিস কারও সঙ্গে শেয়ার না করা ইত্যাদি।

Exit mobile version