শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সব সব বয়সী নারী-পুরুষই কমবেশি ভোগেন। আর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর নানা সমস্যা খুঁজে পান চিকিৎসকরা। ঠিক তেমনই নারীদের বিভিন্ন মেডিকেল টেস্টের পর অনেক সময়ই দেখা যায় ফাইব্রয়েড কিংবা ফাইব্রোডেনোমা নামগুলো সামনে উঠে এসেছে।
ফাইব্রয়েড ও ফাইব্রোডেনোমার অনেক পিণ্ড বা টিউমারের মতোই। তবে তা ততটা বিপজ্জনক নয়। এগুলো শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে, বিশেষ করে স্তন ও প্রজনন অঙ্গগুলোতে বিকাশ লাভ করতে পারে। ফাইব্রয়েড ও ফাইব্রোডেনোমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
ফাইব্রয়েড ও ফাইব্রোডেনোমার মধ্যে পার্থক্যঃ
ফাইব্রয়েড হয় মূলত জরায়ুতে। এটি একটি ক্যানসারবিহীন কোষ, যা জরায়ু ফাইব্রয়েড বা লিওমায়োমাস নামেও পরিচিত। জরায়ুর পেশী প্রাচীরের মধ্যে বিকাশ লাভ করে এটি। ফাইব্রয়েড মসৃণ পেশী কোষ ও তন্তুযুক্ত সংযোগকারী টিস্যু নিয়ে গঠিত। ফাইব্রয়েড সবচেয়ে সাধারণ বিনাইন টিউমার, যা প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে হরমোনজনিত সমস্যা ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরনের ওঠানামার কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাইব্রয়েডের বয়স বাড়তে থাকলে তা অনেকটা বড় আকারেরও রূপ নিতে পারে। ফলে সামগ্রিকভাবে জরায়ুর আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়।
জরায়ু ফাইব্রয়েডের লক্ষণগুলোর মধ্যে ভারী মাসিক রক্তপাত (মেনোরেজিয়া), পেলভিক ব্যথা বা চাপ, ঘন ঘন প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ও সহবাসের সময় ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। জরায়ুতে ফাইব্রয়েড আছে কি না তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই পেলভিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই এর মতো ইমেজিং স্টাডিসহ মাঝে মধ্যে বায়োপসি করতে হতে পারে। এর চিকিৎসা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের আকার, অবস্থান ও তীব্রতার উপর। অনেক ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েডের আকার ছোট থাকলে চিকিৎসকরা তা সঙ্কুচিত করার জন্য ওষুধ দেন বা মায়োমেকটমি (ফাইব্রয়েড অপসারণ) বা হিস্টেরেক্টমি (জরায়ু অপসারণ) এর মতো অস্ত্রোপচার করারও পরামর্শ দেন।
অন্যদিকে, ফাইব্রোডেনোমাস হলো স্তনের ব্যথাহীন পিণ্ড। এটি বিনাইন টিউমার, যা স্তনের টিস্যুতে বিকাশ লাভ করে। কমবয়সী নারীদের মধ্যেও দেখা দেয়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এটি দেখা দেয়। ফাইব্রোডেনোমা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকারে বাড়তে পারে। যদি ফাইব্রোডেনোমা অস্বস্তির কারণ হয় বা পিণ্ড দ্রুত বাড়ে তাহলে তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের (এক্সিশনাল বায়োপসি) পরামর্শ দেন চিকিসকরা।
নিয়মিত স্তন পরীক্ষা, ম্যামোগ্রাফি বা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এটি সহজেই নির্ণ করা যায়। যদিও ফাইব্রোডেনোমা ব্যথাহীন হয়। তবে কিছু নারী কোমলতা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।