ফ্যাট ( Fat):
ফ্যাট ( Fat) বলতে সেই সমস্ত যৌগের শ্রেণীকে বোঝায় যারা সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয় কিন্তু পানিতে অদ্রবণীয়। রাসায়নিক গঠন বিবেচনা করলে, স্নেহ পদার্থ হল গ্লিসারল ও ফ্যাটি অ্যাসিডসমূহের ট্রাই-এস্টার। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় স্নেহ পদার্থ আণবিক কাঠামো ও উপাদানের উপর নির্ভর করে কঠিন বা তরল আকারে থাকতে পারে। যেসমস্ত স্নেহ পদার্থ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে, তাদেরকে “তেল” বলা হয়। আর যেগুলি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় থাকে সেগুলিকে চর্বি (fat) বলা হয়।
আর লিপিড বলতে উভয়কেই বোঝায়। উল্লেখ্য, তেল বলতে আরও সাধারণভাবে পানির সাথে মিশে না এবং তৈলাক্ত অনুভূত হয়, এরকম যেকোন তরলকেই বোঝানো হতে পারে, যেমন – পেট্রোলিয়াম, হিটিং অয়েল, ইত্যাদি। আমরা অনেক সময়েই ভাবি ফ্যাট মানেই শরীরের জন্য খারাপ তা কিন্তু আসলে নয়। অনেক ধরনের ভাল ফ্যাটও আছে যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। দুই ধরনের ভাল ফ্যাট আছে একটি হলো মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা মুফা ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা পুফা। তাই চর্বিহীন খাবার খেতে গিয়ে তাদের বাদ দিয়ে দিলে হবে বিপদ।
চিকিৎসকদের মতে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটও পুরোপুরি বাদ দেয়ার দরকার নেই। খাবারের মোট ক্যালোরির ১০ শতাংশের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে এলে তাতে কোনো ক্ষতি হয় না। বরং শরীর ভাল রাখতে বন্ধ করতে হয় ট্রান্স ফ্যাট।
কোলেস্টেরল (Cholesterol):
কলেস্টেরলের উৎস গ্রিক শব্দদ্বয় কলে অর্থ ‘পিত্ত’ এবং স্টেরস অর্থ ‘ঘন পদার্থ’। শব্দের শেষের রাসায়নিক বিভক্তি -অল অর্থাত এলকোহল কারণ ফ্রাসোয়া পুলেতিয়ার দে লা সল 1769-এ প্রথমে কলেস্টেরলকে পিত্তাসয়ের পাথর হিসেবে চিহ্নিত করেন.যাই হোক 1815-এ রসায়নবিদ ইউজিন শেভ্রিউল এই যৌগিকের নাম দেন “কলেসটেরাইন” । কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বিজাতীয়, তৈলাক্ত স্টেরয়েড যা কোষের ঝিল্লি বা সেল মেমব্রেনে-এ পাওয়া যায় এবং যা সব প্রাণীর রক্তে পরিবাহিত হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সেল মেমব্রেনের এটি একটি অত্যাবশ্যক উপাদান । এই উপাদান মেমেব্রেনের মধ্য দিয়ে তরল পদার্থের ভেদ্যতা সচল রাখে এবং তার তারল্য বজায় রাখে।
এছাড়াও কলেস্টেরল একটি জরুরি প্রিকার্সার মলিকিউল যা বাইল আসিড, স্টেরয়েড হরমোন এবং স্নেহজাতীয় পদার্থে দ্রাব্য ভিটামিনের জৈব সংশ্লেষ ঘটায় । কলেস্টেরল সবচেয়ে জরুরি স্টেরল যা প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয় । কিন্তু অন্যান্য ইউকারইওট যেমন গাছপালা এবং ছত্রাকের দেহে এটি অল্প পরিমাণে সংশ্লেষিত হয় । প্রোক্যারিওট যেমন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এটি একবারেই দেখা যায় না।
ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য:
ফ্যাট বলতে সেই সমস্ত যৌগের শ্রেণীকে বোঝায় যারা সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয় কিন্তু পানিতে অদ্রবণীয়। ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। ফ্যাট ( Fat) বলতে সেই সমস্ত যৌগের শ্রেণীকে বোঝায় যারা সাধারণত জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয় কিন্তু পানিতে অদ্রবণীয়। অন্যদিকে, কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বিজাতীয়, তৈলাক্ত স্টেরয়েড যা কোষের ঝিল্লি বা সেল মেমব্রেনে-এ পাওয়া যায়।
২। কোলেস্টেরল এবং চর্বি উভয় লিপিড হয় এবং আপনার খাওয়া এবং আপনার রক্তস্রোনে প্রচলিত খাদ্য উভয় পাওয়া যায়। ফ্যাটের তুলনায় কোলেস্টেরলের আরও জটিল রাসায়নিক গঠন আছে।
৩। ফ্যাট হল গ্লিসারোল এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের ট্রাইমস্টার। অন্যদিকে, কোলেস্টেরল একটি মোমীয় স্টেরয়েড।
৪। স্যাচুরেটেড ফ্যাটও পুরোপুরি বাদ দেয়ার দরকার নেই। খাবারের মোট ক্যালোরির ১০ শতাংশের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে এলে তাতে কোনো ক্ষতি হয় না। অন্যদিকে, কোষের ঝিল্লি বা সেল মেমব্রেন তৈরি করা এবং তা প্রতিপালন করার জন্য কলেস্টেরল প্রয়োজন হয়।