মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য

মূর্তি (Fetish)ঃ

হিন্দুধর্মে মূর্তি (Fetish)বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”। মূর্তি দেবতার প্রতিনিধি। সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়। বাঙালী হিন্দুরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার পূজা করে থাকেন। মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন। ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।

ভাস্কর্য (Sculpture)ঃ

ভাস্কর্য (Sculpture) ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলে।অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ন্যায় ভাস্কর্যকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সহ ত্রিমাত্রিক হতে হবে। বাংলাদেশ এবং চীনের ন্যায় বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমূখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। রেনেসাঁ এবং আধুনিককালে এটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিসপত্র ভাস্কর্যের উদাহরণ। কিন্তু প্রায় চারশত বছর পূর্বে বিভিন্ন বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে সেখানে ভাস্কর্য শিল্পকলার তেমন উন্মেষ ঘটেনি।

মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্যঃ

কোনো প্রাণীর-মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে কঠিন কবীরা গুনাহ ও হারাম । মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তির বেচাকেনা ইত্যাদি সকল বিষয় কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।

মূর্তিপূজার কথা তো বলাই বাহুল্য, মূর্তি নির্মাণেরও কিছু কিছু পর্যায় এমন রয়েছে যা কুফরী। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। এটা চরম ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। কোরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোকেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মাজীদের স্পষ্ট নির্দেশ : তোমরা পরিহার করো অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ (সূরা হজ্জ : ৩০)।

ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে মৌলিক পার্থক্য এটুকু যে, ভাস্কর্যকে ভক্তি করা হয় ঘরের ভেতরে। আর মূর্তিকে ভক্তি করা হয় রাস্তায় রাস্তায়। নয়তো ভাস্কর্য ও মূর্তি উভয়টাই অবিকল মানুষের রূপ। দোনোটার মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। মূর্তির সামনে হিন্দু সম্প্রদায় প্রভূর দূত হিসেবে অর্চনা করে, মাথা ঝুকায়, খাবার দেয়, ফুল দেয়, চরণসেবা করে ও প্রার্থনা করে। আর ভাস্কর্যের সামনে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মহামানব হিসেবে মাথা ঝুকায়, চরণসেবা করে, পুষ্পবর্ষণ করে ইত্যাদি।

আপনি বলছেন, ভাস্খর্য নির্মিত হয় শুধু স্মরণীয় প্রতিক হিসেবে। আচ্ছা তারপর যদি কেউ স্মরণ করতে গিয়ে শিরকগুলো করে, তাহলে দায়ভার কে নিবে? আপনি তখন শিরক উৎপাটনের জন্য ভাস্কর্য ভাঙতে পারবেন? ভাস্কর্য হবে আর শিরক হবে না, তা হতেই পারে না। যুগের অন্যসব ভাস্কর্য এর প্রমাণ।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অমর ব্যক্তি। বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে জাতির পিতাকে তারা ভুলবে না, এটাই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি এতো দূর্বল নয় যে, তাকে স্মরণ করতে মূর্তি স্থাপন করতে হবে। মূর্তির কোনো প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধু মূর্তি ছাড়াই সবার হৃদয়ে জায়গা করে আছে ও থাকবে।

ভাস্কর্যের বিষয়টিকে সাধারণ ভাবে দেখার জো নেই। এটা‌ ইসলামের গোড়ার সাথে সম্পৃক্ত। দুই কারণে একজন মুসলিম কাফের হয়ে যায়, মুসলিম পরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক. কুফর; দুই. শিরক। কুফর মানে আল্লাহ, নবি, কোরআন, পরকাল ইত্যাদিকে অস্বীকার করা। শিরক মানে আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে বানানো। আল্লাহ ছাড়া কারো অর্চনা করা, কারো সামনে মাথা ঝুকানো। ভাস্কর্যের সামনে ভক্তি প্রদর্শন ও মাথা ঝুকানো স্পষ্ট শিরক। এটাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। আর ভাস্কর্য হলে এসব শিরক হবে না যে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই; কারণ ভাস্কর্য বানানো হয়ই স্মরণের নামে এসব শিরক করার জন্যই।