ফাইব্রয়েড এবং ফাইব্রোডেনোমাসের মধ্যে পার্থক্য

ফাইব্রয়েড এবং ফাইব্রোডেনোমা, দুটি শব্দ যা শুনলে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। উভয়ই মহিলাদের শারীরিক সমস্যা নির্দেশ করে, তবে এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসুন তাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি বিস্তারিতভাবে জেনে নিই:

ফাইব্রয়েড (Fibroid) :
ফাইব্রয়েড হয় মূলত জরায়ুতে। এটি একটি ক্যানসারবিহীন কোষ, যা জরায়ু ফাইব্রয়েড বা লিওমায়োমাস নামেও পরিচিত। জরায়ুর পেশী প্রাচীরের মধ্যে বিকাশ লাভ করে এটি। ফাইব্রয়েড মসৃণ পেশী কোষ ও তন্তুযুক্ত সংযোগকারী টিস্যু নিয়ে গঠিত। ফাইব্রয়েড সবচেয়ে সাধারণ বিনাইন টিউমার, যা প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে হরমোনজনিত সমস্যা ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরনের ওঠানামার কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাইব্রয়েডের বয়স বাড়তে থাকলে তা অনেকটা বড় আকারেরও রূপ নিতে পারে। ফলে সামগ্রিকভাবে জরায়ুর আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়।

জরায়ু ফাইব্রয়েডের লক্ষণগুলোর মধ্যে ভারী মাসিক রক্তপাত (মেনোরেজিয়া), পেলভিক ব্যথা বা চাপ, ঘন ঘন প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ও সহবাসের সময় ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। জরায়ুতে ফাইব্রয়েড আছে কি না তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই পেলভিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই এর মতো ইমেজিং স্টাডিসহ মাঝে মধ্যে বায়োপসি করতে হতে পারে। এর চিকিৎসা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের আকার, অবস্থান ও তীব্রতার উপর। অনেক ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েডের আকার ছোট থাকলে চিকিৎসকরা তা সঙ্কুচিত করার জন্য ওষুধ দেন বা মায়োমেকটমি (ফাইব্রয়েড অপসারণ) বা হিস্টেরেক্টমি (জরায়ু অপসারণ) এর মতো অস্ত্রোপচার করারও পরামর্শ দেন।

ফাইব্রোডেনোমাস (Fibroadenomas) :
ফাইব্রোডেনোমাস হলো স্তনের ব্যথাহীন পিণ্ড। এটি বিনাইন টিউমার, যা স্তনের টিস্যুতে বিকাশ লাভ করে। কমবয়সী নারীদের মধ্যেও দেখা দেয়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এটি দেখা দেয়। ফাইব্রোডেনোমা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকারে বাড়তে পারে। নিয়মিত স্তন পরীক্ষা, ম্যামোগ্রাফি বা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এটি সহজেই নির্ণয় করা যায়। যদিও ফাইব্রোডেনোমা ব্যথাহীন হয়। তবে কিছু নারী কোমলতা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।

যদি ফাইব্রোডেনোমা অস্বস্তির কারণ হয় বা পিণ্ড দ্রুত বাড়ে তাহলে তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের (এক্সিশনাল বায়োপসি) পরামর্শ দেন চিকিসকরা।

ফাইব্রয়েড এবং ফাইব্রোডেনোমাসের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ফাইব্রয়েড হয় মূলত জরায়ুতে। এটি একটি ক্যানসারবিহীন কোষ, যা জরায়ু ফাইব্রয়েড বা লিওমায়োমাস নামেও পরিচিত। অন্যদিকে, ফাইব্রোডেনোমাস হলো স্তনের ব্যথাহীন পিণ্ড। এটি বিনাইন টিউমার, যা স্তনের টিস্যুতে বিকাশ লাভ করে।

২. ফাইব্রয়েড এবং ফাইব্রোডেনোমা, দুটি ভিন্ন সমস্যা। ফাইব্রয়েড জরায়ুতে হয় এবং মাসিকের সমস্যা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে ফাইব্রোডেনোমা স্তনে হয় এবং স্তনে গলার মতো অনুভূতি দেয়। উভয়েরই চিকিৎসা সম্ভব।

৩. ফাইব্রয়েড গোলাকার বা অনিয়মিত আকৃতির, কখনো কখনো ছোট মটরদানা থেকে শুরু করে বাঙ্গির মতো বড় হতে পারে। অন্যদিকে, ফাইব্রোডেনোমাস গোলাকার বা অনিয়মিত আকৃতির, স্পর্শে শক্ত, কিন্তু সাধারণত ব্যথাহীন।

৪. ফাইব্রয়েড লক্ষণ হল মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা, কোমরের নিচে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। অন্যদিকে, ফাইব্রোডেনোমাসের লক্ষণ হল স্তনে গলার মতো অনুভূতি।

৫. ফাইব্রয়েড আক্রান্তেকর সঠি কারণ জানা যায় না, তবে হরমোন, জিনগত কারণ ইত্যাদি এর পিছনে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে, ফাইব্রোডেনোমাস আক্রান্তেকর সঠি কারণ জানা যায় না, তবে হরমোনের প্রভাব থাকতে পারে।

৬. জরায়ুতে ফাইব্রয়েড আছে কি না তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই পেলভিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই এর মতো ইমেজিং স্টাডিসহ মাঝে মধ্যে বায়োপসি করতে হতে পারে। এর চিকিৎসা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের আকার, অবস্থান ও তীব্রতার উপর।

অন্যদিকে, যদি ফাইব্রোডেনোমা অস্বস্তির কারণ হয় বা পিণ্ড দ্রুত বাড়ে তাহলে তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের (এক্সিশনাল বায়োপসি) পরামর্শ দেন চিকিসকরা।