রাজস্ব নীতি (Fiscal Policy):
রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থার অন্যতম বিষয় হলো রাজস্ব নীতি। প্রসারিত দৃষ্টিতে রাজস্ব নীতি বলতে সরকারের আয়-ব্যয়সংক্রান্ত নীতিকে বোঝানো হয়। সংকীণ দৃষ্টিতে সরকারের ব্যয় এবং কর এই দুয়ের সমন্বিত নীতি বলে। বাজেটের মধ্যে যেহেতু সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ থাকে, তাই অনেক সময় বাজেট সংক্রান্ত গৃহীত নীতিকে রাজস্ব নীতি বলা হয়। রাজস্ব নীতিকে কখনও প্রসারমান, কখনও সংকোচনমূলক, আবার কখনও নিরপেক্ষ নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
রাজস্ব নীতির হাতিয়ার বা উপকরণ (যেমন- সরকারি ব্যয় কর ও ভর্তুকি) যখন দেশের আয় ও নিয়োগ প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে প্রসারমান রাজস্ব নীতি বলে। আবার যখন রাজস্ব নীতি উপকরণ গুলোকে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতি বলে। রাজস্ব নীতি উপকরণ যদি এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যাতে উৎপাদন ও নিয়োগ স্তরের ন্যায় প্রকৃত চলক গুলো প্রভাবমুক্ত থাকে তবে তাকে নিরপেক্ষ রাজস্ব নীতি বলে।
আর্থিক নীতি (Monetary Policy)
যে নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে তাকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে। দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ বলতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বিত ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। আর্থিক নীতির উল্লিখিত দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ বলতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বিত ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। আর্থিক নীতির উল্লিখিত সংজ্ঞাটিকে কখনও সংকীর্ণ সংজ্ঞা বলা হয়।
অধ্যাপক পল এইনজিগ (Paul Einzig)। তাঁর মতে, আর্থিক ও অনার্থিক লক্ষ্যে পরিচালিত সব রকমের আর্থিক ও অনার্থিক সিদ্ধান্ত এবং গৃহীত পদক্ষেপ, যাদের দ্বারা দেশের অর্থব্যবস্থা প্রভাবিত হয়, তাদের সমন্বিত রূপায়ণকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে। প্রসারিত সংজ্ঞাটির মধ্যে অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ নীতি ছাড়াও মজুরি নীতি ও বাণিজ্য নীতির মতো অনেক নীতি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর্থিক নীতির পৃথক অস্তিত্বও তখন বিপন্ন হতে পারে। কাজেই আর্থিক নীতির সংকীর্ণ সংজ্ঞাটিকেই অধিক গ্রহণযোগ্য বলে ধরা যায়।
রাজস্ব ও আর্থিক নীতির মধ্যে পার্থক্যঃ
যে নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে তাকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে। রাজস্ব ও আর্থিক নীতির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থার অন্যতম বিষয় হলো রাজস্ব নীতি। প্রসারিত দৃষ্টিতে রাজস্ব নীতি বলতে সরকারের আয়-ব্যয়সংক্রান্ত নীতিকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে, যে নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে তাকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে।
২। সরকার যে অর্থায়নে প্রভাব ফেলতে তার করের আয় ও ব্যয় নীতিগুলি ব্যবহার করে সরকার তা ব্যবহার করে আর্থিক রাজস্ব নীতি হিসাবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সরঞ্জামটি ব্যবহার করে তা মুদ্রা নীতি হিসাবে পরিচিত।
৩। রাজস্ব নীতি সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয় দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, আর্থিক নীতি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়।
৪। রাজস্ব নীতি প্রধান উপকরণ হল করের হার এর্ব সরকারি ব্যয়। অন্যদিকে, আর্থিক নীতির উপকরণ হল সুদের হার এবং ক্যাশ রিজার্ভ অনুপাত।
৫। রাজস্ব নীতি প্রতি বছর পরিবর্তন হয়। অন্যদিকে, মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন নির্ভর করে জাতির অর্থনৈতিক অবস্থানের উপর।
৬। রাজস্ব নীতিকে কখনও প্রসারমান, কখনও সংকোচনমূলক, আবার কখনও নিরপেক্ষ নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে, অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ নীতি ছাড়াও মজুরি নীতি ও বাণিজ্য নীতির মতো অনেক নীতি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।